চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে কে বসবেন, নিপুণ আক্তার নাকি জায়েদ খান? তা নির্ধারিত হবে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে। এরই মধ্যে নিপুণ আক্তার ও জায়েদ খান- দুজনই আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন। হাইকোর্ট জায়েদ খানের পক্ষে আদেশ দিলেও আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালত সে আদেশ স্থগিত করেছেন আজ রোববার ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
এরই ধারাবাহিকতায় নিপুণ আক্তারের করা আবেদনের ওপর আজ প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগে শুনানির জন্য দিন ধার্য রয়েছে। আপিল বিভাগের আজকের কার্যতালিকার ৭ নম্বরে রয়েছে নিপুণের আবেদন। বিষয়টি বেলা সাড়ে ১১টায় শুনবেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ। আজ রোববার সকালে এ সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে।
এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে বেশ কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে আজ দেশের সর্বোচ্চ আদালতে শুনানিতে কি হয় তা জানতে সেদিকে নজর থাকবে উৎসুক দেশবাসীর।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিষয়টি নিয়ে আইনি সুরাহা হতে কতদিন লাগবে, কিংবা সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে কে বসবেন তার পুরোটাই নির্ভর করছে আপিল বিভাগের সিদ্ধান্তের ওপর। এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করায় তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি এ রুলের ওপর হাইকোর্টে শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।
আপিল বিভাগ যদি অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দিয়ে হাইকোর্টকে রুল নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন তবে ঝুলে যেতে পারে বিষয়টি। সেক্ষেত্রে হাইকোর্টে রুলের শুনানি শেষে হাইকোর্ট রায় দেবেন। এরপর তার বিরুদ্ধে যেকোনো পক্ষই আপিল বিভাগের যাওয়ার সুযোগ পাবেন। এটা হলে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে।
আর যদি আপিল বিভাগ একবারে সব নিষ্পত্তি করে দেন তাহলে শিগগিরই জানা যাবে কে শেষ হাসিটা হাসবেন। জায়েদ খান নাকি নিপুণ আক্তার।
এদিকে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদেশ পাস কাটিয়ে নিপুণ আক্তার সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আর বিষয়টি আজ আপিল বিভাগের নজরে আনবেন জায়েদ খানের আইনজীবী।
নিপুণ আক্তারের এই চেয়ারে বসাকে আদালত অবমাননার শামিল বলে মনে করছেন জায়েদ খানের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম। তিনি ভোরের আকাশকে বলেন, আদালতের আদেশ অমান্য করে নিপুণ আক্তার সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসে আদালত অবমাননা করেছেন। বিষয়টি শুনানিকালে আদালতের নজরে আনা হবে।
তবে নিপুণ আক্তারের আইনজীবী ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ ভোরের আকাশকে বলেন, আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেছেন এবং স্ট্যাটাস্কো দিয়েছেন। এই আদেশের কারণে নিপুণ আক্তারের সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসতে আইনগত কোনো বাঁধা আমি দেখছি না। এ কারণেই নিপুণ আক্তার চেয়ারে বসেছেন।
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০২২-২৪ মেয়াদের নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হয়েছে দুই সপ্তাহ আগে গত ২৮ জানুয়ারি। ভোটের ফল ঘোষণা হয় ২৯ জানুয়ারি। ভোট গণনা শেষে ইলিয়াস কাঞ্চনকে সভাপতি ও জায়েদ খানকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়।
এরপর থেকে জায়েদ খানকে বিজয়ী ঘোষণা করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন নিপুণ। তিনি ফল ঘোষণায় কারচুপির অভিযোগ আনেন। এরপর ওই ফল বাতিল চেয়ে আপিল বোর্ডের কাছে আবেদন করেন।
এই অভিযোগের ভিত্তিতে গত ২ ফেব্রুয়ারি সমাজসেবা অধিদপ্তর আপিল বোর্ড গঠন করে। এই আপিল বোর্ড গত ৫ ফেব্রুয়ারি জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিল করে নিপুণকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বিজয়ী ঘোষণা করে। এরপর ইলিয়াস কাঞ্চন ও নিপুণ শপথ নিয়ে সমিতির চেয়ারে বসেন।
এ অবস্থায় হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন জায়েদ খান। এই রিট আবেদনে গত ৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট নিপুণকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণার সিদ্ধান্ত স্থগিত করে দেন। একইসঙ্গে রুল জারি করেন।
হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন নিপুণ। গত ৯ ফেব্রুয়ারি চেম্বার বিচারপতির আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে দেন।
সেদিন আদালত বলেন, ‘আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি ফুলকোর্টে শুনব। এ কয়েক দিন হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত (স্টে) থাকবে। একইসঙ্গে সাধারণ সম্পাদক পদে স্থিতিবস্থা থাকবে।’ সেদিন আদালত আরো বলেছিলেন, ‘আজকে (বুধবার) হলো ৯ তারিখ। এই কয়দিন (১৩ ফেব্রুয়ারি রোববার পর্যন্ত চার দিন) কিচ্ছু হবে না। কেউ ঢুকবে না, বলে দিচ্ছি।’
আদালতের এই আদেশের পর শুক্রবার সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসেন নিপুণ। এর পরই তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ উঠেছে। তবে বিষয়টি আপিল বিভাগের নজরে আনা হলে আদালত কি আদেশ দেন তা দেখতে অপেক্ষায় থাকতে হবে।
মন্তব্য