-->

নারীর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন: দেড়শ বছরের পুরোনো আইন বাতিল হচ্ছে

এম বদি-উজ-জামান
নারীর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন: দেড়শ বছরের পুরোনো আইন বাতিল হচ্ছে
হাইকোর্ট। ফাইল ছবি

ধর্ষণের শিকার নারীকে ‘দুশ্চরিত্রা’ বলার বা তার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগসংক্রান্ত দেড়শ বছরের পুরোনো আইন বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরই মধ্যে এর খসড়া প্রস্তুত করেছে আইন মন্ত্রণালয়। এই খসড়া এখন মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে উপস্থাপনের জন্য তা চূড়ান্ত করা হবে বলে জানা গেছে।

এ অবস্থায় বিষয়টি নিয়ে শুনানির জন্য আজ রোববার হাইকোর্টে উঠছে। বিচারপতি ফারাহ মাহবুবের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানির জন্য রয়েছে।

এরই মধ্যে এই আইন বাতিল প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, আইনের ওই ধারায় ধর্ষণের শিকার নারীর ‘চরিত্র’ নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ রয়েছে আসামিপক্ষের। এই ধারাটি বাতিলের দাবি দীর্ঘদিনের। বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে ডিজিটাইজেশনের এই যুগে সাক্ষ্য আইন সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সে কারণেই এই ধারাটি বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য সুপ্রিম কোর্টে দায়িত্বরত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল (ডিএজি) সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস ভোরের আকাশকে বলেন, ‘একটি খসড়া পেয়েছি। আইন মন্ত্রণালয় দিয়েছে। খসড়ায় ১৫৫ (৪) ধারা বিলুপ্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই খসড়া আদালতে দেওয়া হয়েছে।’

এই আইন পাস করতে কত দিন লাগতে পারে এমন কোনো কথা আইন মন্ত্রণালয় বলেছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, না। তবে একটি আইন পাস করতে যেসব প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয় তা অনুসরণ করেই আইনটি পাস করা হবে।

এ বিষয়ে ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, ‘যৌন হয়রানির শিকার কোনো নারী যদি অভিযোগকারী হন তাহলে আদালতে তার চরিত্র নিয়ে তাকে প্রশ্ন ও জেরা করা হয়। সাক্ষ্য আইনে সে সুযোগ আছে। অনেক দিন ধরে এগুলো বাতিলে আন্দোলন হয়েছে। এখন হাইকোর্টের শরণাপন্ন হয়েছি।’

বাংলাদেশের আদালতে বিচার কাজ পরিচালিত হচ্ছে ১৮৭২ সালে করা সাক্ষ্য আইন অনুযায়ী। এই আইন সময়ে সময়ে সংশোধন হয়েছে বাংলাদেশের প্রয়োজনের প্রেক্ষাপটে। কিন্তু ধর্ষণ মামলায় মামলার বাদী তথা ভিকটিমকে জেরা করা সংক্রান্ত সাক্ষ্য আইনের ১৫৫(৪) ধারাটি সেই অবিকল রয়ে গেছে।

ফলে ধর্ষণের বিচার চাইতে এসে ‘দ্বিতীয়বার ধর্ষণের শিকার’ হচ্ছেন বলে মানবাধিকার সংগঠন ও নারীনেত্রীদের অভিযোগ। এ কারণে এই ধারাটি বাতিলের দাবি দীর্ঘদিনের।

১৫৫(৪) ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো লোক যখন বলাৎকার কিংবা শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগে ফৌজদারিতে সোপর্দ হন, তখন দেখানো যেতে পারে যে অভিযোগকারী সাধারণভাবে দুশ্চরিত্রসম্পন্ন রমণী।’

সাক্ষ্য আইন থেকে এই ধারাটি তুলে দিতে অর্থাৎ ধারাটি বাতিলের জন্য আইন কমিশনও কয়েক বছর আগেই সুপারিশ পাঠায় সরকার তথা আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে।

এ বিষয়ে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের বক্তব হলো, ‘আসামিপক্ষের প্রায় প্রত্যেক আইনজীবীই ধর্ষিতাকে দুশ্চরিত্রা প্রমাণ করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেন। তখন ধর্ষিতাকে আদালতে তার ধর্ষণের বর্ণনা দিতে হয়। এইখানেই ধর্ষিতা আরেকবার ‘ধর্ষণের শিকার’ হন।

বিচারক, আইনজীবী, শত শত মানুষের সামনে এমন ঘটনা ঘটায় কোনো কোনো ভিকটিম আদালতে আসেন না। এ কারণে বর্তমান সাক্ষ্য আইনের ১৫৫ নম্বর ধারার ৪ নম্বর উপধারা বাদ দিতে হবে। এটা করা গেলে ধর্ষিতাকে ‘দ্বিতীয়বার ধর্ষণের’ হাত থেকে রক্ষা করা যাবে।’

এ অবস্থায় সরকার ওই ধারাটি বাতিলের জন্য উদ্যোগ নেয়। এজন্য স্টেকহোল্ডারদের মতামত নিয়েছে মন্ত্রণালয়। এরপর ধারাটি বাতিল করে সাক্ষ্য আইন যুগোপযোগী করতে একটি খসড়া প্রস্তুত করেছে।

নিয়ম অনুযায়ী এখন এই খসড়া অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ সভায় উপস্থাপন করা হবে। মন্ত্রিপরিষদ তা অনুমোদন করলে আইন মন্ত্রণালয় খসড়া চূড়ান্ত করে জাতীয় সংসদে পাঠাবে। জাতীয় সংসদ তা পরীক্ষা- নিরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটিতে দেবে। এরপর সেখান থেকে অনুমোদন হয়ে আসার পর বিল আকারে সংসদে তুলবে আইন মন্ত্রণালয়।

মন্তব্য

Beta version