মাসে ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির হয়ে কারাভোগের ঘটনায় যুক্ত একজনসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে জাল কাগজ তৈরি, ছদ্মবেশ ধারণ করে প্রতারণার অভিযোগে নিয়মিত মামলা করার অনুমতি দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার ৪ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের পেশকার মিজানুর রহমান ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে মামলাটির আবেদন করেন। একইসঙ্গে তিনি ঘটনায় জড়িত পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরো কয়েকজনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানান।
সংশ্লিষ্ট আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই মাহমুদুর রহমান ভোরের আকাশকে এসব তথ্য জানান।
তিনি আরো জানান, আবেদনটির শুনানি নিয়ে বিচারক মোহাম্মদ নূরুল হুদা চৌধুরী কোতয়ালি থানার পরিদর্শককে (তদন্ত) এজাহার হিসেবে নেওয়ার নির্দেশ দেন।
এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে নকল সোহাগকে (যার আসল নাম মো. হোসেন) কারাগার থেকে ঢাকার ৪ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে হাজির করা হয়।
আদালত যাদের বিরুদ্ধে কোতয়ালী থানা কর্তৃপক্ষকে মামলা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তারা হলেন আসল সোহাগ ওরফে বড় সোহাগ, নকল সোহাগ, (বড় সোহাগ নামে ভুয়া পরিচয়দানকারী), মামলার আইনজীবী (যিনি বড় সোহাগের বিরুদ্ধে করা মামলায় জামিন আবেদন করেন), ওকালতনামায় স্বাক্ষরকারী আইনজীবী শরীফ শাহরিয়ার সিরাজী ও অপর আইনজীবী মো. ইব্রাহীম হোসেন।
মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকেও আসামি করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তাদের বিরুদ্ধে জাল কাগজ তৈরি করা, ভুয়া পরিচয়ে এক ব্যক্তিকে অন্য ব্যক্তি সাজানোর অভিযোগে এজাহার করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
মামলায় আত্মসমর্পণের দুই-তিন মাসের মধ্যে নকল সোহাগকে কারাগার থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আসল সোহাগ। গত শনিবার (২৯ জানুয়ারি) আসল সোহাগকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
পরদিন বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে র্যাব-১০ এর অধিনায়ক ও অতিরিক্ত ডিআইজি মাহফুজুর রহমান এ তথ্য জানান।
র্যাব কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান জানান, শনিবার গোপন সংবাদে র্যাব-১০ এর অপারেশন টিম ও সদরদপ্তরের গোয়েন্দা শাখার সহযোগিতায় মিটফোর্ড হাসপাতাল এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত প্রকৃত আসামি সোহাগ ওরফে বড় সোহাগকে গ্রেপ্তার করা হয়।
২০১০ সালের ২৬ নভেম্বর রাজধানীর কদমতলি থানাধীন নোয়াখালী পট্টিতে হুমায়ুন কবির টিটুকে গুলি করা হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় বড় সোহাগ, মামুন, ছোট সোহাগসহ আরো ৩-৪ জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করা হয়।
ওই মামলার ১ নম্বর আসামি বড় সোহাগকে শনিবার গ্রেপ্তার করা হয় হয়। ২০১৪ সালের ১৬ মে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর থেকে পলাতক ছিলেন তিনি। ২০১৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর বড় সোহাগের অনুপস্থিতিতে তাকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত।
র্যাব-১০ এর অধিনায়ক আরো জানান, রায়ের পর বড় সোহাগের পরিকল্পনা মোতাবেক তার ফুফাতো ভাই মো. হোসেন বড় সোহাগ পরিচয়ে ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি আদালতে আত্মসমর্পণ জামিন চাইলে আদালত সে আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠান।
বড় সোহাগের পরিকল্পনা অনুযায়ী, মাসিক ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে কারাগারে যায় নকল সোহাগ (মো. হোসেন)। তাকে ২-৩ মাসের মধ্যে কারাগার থেকে বের করে আনার আশ্বাস দেন আসল সোহাগ।
গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে এক সাংবাদিক টিটু হত্যা মামলায় একজনের পরিবর্তে অন্যজনের জেলা খাটার বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন। আদালত এরপর কারা কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন চান।
প্রতিবেদনে ২০১০ সালে গ্রেপ্তার করা আসামি সোহাগ এবং বর্তমানে হাজতে থাকা সোহাগের অমিলের বিষয়টি উঠে আসে। সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের প্রতিবেদনেও বিষয়টি উঠে আসে।
২০২১ সালের আগস্ট মাস থেকে র্যাব-১০ এর অপারেশন টিম ও সদর দপ্তরের গোয়েন্দা টিম আসল সোহাগকে ধরার চেষ্টা করছিল। এরইমধ্যে বিশেষ দায়রা আদালত ও দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ প্রকৃত আসামির (সোহাগ) বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এ তথ্য জানতে পেরে আসল সোহাগ দেশত্যাগের চেষ্টা শুরু করেন।
এর অংশ হিসেবে জাতীয় পরিচয়পত্র পরিবর্তনের পর পাসপোর্ট তৈরি করে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভিসা সংগ্রহ করেন আসল সোহাগ। দেশত্যাগের ক্ষেত্রে করোনার টিকা বাধ্যতামূলক হওয়ায় শনিবার টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার জন্য মিটফোর্ড হাসপাতাল যান তিনি। এ সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বড় সোহাগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় দুটি হত্যা মামলাসহ ১০টি মামলা আছে বলেও জানান র্যাব কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান।
মন্তব্য