দেশের সর্বোচ্চ আদালতে আইন পেশায় নিয়োজিত আইনজীবীদের সংগঠন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির (২০২২-২৩) নির্বাচনে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন সরকার সমর্থক সাদা প্যানেলের অ্যাডভোকেট মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির।
আর তবে সম্পাদক পদের ফল চূড়ান্ত হয়নি। আজ শুক্রবার (১৮ মার্চ ) বিকেলে এ পদে ভোট পুনর্গণনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
বৃহস্পতিবার রাতে অনানুষ্ঠানিকভাবে এ ফল জানা গেছে। আজ শুক্রবার (১৮ মার্চ) বিকালে আনুষ্ঠানিকভাবে ফল ঘোষণা করা হবে।
ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির ১৪টি পদের মধ্যে সরকার সমর্থক সাদা প্যানেল সভাপতিসহ ৬টি এবং বিএনপি সমর্থক নীল প্যানেল সম্পাদকসহ ৭টি পদ পেয়েছে। সম্পাদক পদ ফল চড়ান্ত হলে তা এ হিসেবে নতুন মাত্রা যোগ করবে।
এবারের নির্বাচনে দুটি সহ-সভাপতি পদে সাদা প্যানেলের মো. শহীদুল ইসলাম ও মোহাম্মদ হোসেন বিজয়ী হয়েছেন।
আর ট্রেজারার পদে নীল প্যানেলের মো. কামাল হোসেন, সহ-সম্পাদক পদে নীল প্যানেলের মাহফুজ বিন ইউসুফ ও মাহবুবুর রহমান খান বিজয়ী হয়েছেন।
কার্যনির্বাহী সদস্যের ৭টি পদের মধ্যে সাদা প্যানেল পেয়েছে তিনটি আর নীল প্যানেল পেয়েছে চারটি পদ।
সদস্যপদে সাদা প্যানেলের বিজয়ীরা হলেন- ফাতেমা বেগম (১ম), শাহাদাত হোসাইন রাজিব (৩য়) ও সুব্রত কুমার কুন্ডু(৪র্থ)।
সদস্য পদে নীল প্যানেলের বিজয়ীরা হলেন-ব্যারিস্টার মাহাদিন চৌধুরী (২য়), গোলাম আক্তার জাকির (৫ম), মঞ্জুরুল আলম সুজন (৬ষ্ঠ) ও মো. কামরুল ইসলাম (৭ম)।
সমিতির সম্পাদক পদের ফল ঘোষণা নিয়ে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে আইনজীবীদের মধ্যে চরম উত্তেজনা দেখা দেয়। সম্পাদক পদে নীল প্যানেলের ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল এগিয়ে থাকায় সাদা প্যানেলের অ্যাডভোকেট আবদুন নূর দুলাল পুনরায় ভোট গণনার আবেদন করেন। এ নিয়ে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে তুমুল হইচই হট্টগোলের মধ্যে আজ শুক্রবার বিকাল ৩টায় সম্পাদক পদে পুনরায় ভোট গণনার সিদ্ধান্ত জানায় নির্বাচন কমিশন। এর পর উত্তেজনা প্রশমিত হলে আজ আনুষ্ঠানিক ঘোষণার জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়।
এবারের নির্বাচনে সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের ১৪টি পদে মোট ৩৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনে চারজন সভাপতি প্রার্থী থাকলেও মূলত আওয়ামী লীগ সমর্থক বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের (সাদা) প্যানেলের অ্যাডভোকেট মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও বিএনপি সমর্থক জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য (নীল) প্যানেলের ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়।
দুই প্যানেলের বাইরে সভাপতি পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর প্রার্থিতা দাখিল করলেও তিনি প্রচারণায় ছিলেন না। তবে সভাপতি পদে আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. ইউনুছ আলী আকন্দ শেষ পর্যন্ত প্রচারণা চালিয়ে গেছেন যদিও বিজয়ী হতে পারেননি তিনি। আর সম্পাদক পদে প্রার্থী দু’জন হওয়ায় সাদা প্যানেলের মো. আবদুন নুর দুলাল ও নীল প্যানেলের ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলের মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা সীমাবদ্ধ ছিল।
এছাড়া প্রতিবছর নির্বাচনে বিএনপি সমর্থক প্যানেলে জামায়াত সমর্থক আইনজীবীদের কয়েকটি পদ দেওয়া হলেও এবার নীল প্যানেল থেকে জামায়াতের কোনো প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এ কারণে জামায়াত সমর্থক আইনজীবীরা সহসভাপতি পদে মঈন উদ্দিন ফারুকী ও সহসম্পাদক পদে আব্দুল করিমকে প্রার্থী দেন। তারা আলাদাভাবে প্রচারণা চালিয়েছেন। এছাড়াও একজন সহ-সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন অ্যাডভোকেট ফরহাদ উদ্দিন ভূঁইয়া।
দু’দিন ব্যাপী সমিতির এ নির্বাচনে মঙ্গল ও বুধবার শান্তিপূর্ণভাবে ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়। এরপর বৃহস্পতিবার বিকেল পৌনে ৫টা থেকে ভোট গণনা শুরু হয়। এবারের নির্বাচনে ৮ হাজার ৬২৩ জন ভোটারের মধ্যে ৫ হাজার ৯৮২ জন আইনজীবী ভোট দিয়েছেন। সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের ১৪টি পদে নির্বাচনে ৩৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সভাপতি পদে ৪ জন, দুটি সহসভাপতি পদে ৫ জন, সম্পাদক পদে ২ জন, কোষাধ্যক্ষ পদে ২ জন, দুটি সহ-সম্পাদক পদে ৬ জন এবং ৭টি সদস্য পদে ১৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
মন্তব্য