আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা থাকার পরেও ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের (টিডব্লিউএ) নির্বাচন সম্পন্ন করায় আদালত অবমাননার মামলা হয়েছে। এতে বিবাদী করা হয়েছে ময়মনসিংহ-১ (হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া) সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্য জুয়েল আরেংসহ ছয়জনকে।
২০২২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মামলাটি গ্রহণ করে বিবাদীদের কারণ দর্শানোর নোটিশ করেছেন আদালত। বিষয়টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সহকারী জজ আদালতে দায়েরকৃত টিডব্লিউএ নেতা অখিল চন্দ্র বর্মণের অভিযোগনামায় বলা হয়েছে, ময়মনসিংহসহ সমতল অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এলাকায় অভিভাবক সংগঠন ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন (টিডব্লিউএ) কেন্দ্রীয় কমিটি ও শাখা কমিটি দীর্ঘদিন ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ অবস্থায় চলছিল। আর বিধিবহির্ভূতভাবে ভদ্র ম্রং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানসহ একাধিক পদ দখলে রেখেছেন। সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দুই বছর পর পর নির্বাচনের নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। সেই সঙ্গে গঠনতন্ত্রে কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাচনের আগে শাখা কমিটির নির্বাচনের কথা উল্লেখ থাকলেও ভদ্র ম্রং ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার জন্য বিধিবহির্ভূতভাবে কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাচন করার জন্য তফসিল ঘোষণা করেন বলে অভিযোগনামায় উল্লেখ করা হয়েছে।
পরবর্তী সময়ে সংগঠনের গঠনতন্ত্রের বাইরে অনৈতিকভাবে দায়িত্ব পালন এবং সংগঠনটির সংবিধান লঙ্ঘন করে কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাচনি তফসিল ঘোষণা করায় ভদ্র ম্রংয়ের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পদেও বৈধতা চ্যালেঞ্জ ও কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাচনি কার্যক্রম বন্ধে হালুয়াঘাট সহকারী জজ আদালতে টিডব্লিউএ, ফুলবাড়িয়া উপজেলা শাখার জয়েন্ট সেক্রেটারি অখিল চন্দ্র বর্মণ মামলা করেন (মো. ১৮২/২১)।
বাদী অখিল চন্দ্র বর্মণের ১৮২/২১ মামলায় হালুয়াঘাট সহকারী জজ আদালত ২০২১ সালের ১৮ নভেম্বর শুনানি শেষে নির্বাচনি কার্যক্রম বন্ধে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ প্রদান করেন। আর নিম্ন আদালতে সেই অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে বিবাদী ভদ্র ম্রং গং জজ কোর্টে আপিল করেন। উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে আপিল শুনানি হলেও সেদিন আপিলের রায় দিতে পারেননি বিচারক।
বিবাদী ভদ্র ম্রং গং নিজেরা নিম্ন আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেও সেই আপিলের রায়ের অপেক্ষা না করেই ২০২১ সালের ১১ ডিসেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেন এবং ১৮ ডিসেম্বর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান করেন। তবে ২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি জেলা জজ আদালত নিম্ন আদালতের আদেশ বহাল রেখে ভদ্র ম্র গংদের আপিল আবেদন খারিজ করে দেয়।
আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকা সত্ত্বেও আইন অমান্য করে নির্বাচন অনুষ্ঠান, শপথ গ্রহণ করে ভদ্র ম্রং, জুয়েল আরেং ও যোহন স্কুসহ অন্যরা সর্বসাধারণকে বিভ্রান্ত করেন। তাই ভদ্র ম্রং, জুয়েল আরেং, যোহন স্কুদের করা ‘আদালত অবমাননা’এর বিষয়টি আদালতের নজরে তুলে ধরেন অখিল চন্দ্র বর্মণ। আদালত অবমাননার অভিযোগ আমলে নিয়ে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সহকারী জজ আদালত জুয়েল আরেংসহ ছয়জনকে কারণ দর্শানোর জন্য নোটিশ জারি করেন।
আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরেও নির্বাচন সম্পন্ন করায় আদালত অবমাননার অভিযোগে ২০২২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ফের একটি মামলা করেছেন অখিল চন্দ্র বর্মণ। এতে বিবাদী করা হয়েছে ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ভদ্র ম্রং, প্রধান নির্বাচন কমিশনার আলবার্ট মানখিন, সদস্য সচিব ধীরেশ চিরান, ফাদার যোসেফ চিসিম, এমপি জুয়েল আরেং ও যোহন সাংমাকে।
আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে কারণ দর্শনোার নোটিশ করেছেন বলে জানিয়েছেন মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা।
মামলার বাদী অখিল চন্দ্র বর্মণ জানান, আদালতের নিষেধাজ্ঞা চলা অবস্থায় নির্বাচন সম্পন্ন করে আদালত অবমাননা করা হয়েছে। ন্যায়বিচারের জন্য আদালত অবমাননার মামলা করেছি।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য মুঠোফোনে বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার কল করা হলেও রিসিভ করেননি সংসদ সদস্য জুয়েল আরেং।
মন্তব্য