-->

রমনার বটমূলে বোমা হামলা মামলার নিষ্পত্তি হয়নি ২১ বছরেও  

এম বদি-উজ-জামান
রমনার বটমূলে বোমা হামলা মামলার নিষ্পত্তি হয়নি ২১ বছরেও  
প্রতীকী ছবি

বহুল আলোচিত রাজধানীর রমনার বটমূলে পহেলা বৈশাখে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার একুশ বছর পার হচ্ছে। কিন্তু ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলার আজও চ‚ড়ান্ত নিষ্পত্তি হলো না।

ওই হামলার ঘটনায় পৃথক দুটি মামলার মধ্যে শুধুমাত্র হত্যা মামলায় নিম্ন আদালতে বিচার সম্পন্ন হয়েছে। হত্যা মামলাটি এখন হাইকোর্টে বিচারাধীন। গত বছর জুনে মামলাটি হাইকোর্টের কার্য তালিকায় থাকলেও রাষ্ট্রপক্ষের সময় আবেদনের কারণে শুনানি হয়নি।

মামলার ভবিষ্যত এখন প্রধান বিচারপতির হাতে। আর বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের মামলা এখনো নিম্ন আদালতে বিচারাধীন। এ মামলায় নিম্ন আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হওয়ায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য দিন ধার্য আছে।

তবে সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারকের প্রতি অনাস্থা দিয়েছে আসামিপক্ষ। ফলে এই মামলা দুটির বিচার সম্পন্ন হতে আর কতদিন লাগবে তা বলতে পারেন না রাষ্ট্রপক্ষ বা আসামিপক্ষ। মামলাটিতে ২০১৬ সালের ৭ এপ্রিল বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি শুরু হয়। এ আদালতে মামলাটি যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পর্যায়ে থাকলে আদালতের এখতিয়ার পরিবর্তন হওয়ায় মামলাটির শুনানি বন্ধ হয়ে যায়।

পরবর্তীতে গত ৫ বছরে মামলাটি হাইকোর্টের আরো কয়েকটি বেঞ্চের কার্যতালিকায় থাকলেও আদালতের এখতিয়ার পরিবর্তন, বেঞ্চের বিচারক পরিবর্তন হওয়ায় এবং করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের প্রেক্ষাপটে আর শুনানি হয়নি।

এ মামলাটি এখন হাইকোর্টের কোন্ বেঞ্চে বিচার হবে তা নির্ভর করছে প্রধান বিচারপতির সিদ্ধান্তের ওপর। কারণ সর্বশেষ গতবছর যে বেঞ্চে মামলাটি বিচারাধীন ছিল সে বেঞ্চের এখতিয়ার পরিবর্তন হয়েছে।

ফলে মামলাটি বিচারের জন্য কোন্ বেঞ্চে পাঠাবেন তা প্রধান বিচারপতির একান্ত প্রশাসনিক এখতিয়ার। আর বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের মামলাটি ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন।

এ মামলায় গত ২১ মার্চ সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। মামলায় ৮৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ৫৪ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। এখন মামলাটিতে আগামী ২০ এপ্রিল যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য দিন ধার্য রয়েছে। যদিও ওই আদালতের বিচারকের ওপর অনাস্থা জনিয়েছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী।

২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলায় ১০ জন নিহত হয়। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তদন্ত শেষে ২০০৮ সালের ২৯ নভেম্বর মুফতি হান্নানসহ ১৪ জনকে আসামি করে দণ্ডবিধি ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে পৃথক দুটি অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।

একই বছরের ১৬ এপ্রিল অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচার শুরু হয়। এরমধ্যে হত্যা মামলায় বিচার শেষে ২০১৪ সালের ২৩ জুন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত রায় দেন।

রায়ে মুফতি হান্নানসহ আটজনকে মৃত্যুদণ্ড ও ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই বছরের ২৬ জুন ফাঁসির রায় অনুমোদনের জন্য ঢাকার আদালত থেকে হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স পাঠানো হয়।

কারাবন্দি আসামিরাও আপিল করে। এরপর প্রধান বিচারপতির নির্দেশে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়। এরপর শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসে।মামলার প্রধান আসামি মুফতি হান্নানের ফাঁসি সিলেটের একটি মামলায় (ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা মামলা) কার্যকর হওয়ায় এই মামলায় তার আর বিচার হচ্ছে না।

ফলে এ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর ৭ আসামি হলেন-মাওলানা আকবর হোসেন, মাওলানা আরিফ হাসান সুমন, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা মো. তাজউদ্দিন, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, আবদুল হাই ও শফিকুর রহমান।

এদের মধ্যে আকবর হোসেন ও আরিফ হাসান সুমন কনডেম সেলে বন্দি। বাকিরা পলাতক। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন-শাহাদাত উল্লাহ জুয়েল, মাওলানা সাব্বির ওরফে আব্দুল হান্নান সাব্বির, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মাওলানা আব্দুর রউফ, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া ও হাফেজ মাওলানা আবু তাহের। এরা সকলেই কারাবন্দি।

 

মন্তব্য

Beta version