-->

আপিল বিভাগে চার বিচারপতি নিয়োগ, ৩ জনের শপথ

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপিল বিভাগে চার বিচারপতি নিয়োগ, ৩ জনের শপথ
আপিল বিভাগে তিন বিচারপতির শপথ

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আরো চারজন বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সংবিধানের ৯৫(১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রোববার (৯ জানুয়ারি) হাইকোর্ট বিভাগের চারজন বিচারপতিকে আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। এ নিয়ে আপিল বিভাগের বিচারপতির সংখ্যা দাঁড়াল ৮ জনে। তবে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী দীর্ঘ ছুটিতে থাকায় কার্যত ৭ জন বিচারপতিকে বিচারিক কাজে নিয়োজিত থাকতে হবে। 

আপিল বিভাগে নতুন নিয়োগ পাওয়া চার বিচারপতি হলেন- বিচারপতি বোরহান উদ্দিন, বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ। এদের মধ্যে বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান করোনায় আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালের সিসিইউতে (করোনারি কেয়ার ইউনিট) চিকিৎসাধীন। ফলে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় বিচারপতি বোরহান উদ্দিন, বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথকে শপথ পড়ান প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। এই শপথের মধ্য দিয়ে এই তিনজনের নিয়োগ কার্যকর হলো।  

ওই চারজনের নিয়োগের বিষয়ে গতকাল আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে কর্মরত বিচারপতি বোরহান উদ্দিন, বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারক নিয়োগ করেছেন। এই নিয়োগ শপথ গ্রহণের তারিখ থেকে কার্যকর হবে।’

গতকাল সকালে প্রজ্ঞাপন জারির পর সকালেই সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে নতুন নিয়োগ পাওয়াদের মধ্যে একে একে তিনজনকে শপথ পড়ান প্রধান বিচারপতি। এরপর বেলা সাড়ে ১১টায় নতুন তিন বিচারপতিকে আইনজীবীদের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের পক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষে সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বক্তব্য দেন।

এসময় বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসানের বিষয়ে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, ‘বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান করোনায় আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন। আমি তার সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি সুস্থ হয়ে পরে শপথ নেবেন বলে জানিয়েছেন।’  

এদিকে গতকাল বিকেলে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন নবনিযুক্ত তিন বিচারপতি।

সংবিধানের ৯৬(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ৬৭ বছর বয়স পর্যন্ত বিচারপতি পদে থাকা যায়। সেই হিসেবে আপিল বিভাগের বর্তমান বিচারপতিদের মধ্যে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ২০২৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর, বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর, বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ২০২৩ সালের ৩০ জুন এবং বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ২০২৬ সালের ১০ জানুয়ারি অবসরে যাবেন। আর নতুন নিয়োগ পাওয়া চার বিচারপতির মধ্যে বিচারপতি বোরহান উদ্দিন ২০২৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি, বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ২০২৭ সালের ১০ আগস্ট ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ চলতি বছরের ৯ অক্টোবর অবসরে যাবেন। আর বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান অবসরে যাবেন চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি।

বিচারপতি বোরহান উদ্দিন ১৯৫৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৮৫ সালের ৩ মার্চ জেলা আদালতে আইন পেশা শুরু করেন। এরপর ১৯৮৮ সালের ১৬ জুন হাইকোর্ট বিভাগেও ২০০২ সালের ২৭ নভেম্বর আপিল বিভাগে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ২০০৮ সালের ১৬ নভেম্বর তিনি হাইকোর্ট বিভাগে দুইবছরের জন্য অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। পরবর্তীতে ২০১২ সালের ১১ নভেম্বর তাকে হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ অবস্থায় গতকাল তিনি আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পেলেন।

বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ১৯৬০ সালের ১১ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে পাসের পর এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৮৬ সালের ৩০ অক্টোবর জেলা আদালতে আইনজীবী হিসেবে পেশা জীবন শুরু করেন। এরপর ১৯৮৯ সালের ২ জানুয়ারি হাইকোর্ট বিভাগে ও ২০০২ সালের ১৫ মে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ২০০৯ সালের ৩০ জুন দুই বছরের জন্য হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। ২০১২ সালের ৬ জুন তিনি হাইকোর্ট বিভাগে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। এ অবস্থায় গতকাল তিনি আপিল বিভাগে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পেলেন। 

বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ ১৯৫৫ সালের ১০ অক্টোবর জন্ম নেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষাজীবন সম্পন্ন করার পর ১৯৮১ সালের ৮ ডিসেম্বর মুনসেফ হিসেবে বিচার বিভাগের চাকরিতে যোগদান করেন। তিনি ১৯৯৮ সালের পহেলা নভেম্বর জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে পদোন্নতি পান। এরপর ২০১০ সালের ১৮ এপ্রিল দুই বছরের জন্য হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। ২০১২ সালের ১৫ এপ্রিল তিনি হাইকোর্ট বিভাগে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। এ অবস্থায় গতকাল তিনি আপিল বিভাগে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পেলেন। বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে আপিল বিভাগে নিয়োগ পাওয়া তৃতীয় নারী বিচারক। এর আগে আপিল বিভাগে নিয়োগ পান বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা ও বিচারপতি জিনাত আরা। এরা দু’জনই এখন অবসরে। 

বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ১৯৫৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি জন্ম নেন। তিনি বিএ(অনার্স) ও এমএ ডিগ্রি অর্জনের পর এলএলবি করেন। এরপর ১৯৮৬ সালের ১৮ মার্চ জেলা আদালতে আইনজীবী হিসেবে পেশা জীবন শুরু করেন। এরপর ১৯৯৪ সালের ২২ জানুয়ারি হাইকোর্ট বিভাগে ও ২০০৯ সালের ১৩ ডিসেম্বর আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ২০১০ সালের ১৮ এপ্রিল দুই বছরের জন্য হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। ২০১২ সালের ১৫ এপ্রিল তিনি হাইকোর্ট বিভাগে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। সেই থেকে তিনি এখন পর্যন্ত হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ অবস্থায় তাকে আপিল বিভাগে নিয়োগ দেওয়া হলো। তবে শপথের পর থেকে এই নিয়োগ কার্যকরের শর্ত থাকায় এখনও তাকে আপিল বিভাগের বিচারপতি বলা যাচ্ছে না। সেকারণে তার নাম এখনও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতির তালিকায় রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট।

 

মন্তব্য

Beta version