সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত পুলিশের সিপাহী সাগর দেব ও রুবেল শর্মা খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেছেন। আবেদন শুনানির জন্য গ্রহণ করেছে আদালত।
বুধবার (৬ এপ্রিল) বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই আবেদন গ্রহণ করে আদেশ দিয়েছে।
এর আগে, এ মামলায় টেকনাফ থানার সাবেক ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক পরিদর্শক লিয়াকত আলীর মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের (ডেথ রেফারেন্স) নথি গত ৮ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে আসে। ফৌজদারি কার্যবিধির-৩৭৪ ধারা অনুযায়ী বিচারিক আদালতের দেওয়া কোনো মৃত্যুদণ্ডের রায় অনুমোদনের জন্য মামলার নথি ডেথ রেফারেন্স আকারে হাইকোর্টে পাঠাতে হয়। এ কারণে কক্সবাজার আদালত থেকে প্রদীপ-লিয়াকতের ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে পাঠানো হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত গত ৩১ জানুয়ারি আলোচিত এই হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করে। রায়ে প্রদীপ ও লিয়াকতকে মৃত্যুদণ্ড এবং আরো ছয় আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আর অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় ৭ জনকে খালাস দেওয়া হয়।
রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন-বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, টেকনাফ থানার কনস্টেবল রুবেল শর্মা ও এএসআই সাগর দেব এবং সিনহার সঙ্গীদের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলার তিন সাক্ষী-পুলিশের সোর্স নুরুল আমিন, নেজাম উদ্দিন ও মোহাম্মদ আয়াজ।
খালাসপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন-বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন ও আব্দুল্লাহ আল-মামুন, এএসআই মো. লিটন মিয়া, এবং এপিবিএন এর এসআই মোহাম্মদ শাহজাহান, কনস্টেবল মোহাম্মদ রাজীব ও মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ।
কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের শামলাপুর চেকপোস্টে ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে গুলি করে হত্যা করা হয় মেজর (অব.) সিনহাকে। এ ঘটনার ৫ দিন পর ওই বছরের ৫ আগস্ট নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন ইনচার্জ লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত শেষে ওই বছরের ১৩ ডিসেম্বর ১৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে তদন্ত কর্মকর্তা। অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকাণ্ডকে ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
ওই বছরের ৭ আগস্ট মামলার আসামি সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে তদন্তে নেমে হত্যার ঘটনায় স্থানীয় তিন বাসিন্দা, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্য ও ওসি প্রদীপের দেহরক্ষীসহ আরো ৭ জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এরপর ২০২১ সালের ২৪ জুন মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি কনস্টেবল সাগর দেব আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।
গত বছরের ২৭ জুন প্রদীপসহ ১৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে এই হত্যা মামলার বিচার শুরু হয়। গত বছর পহেলা ডিসেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। এরপর গত ১২ জানুয়ারি যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হলে রায়ের দিন নির্ধারণ করা হয়।
মন্তব্য