-->
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন আজ

হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস

এম বদি-উজ-জামান
হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির লোগো

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দু’দিনব্যাপী নির্বাচনে আজ মঙ্গলবার থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হচ্ছে। ভোট চলবে আগামীকাল বুধবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত। এই নির্বাচন উপলক্ষে এরইমধ্যে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শেষ করেছেন প্রার্থীরা। সমিতিতে প্যানেলভুক্ত হয়ে নির্বাচন নিষিদ্ধ হলেও সরকার সমর্থক বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের প্রার্থীরা সাদা প্যানেলে এবং বিএনপি সমর্থক জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের প্রার্থীরা নীল প্যানেলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

এদিকে সমিতির এই নির্বাচন স্থগিত চেয়ে গতকাল হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন অ্যাডভোকেট শাহ আহমেদ বাদল। রিট আবেদনটি শুনানির জন্য অ্যাডভোকেট সৈয়দ মামুন মাহবুব উপস্থাপন করলে বিচারপতি ফারাহ মাহবুবের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ রিট আবেদনটির ওপর শুনানি মূলতবি করেছেন।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (২০২২-২৩ ইং) দু’দিনব্যাপী নির্বাচনে আগামী ১৫ ও ১৬ মার্চ ভোটগ্রহণ। ওই দুইদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এই নির্বাচনে ভোটগ্রহণ করা হবে। সমিতির সভাপতি (১টি), সহ-সভাপতি (২টি), সম্পাদক (১টি), কোষাধ্যক্ষ (১টি), সহ-সম্পাদক (২টি) এবং কার্যকরী সদস্য (৭টি) পদসহ সর্বমোট ১৪টি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গতবছর পৃথক চারটি প্যানেল থাকলেও এবারের নির্বাচনে কার্যত দুটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।

প্যানেলের বাইরে সভাপতি পদে দুইজন, সহ-সভাপতি পদে একজন ও সহসম্পাদক পদে দুইজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সবমিলে মোট ৩৩জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

নির্বাচনে চারজন সভাপতি প্রার্থী থাকলেও মূলত আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেলের অ্যাডভোকেট মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেলের ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। সভাপতি পদে ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর প্রার্থিতা দাখিল করলেও তিনি প্রচারণায় নেই। তবে আরেক প্রার্থী ড. ইউনুছ আলী আকন্দও প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। আর সম্পাদক পদে প্রার্থী দু’জন হওয়ায় সাদা প্যানেলের মো. আবদুন নুর দুলাল ও নীল প্যানেলের ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলের মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা সীমাবদ্ধ থাকছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবারে সাদা ও নীল প্যানেল থেকে সভাপতি ও সম্পাদক পদে মনোনয়ন পাওয়া ব্যক্তিদের গ্রহণযোগ্যতা প্রায় সমপর্যায়ে। আইনজীবীদের কাছে তাদের প্রত্যেকের জনপ্রিয়তা রয়েছে। ফলে এই দুটি পদে হাড্ডাহাড্ডি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে।

এবারের নির্বাচনে দুই প্যানেলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব থাকলেও সাদা প্যানেলের দ্বন্দ্ব প্রকট। সরকার সমর্থক আইনজীবী হিসেবে পরিচিত সমিতির সাবেক সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলামের মেয়ে ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর সাদা প্যানেল থেকে সভাপতি পদে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তবে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এ কারণে তিনি প্রার্থিতা দাখিল করলেও এখন আর সক্রিয় নন। এছাড়া সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথী মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তার প্রার্থিতা নিয়ে ঝামেলা হয়। ফলে তিনিও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। এছাড়া সৈয়দ মামুন মাহবুবসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী প্যানেল নির্বাচনের বিরোধিতা করছেন। এর প্রভাব পড়তে পারে নির্বাচনে।

অপরদিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত ছাড়াই মেয়র পদে নির্বাচন করায় দল থেকে বহিষ্কার হন সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার। তিনি সুপ্রিম কোর্টে বিএনপি সমর্থক আইনজীবী রাজনীতিতে সক্রিয়। কিন্তু এবারের নির্বাচনে তিনি বিএনপি প্যানেলের বিরোধিতা করছেন। এছাড়া বিএনপি প্যানেল থেকে সহ-সম্পাদক পদে নির্বাচন করে বিজয়ী হওয়া রফিকুল হক তালুকদার রাজাসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী দলীয় প্যানেলের বিরোধিতা করছেন। এরও প্রভাব পড়তে পারে নির্বাচনে।

এছাড়া প্রতিবছর নির্বাচনে বিএনপি সমর্থক প্যানেলে জামায়াত সমর্থক আইনজীবীদের কয়েকটি পদ দেওয়া হয়। ফলে বিএনপি-জামায়াত সমর্থক আইনজীবীরা একাট্টা হয়ে নির্বাচন করেন। কিন্তু এবার নীল প্যানেল থেকে জামায়াতের কোনো প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। একারণে জামায়াত সমর্থক আইনজীবীরা সহ-সভাপতি ও সহ-সম্পাদক পদে একজন করে প্রার্থী দিয়েছেন। তারা আলাদাভাবে প্রচারণা চালিয়েছেন। ফলে এর প্রভাব নির্বাচনে পড়তে পারে। যদিও বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা বলছেন, সভাপতি ও সম্পাদক পদে এই বিরোধের প্রভাব পড়বে না।

মন্তব্য

Beta version