সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির আসন্ন নির্বাচনে সম্পাদক পদে সরকার সমর্থক বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সাদা প্যানেল থেকে প্রার্থী হয়েছেন অ্যাডভোকেট মো. আবদুন নুর দুলাল। আর বিএনপি সমর্থক জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল (নীল প্যানেল) থেকে প্রার্থী হয়েছেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। সম্পাদক পদে এই দু’জনই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ দু’জনই প্রচারণা চালাচ্ছেন ব্যাপকভাবে। তবে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, প্রচারণায় এগিয়ে আছেন ব্যারিস্টার কাজল। ফলে প্রশ্ন ওঠছে, এবারো কি সম্পাদক পদটি সাদা প্যানেলের হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে? নাকি দীর্ঘদিন পর পদটি ফিরে পাচ্ছেন সরকার সমর্থক আইনজীবীরা?
যদিও নির্বাচনে উভয় প্রার্থীই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। অ্যাডভোকেট দুলাল ভোরের আকাশকে বলেন, এর আগে একবার প্রার্থী ছিলাম। তখন অল্প ভোটে পরাজিত হই। আর এবারো ব্যাপক গণসংযোগ করছি। আশা করছি আইনজীবীরা আমাকেই বিজয়ী করবেন।
ব্যারিস্টার কাজল ভোরের আকাশকে বলেন, মহামারি করোনা উপেক্ষা করে সারাবছরই আইনজীবীদের সুখে-দুঃখে পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। আইনজীবীরা বিবেকবান। আশা করি তারা আমাকে নিরাশ করবেন না।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, সাদা প্যানেল থেকে সর্বশেষ সম্পাদক নির্বাচিত হন অ্যাডভোকেট ড. মমতাজউদ্দিন আহমেদ মেহেদী। সেটা ২০১২ সালের নির্বাচনে। এর আগে ২০০৩ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত পদটিতে বিজয়ী হয়েছিলেন সাদা প্যানেলের প্রার্থীরা। মাঝখানে দুইবছর সম্পাদক ছিলেন নীল প্যানেলের ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল। এর পরের বছর অর্থাৎ ২০১২ সালে বিজয়ী হন মমতাজউদ্দিন আহমেদ মেহেদী। এরপর থেকে পদটিতে একটানা বিজয়ী হচ্ছেন নীল প্যানেলের প্রার্থীরা। ২০১৩ সালের নির্বাচনে এ পদে বিজয়ী হন নীল প্যানেলের ব্যারিস্টার এএম মাহবুবউদ্দিন খোকন। তিনি টানা সাতবার নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হন নীল দলের ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। তিনি গতবছরও বিজয়ী হন। এবারো সম্পাদক পদে তাকেই মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা।
ব্যারিস্টার কাজল সমিতির বর্তমান সম্পাদক। এর আগের বছরও তিনিই সম্পাদক ছিলেন। ফলে গত দুইবছর করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যেও আইনজীবীদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছেন তিনি। তিনি সারাবছরই আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেছেন। মামলা পরিচালনায় দলমত নির্বিশেষে জুনিয়র আইনজীবীদের পাশে থেকেছেন। এছাড়া গতবছর তার দল থেকে সম্পাদক পদে বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন অ্যাডভোকেট মির্জা আল মাহমুদ। কিন্তু এবার কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী নেই। ফলে নির্বাচনে এর সুবিধা তিনি পেতে পারেন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সবসময় সরকার বিরোধী মনোভাব কাজ করে। এরও ফল পেতে পারেন ব্যারিস্টার কাজল।
অপরদিকে অ্যাডভোকেট দুলাল ২০১৯ সালের নির্বাচনে সাদা প্যানেলের প্রার্থী ছিলেন। ওইবার তিনি নীল প্যানেলের ব্যারিস্টার খোকনের কাছে পরাজিত হন। এর পরের দুইবছর আর তাকে মনোনয়ন দেয়নি সাদা প্যানেল। গত দুইবছর সাদা প্যানেল থেকে যাদের প্রার্থী করা হয়েছে তারাও নীল প্যানেলের প্রার্থী ব্যারিস্টার কাজলের কাছে পরাজিত হয়েছেন। এ অবস্থায় অ্যাডভোকেট দুলালকে আবার প্রার্থী করেছে সাদা প্যানেল। একবার পরাজিত হওয়ায় তিনি এবারের নির্বাচনে আইনজীবীদের কাছ থেকে কিছুটা সহানুভূতি পেতে পারেন। এটা পেলে তিনি ভোটের দৌড়ে এগিয়ে যাবেন কিছুটা। তবে তার জন্য খারাপ খবর হলো, সাদা প্যানেল থেকে সম্পাদক পদে মনোনয়ন চেয়েছিলেন অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথী। কিন্তু তাকে তা দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে যুথী বিভিন্ন অভিযোগও তোলেন। ফলে নির্বাচনে এর একটা প্রভাব পড়তে পারে। সবমিলে আগামী ১৫ ও ১৬ মার্চের দুইদিনব্যাপী নির্বাচনে অ্যাডভোকেট দুলাল নাকি ব্যারিস্টার কাজল বিজয়ী হন তা দেখার বিষয়।
মন্তব্য