‘দালাল প্লাস’-এর ৩৫ গ্রাহকের দেড় কোটি টাকা ফেরত চেয়ে আইনি নোটিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
‘দালাল প্লাস’-এর ৩৫ গ্রাহকের দেড় কোটি টাকা ফেরত চেয়ে আইনি নোটিশ

‘দালাল প্লাস’ নামের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ৩৫ গ্রাহকের প্রায় দেড় কোটি টাকা ফেরতে পদক্ষেপ নিতে বাণিজ্য সচিব, দুদক চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরসহ সংশ্লিষ্ট ১৬ জনের কাছে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। দুদকের মাধ্যমে ‘দালাল প্লাস’ কর্তৃক এ পর্যন্ত পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ নিরূপণ ও পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানানো হয়েছে নোটিশে।

মঙ্গলবার ইমেইল ও ডাকযোগে এই নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব।

বাণিজ্য সচিব, অর্থ সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ব্যংকের গভর্নর, নগদ, বিকাশ, এসএসএল কমার্স, পেমেন্ট গেটওয়েসহ ১৬ জনকে এই নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তাদের আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে নোটিশের জবাব দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। অন্যথায় প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও নোটিশে বলা হয়েছে।

নোটিশে ‘দালাল প্লাস’ এ পর্যন্ত মোট কত টাকা লেনদেন করেছে, গ্রাহকের কাছ থেকে মোট কত টাকা নিয়েছে তা বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে চিহ্নিত করা এবং গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কী ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

নোটিশে বলা হয়েছে, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান দালাল প্লাসের ৩৫ জন গ্রাহক গত বছর মে, জুন, জুলাই মাসে বিভিন্ন পণ্য ক্রয়ের জন্য টাকা পরিশোধ করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত পণ্য সরবরাহ করেনি প্রতিষ্ঠানটি। ফলে ৩৫ জন গ্রাহকের ১,৩৯,৩৩,৫৮৫ টাকা পেমেন্ট গেটওয়ে এসএসএল এবং সূর্য পে-এর অ্যাকাউন্টে আটকে আছে। এতে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ওই ৩৫ গ্রাহক।

নোটিশে বলা হয়, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী কোনো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পণ্য সরবরাহ করতে ব্যর্থ হলে পরিশোধিত অর্থ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফেরত প্রদানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। গত কয়েক বছরে এ প্রতিষ্ঠান সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর কার্যকর নজরদারির অভাবের সুযোগে গ্রাহক আকর্ষণে বিভিন্ন অনৈতিক অফার, ডিসকাউন্ট নামে গ্রাহকদের প্রলুদ্ধ করে শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে। দালাল প্লাসের এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে তদন্তসহ গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষায় অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

নোটিশে আরো বলা হয়, সম্প্রতি বাংলাদেশে অনলাইনভিত্তিক আর্থিক লেনদেন তাৎপর্যপূর্ণভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি, ব্যাংকিং খাতে অনলাইন পেমেন্টের সুবিধা, টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ অবকাঠামোগত সুবিধা বৃদ্ধির সুযোগে ব্যাঙের ছাতার মতো ই-কমার্সভিত্তিক অসংখ্য প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এমনই একটি প্রতিষ্ঠান ‘দালাল প্লাস’ প্রতিষ্ঠার মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে বিভিন্ন অফারের নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

আরও বলা হয়, বিভিন্ন পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী এই কোম্পানি বিপুল অর্থ ইতোমধ্যে বিদেশে পাচার করেছে। ই-ওয়ালেট, গিফট কার্ডসহ আরো অন্যান্য অ-অনুমোদিত পদ্ধতিতে লেনদেন করে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে গ্রাহকদের সর্বস্বান্ত করেছে। প্রতিষ্ঠানটি প্রতিনিয়ত দেশের প্রচলিত আইনভঙ্গ করেছে সরকারি দপ্তরগুলোর নাকের ডগায়। কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না সরকারের দায়িত্বশীল সংস্থা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারি দপ্তরগুলোর আইন প্রয়োগে গাফিলতি ও ব্যর্থতার ফলে গ্রাহকরা আজ সর্বস্বান্ত। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে ই-কমার্সভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর যে সম্ভাবনা সেটিও আজ প্রশ্নবিদ্ধ। নোটিশ গ্রহীতারা কোনোভাবেই এর দায় এড়াতে পারে না।

মন্তব্য