রাজধানীর কলাবাগানের মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ‘ও’ লেভেলের ছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে করা মামলায় তার বন্ধু ইফতেখার ফারদিন দিহানের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ পিছিয়েছে। ৭ নম্বর নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত বিচারক জুলফিকারের আদালতে আজ বুধবার (১৬ মার্চ) কোনো সাক্ষী না আসায় আগামী ৩১ মার্চ সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী তারিখ রাখা হয়েছে।
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আফরোজা ফাহানা আহমেদ অরেঞ্জ ভোরের আকাশকে জানান, এ মামলায় আজ সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু কোনো সাক্ষী আদালতে না আসায় বিচারক সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য নতুন তারিখ ঠিক করেন। মামলায় অভিযোগপত্রে রাষ্ট্রপক্ষে ৫৫ জন সাক্ষী রয়েছেন। সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য থাকায় এদিন কারাগার থেকে দিহানকে আদালতে হাজির করা হয় বলেও জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।
গত ১৬ ফ্রেব্রুয়ারি দিহানের পক্ষে অব্যাহতি চেয়ে করা আবেদনের ওপর শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবী মো. বোরহান উদ্দিন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এস.এম. সবুর অভিযোগ গঠনের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক অব্যাহতির আবেদন খারিজ করে অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন। এর মধ্য দিয়ে মামলায় দিহানের বিচার শুরু হয়। একই দিন দিহানের আইনজীবী ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রত্যাহার চাইলে বিচারক তা নথিভুক্ত করেন।
আলোচিত এ ঘটনায় দিহানের তিন বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেয় পুলিশ। মামলায় গত বছরের ৮ নভেম্বর শুধু দিহানের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন পুলিশের ব্যুরো অব ইনভেস্টিটিশনের (পিবিআই) পরিদর্শক খালেদ সাইফুল্লাহ।
মামলার অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, গত বছরের ৭ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা মা কর্মস্থলের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হয়ে যান। এর এক ঘণ্টা পরে তার বাবাও ব্যবসায়িক কাজে বাসা থেকে বের হন। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ওই শিক্ষার্থী তার মাকে ফোন করে কোচিং থেকে পড়ালেখার পেপার্স আনার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন।
মামলার একমাত্র আসামি ‘ও’ লেভেল পড়ুয়া শিক্ষার্থী দুপুর আনুমানিক ১টা ১৮ মিনিটে ফোন করে ওই শিক্ষার্থীর মাকে জানান, মেয়েটি তার বাসায় গিয়েছিলেন। হঠাৎ অচেতন হয়ে পড়ায় তাকে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়েছে। অফিস থেকে বের হয়ে আনুমানিক দুপুর ১টা ৫২ মিনিটে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর মা হাসপাতালে পৌঁছেন। হাসপাতালের কর্মচারীদের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন, আসামি তার কলাবাগান ডলফিন গলির বাসায় ডেকে নিয়ে মেয়েটিকে ধর্ষণ করেন। প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণে মেয়েটি অচেতন হয়ে পড়লে বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য আসামি নিজেই তাকে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে নিয়ে যান।
ঘটনার পরদিন গত বছরের ৮ জানুয়ারি কালাবাগান থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ এর ২ ধারায় খুনসহ ধর্ষণ মামলা করেন ওই শিক্ষার্থীর বাবা।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আনোয়ার খান মর্ডান মেডিকেল কলেজ হাসপাতলের জরুরি বিভাগে গিয়ে তার স্ত্রী কর্তব্যরত চিকিৎসকের কাছে জানতে পারেন, তাদের মেয়েকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।
এজাহারে আরো বলা হয়, তারা বিভিন্নভাবে জানতে পারেন দিহান তাদের মেয়েকে প্রেমের প্রলুব্ধে ধর্ষণের উদ্দ্যেশ্যে তার বাসায় ডেকে নিয়ে যান। পরে দিহান ফাঁকা বাসায় মেয়েকে একা পেয়ে ধর্ষণ করেন। ধর্ষণের সময় অমানবিক কার্যকলাপ করায় গোপাঙ্গ দিয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয় এবং মেয়েটি অচেতন হয়ে পড়েন। পরে ধর্ষণের ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে দিহান চালাকি করে মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মন্তব্য