-->

গোপালগঞ্জের গৃহবধূ জাকিয়া হত্যা: স্বামীসহ ৪ জনের মৃত্যুদণ্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক
গোপালগঞ্জের গৃহবধূ জাকিয়া হত্যা: স্বামীসহ ৪ জনের মৃত্যুদণ্ড
রায় উপলক্ষে তিন আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। ছবি- ভোরের আকাশ

জাকিয়া বেগম নামে গোপালগঞ্জের বেদগ্রামের এক গৃহবধূকে হত্যার মামলায় স্বামীসহ চারজনকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবু আব্দুল্লাহ ভূঁইঞা ভোরের আকাশকে জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জাকির হোসেনের আদালত আলোচিত এ মামলার রায় দিয়েছেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- জাকিয়ার স্বামী মোর্শেদায়ান নিশান, নিশানের ভাই এহসান সুশান, ভগ্নিপতি হাসান শেখ ও ম্যানেজার আনিছুর রহমান। মোর্শেদায়ান নিশান পলাতক রয়েছেন। আদালত নিশানকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা এবং অপর তিন আসামিকে ৩ লাখ টাকা করে জরিমানাও করেছেন।

মামরায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ভোরের আকাশকে আরো বলেন, ‘আদালত আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা দিয়েছেন। এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট।’

রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে নিহত জাকিয়ার ছোট ভাই অছিম উদ্দিন মল্লিক ভোরের আকাশকে বলেন, ‘আমার বোনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আসামিরা সর্বোচ্চ সাজা পেয়েছে। আমি এ রায়ে সন্তুষ্ট। রাষ্ট্রের কাছে আমার দাবি, এ রায় যেন অতি দ্রুত কার্যকর হয়।’

আসামি পক্ষের আইনজীবী আব্দুর রহিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা এ রায়ে সংক্ষুব্ধ। নিম্ন আদালতে আমরা ন্যায় বিচার পাইনি। আসামিদের সঙ্গে কথা বলে ও পূর্ণাঙ্গ রায় পেয়ে আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব। আশা করি, আমরা সেখানে ন্যায় বিচার পাব।’

মোর্শেদায়ান নিশান মাছরাঙা টেলিভিশনের গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি ও স্থানীয় দৈনিক আমাদের গোপালগঞ্জ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। হত্যাকাণ্ডের পর তিনি গ্রেপ্তার হলেও জামিন নিয়ে পালিয়ে যান। অপর তিন আসামি জামিনে ছিলেন। গত ১৩ জানুয়ারি আদালত তিন আসামির জামিন বাতিল করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

মামলার রায় উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে ঢাকার কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জেলা জজের হাজতখানায় আনা হয় তিন আসামিকে। দুপুর ১২ টার দিকে তাদের আদালতে হাজির করা হয়।

এ তিন আসামির উপস্থিতিতে বিচারক রায় পড়ে শোনান। তাদের সাজা পরোয়ানা দিয়ে জেল হাজতে পাঠানোর এবং পলাতক আসামি মোর্শেদায়ান নিশানের বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানা ইস্যুর আদেশ দেন আদালত।

জাকিয়া আক্তারকে খুনের ঘটনায় তার বাবা জালাল উদ্দিন মল্লিক চারজনের নামে ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি গোপালগঞ্জ সদর থানায় মামলা করেন।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০০৫ সালে নিশানের সঙ্গে জাকিয়ার বিবাহ হয়। তাদের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর থেকেই নিশান ও তার পরিবারের সদস্যরা এক কোটি টাকা যৌতুকের জন্য জাকিয়াকে চাপ দিনে। তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন তারা। সন্তানের কথা চিন্তা করে সে নির্যাতন সহ্য করতেন জাকিয়া।

২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে তারা জাকিয়ার কাছে মোর্শেদায়ান নিশানের নামে ঢাকায় ফ্ল্যাট কিনে দেওয়ার জন্য এক কোটি টাকা যৌতুক দাবি করেন। জাকিয়া অস্বীকৃতি জানালে তারা তাকে জোর করে শোয়ার ঘর থেকে রান্নার ঘরে নিয়ে যান। সেখানে পরিবারের সদস্যদের প্ররোচনায় তাকে কুপিয়ে হত্যা করেন নিশান।

মামলা তদন্ত করে একই বছরের ৯ জুন গোপালগঞ্জ জেলার ডিবি পুলিশের পরিদর্শক সওগতুল আলম চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেন। এরপর গোপালগঞ্জ জেলা জজ আদালতে তাদের বিচার শুরু হয়। মামলায় সাত জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়।

মামলাটির বিচার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলাটি আসার পর আরো ১৩ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। এ নিয়ে অভিযোগপত্রের ২১ সাক্ষীর ২০ জনের সাক্ষ্য নেন আদালত।

রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে গত ২৭ জানুয়ারি এ মামলার রায় ঘোষণার কথা ছিল। বিচারক ছুটিতে থাকায় তা পিছিয়ে ১০ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করা হয়। সেদিন রায় প্রস্তুত না হওয়ায় তা আবার পিছিয়ে ২৪ ফেব্রুয়ারি নতুন তারিখ ধার্য করা হয়।

মন্তব্য

Beta version