রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় দু’জনের মৃত্যুদণ্ড বহালের রায়ে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন তার পরিবার সদস্যরা। তারা বলেছেন, এ রায় কার্যকর হলেই তারা পুরোপুরি সন্তুষ্ট হবেন।
এ হত্যা মামলায় মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) আপিল বিভাগের দেওয়া রায়ের পর নিহতের মেয়ে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী শেগুফতা তাবাসসুম আহমেদ তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের দেওয়া এই রায়টি যখন কার্যকর হবে, তখনই আমাদের সন্তুষ্টির জায়গা তৈরি হবে। তবে এখন কিছুটা হলেও স্বস্তি পাচ্ছি। কারণ, বিগত ১৬ বছর ধরে বিচারের সংগ্রামটা করেছি।
অধ্যাপক তাহেরের ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ বলেন, ‘আমার বাবাকে নৃশংসভাবে হত্যার বিচারে সবাই আমাদের সাপোর্ট করেছেন। আমরা সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। আমরা চাই রায়টা দ্রুত কার্যকর হোক।’
অধ্যাপক ড. এস তাহেরের স্ত্রী সুলতানা আহমেদ রায়ের পর বলেন, ১৬ বছর সংগ্রাম করেছি। অনেক দুঃখ-কষ্ট ভোগ করেছি। আজ রায়টা হলো ৷ তাতে স্বস্তি পাচ্ছি। তবে এই রায়টা কার্যকর হলে পরিপূর্ণ সন্তুষ্ট হবো।
অধ্যাপক তাহের হত্যাকাণ্ডকে দেশের ইতিহাসে জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, আজকের এই রায়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হলো। অন্যদের কাছে এই বার্তা যাবে যে এ ধরনের কাজ করলে আদালতের কাছ থেকে সর্বোচ্চ শাস্তি পেতে হবে।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আসামিপক্ষে রিভিউ আবেদন করার সুযোগ আছে। রিভিউ করলে যদি তা খারিজ হয় তখন রায় কার্যকরের কার্যক্রম শুরু হবে। তবে আসামিরা রাষ্ট্রপতি বরাবর প্রাণভিক্ষা চেয়ে আবেদনের সুযোগ পাবেন। সেটি নাকচ হলে বিধি অনুসারে রায় কার্যকর হবে।
আলোচিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও নিহতের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলমের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে আজ রায় দেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ।
২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় দুই আসামির মৃত্যুণ্ডাদেশ বহাল এবং অন্য দুই আসামির দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাণ্ডাদেশ দেন হাইকোর্ট।
মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত দুই আসামি হলেন একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও নিহত ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলম।
আর যে দুজনের ফাঁসির দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয় তারা হলেন মো. জাহাঙ্গীর আলমের ভাই নাজমুল আলম ও নাজমুল আলমের স্ত্রীর বড় ভাই আব্দুস সালাম।
পরে এ রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা আপিল করেন।
আরো পড়ুন: রাবি অধ্যাপক তাহের হত্যা: দুজনের মৃত্যুদণ্ড, দুজনের যাবজ্জীবন বহাল
অধ্যাপক তাহের হত্যা মামলায় ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালত চারজনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ ও দুই জনকে বেকসুর খালাস দেন। খালাসপ্রাপ্ত চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও আজিমুদ্দিন মুন্সী। ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ এ ৬ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দিয়েছিল পুলিশ।
পরে নিয়ম অনুযায়ী ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণ নথি) হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি আসামিরাও আপিল করেন।
২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারের ম্যানহোল থেকে উদ্ধার করা হয় নৃশংসভাবে হত্যার শিকার অধ্যাপক তাহেরের মৃতদেহ। ৩ ফেব্রুয়ারি নিহতের ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মন্তব্য