-->

কলাবাগানে কিশোরী ধর্ষণ-হত্যা: বাবার সাক্ষ্যগ্রহণ

আদালত প্রতিবেদক
কলাবাগানে কিশোরী ধর্ষণ-হত্যা: বাবার সাক্ষ্যগ্রহণ

রাজধানীর কলাবাগানে মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ‘ও’ লেভেলের ছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় তার বাবা মো. আল আমিন আহমেদ সাক্ষ্য দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) ঢাকার ৭ নম্বর নারী ও শিশু ট্রাইবুনালের ভারপ্রাপ্ত বিচারক জুলফিকার হায়াতের কাছে দেওয়া সাক্ষ্যে মেয়েটির বাবা বলেন, আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতালে আমি পৌঁছালেই আমার স্ত্রী দৌড়িয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে-'আমাদের মেয়ে আর নাই'।

কাঠগড়ায় দাঁড়ানো 'আসামি' দিহানকে সনাক্ত করে তার সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন তিনি। এ সময় মামলার এজাহার ও এজাহারে বাদীর স্বাক্ষর প্রদর্শনী হিসাবে নথিতে অন্তর্ভুক্ত করে রাষ্ট্রপক্ষ।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আফরোজা ফাহানা আহমেদ অরেঞ্জ ভোরের আকাশকে বলেন, সাক্ষ্য শেষ হলে তাকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. বোরহান উদ্দিন। সাক্ষ্যগ্রহন শেষে বিচারক আগামী ২১ এপ্রিল পরবর্তী সাক্ষ্য নেওয়ার জন্য তারিখ রাখেন।

এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ৫৫ জন সাক্ষী রয়েছেন।

জেরায় 'আসামির' আইনজীবী এজাহারের বিভিন্ন বক্তব্যের ওপর প্রশ্ন করেন। জেরায় এ আইনজীবী বলেন, হাসপাতালে আনার পরে আনুশকা মারা গেছেন চিকিৎসকদের ভুল ‍চিকিৎসা আর অবহেলায়।

এসব কথা অস্বীকার করেন বাদী।

সাক্ষ্যে জবানবন্দীতে আল আমিন বলেন, গত বছরের ৭ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর মা কর্মস্থলের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হয়ে যান। এরপর আমিও নবাবপুরে আমার ব্যবসাকেন্দ্রে চলে যাই। দুপুর দেড়টার দিকে আমার স্ত্রী আমাকে ফোন করে জানায়, আমার মেয়ের বন্ধু দিহান তাকে জানিয়েছে যে, সে নাকি দিহানদের বাসায় এসেছিল। সে সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। স্ত্রী আমাকে বলে-'আমি সেখানে যাচ্ছি'। তুমি তাড়াতাড়ি আসো।' ধানমন্ডি আনোয়ার খান মডান হাসপাতালে পৌঁছে দেখি আমার স্ত্রী সেখানে আগেই পৌঁছে গেছে। আমাকে দেখে আমার স্ত্রী জড়িয়ে ধরে বলে-আমাদের মেয়ে আর নেই।

মামলার এজহারে মো. আল আমিন আহমেদ অভিযোগ করেন, সেদিন সকালে সাড়ে ৮টায় আমার স্ত্রী অফিসের এবং আমি সকাল সাড়ে ৯ টায় ব্যবসায়ী কাজের উদ্দেশে বের হয়ে যাই। পরে আনুশকা সকাল সাড়ে ১১ টায় আমার স্ত্রীকে ফোন দিয়ে বলে সে কোচিং এর পেপার্স আনতে বাহিরে যাচ্ছে। এই কথা বলে সে সকাল ১১ টা ৪৫ মিনিটে বাসা থেকে বের হয়ে যায়।

তিনি বলেন, বেলা ১টা ১৮ মিনিটে ইফতেখার ফারদিন দিহান আমার স্ত্রীকে ফোন দিয়ে জানায়-ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তার বাসায় গিয়েছিল, সেখানে হঠাৎ অচেতন হয়ে পড়ায় তাকে রাজধানীর আনোয়ার খান মর্ডান মেডিকেল কলেজ হাসপাতলের জরুরী বিভাগে ভর্তি করিয়েছে। এ কথা শুনে আমার স্ত্রী বেলা ১টা ৫২ মিনিটের দিকে হাসপাতালে পৌঁছায়। সেখানে গিয়ে আমার স্ত্রী কর্তব্যরত চিকিৎসকের কাছে জানতে পারে তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।

মো. আল আমিন আহমেদ এজাহারে অভিযোগ করেন, পরে আমরা বিভিন্নভাবে জানতে পারি দিহান আমার মেয়েকে প্রেমের প্রলোভনে তার বাসায় বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে ডেকে নিয়ে যায়। পরে দিহান ফাঁকা বাসায় আমার মেয়েকে একা পেয়ে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের সময় অমানবিক কার্যকলাপ করায় তার গোপনাঙ্গ দিয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হলে অচেতন হয়ে পড়ে। পরে ধর্ষণের ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে দিহান চালাকি করে আমার মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আমার মেয়েকে মৃত ঘোষণা করেন।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি এ মামলায় অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন বিচারক। এর আগে, ৭ নম্বর নারী ও শিশু ট্রাইবুনালের ভারপ্রাপ্ত বিচারক জুলফিকার হায়াত আলোচিত এ মামলার অভিযুক্ত দিহানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে ১৬ মার্চ সাক্ষ্যগ্রহনের তারিখ রাখেন। কিন্তু সেদিন বাদীপক্ষের সময় আবেদনের কারণে সাক্ষ্য পিছিয়ে ৩১ মার্চ তারিখ রাখা হয়।

গত বছরের ৮ নভেম্বরে দিহানের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন পুলিশের ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর পরিদর্শক খালেদ সাইফুল্লাহ।

মন্তব্য

Beta version