রাজধানীর ওয়ারী থানায় অর্থপাচার আইনে করা মামলায় গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা এনামুল হক ভূঁইয়া ওরফে এনু ও তার ভাই রুপন ভূঁইয়াসহ ১১ জনকে ৭ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি তাদেরকে চার কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা না দিলে তাদেরকে আরো এক বছর করে কারাভোগ করতে হবে।
সোমবার (২৫ এপ্রিল) ঢাকার বিশেষ দায়রা জজ আদালত-৫ এর বিচারক ইকবাল হোসেন এ রায় দিয়েছেন। আদালতের বেঞ্চ সহকারী সাইফুল ইসলাম বিষয়টি ভোরের আকাশকে নিশ্চিত করেছেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামিরা হলেন এনু-রুপনের ভাই মেরাজুল হক ভূঁইয়া শিপলু, রশিদুল হক ভূঁইয়া ও সহিদুল হক ভূঁইয়া, জয় গোপাল সরকার, পাভেল রহমান, তুহিন মুন্সি, আবুল কালাম আজাদ, নবীর হোসেন শিকদার ও সাইফুল ইসলাম। আসামিদের মধ্যে শিপলু, রশিদুল, সহিদুল ও পাভেল মামলার শুরু থেকে পলাতক রয়েছেন। তুহিন জামিনে ছিলেন। অপর ছয় আসামি কারাগারে আছেন। রায় উপলক্ষে এদিন কারাগারে থাকা তাদের আদালতে হাজির করা হয়। তুহিন জামিনে থেকে হাজিরা দেন।
পরে সাজা পরোয়ানা দিয়ে সাতজনকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
গত ৬ এপ্রিল মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য ধার্য ছিল। কিন্তু ওইদিন বিচারক ছুটিতে থাকায় তা পিছিয়ে আজ সোমবার ২৫ এপ্রিল ধার্য করা হয়। এর আগে গত ১৬ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষ এবং আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের তারিখ ধার্য করেছিলেন ৬ এপ্রিল।
রাজধানী ঢাকার ক্রীড়াক্লাবগুলোতে ক্যাসিনোর কারবার বন্ধে অভিযানের মধ্যে ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি গ্রেপ্তার করা হয় দুই ভাই এনু ও রুপনকে। অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ১২টি মামলা হয়।
এর আগে ২০১৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের ক্যাসিনো খেলা পরিচালনাকারী এনুর কর্মচারী আবুল কালাম আজাদের বাসায় ক্যাসিনো থেকে উপার্জিত টাকা উদ্ধারের জন্য ওয়ারীর লালমোহন সাহা স্ট্রিটের বাড়ি ঘেরাও করে র্যাব। কালামের স্ত্রী ও মেয়ের দেখানো মতে ৪র্থ তলার বাড়ির দ্বিতীয় তলা থেকে দুই কোটি টাকা উদ্ধার করে র্যাব।
এ ঘটনায় র্যাব-৩ এর পুলিশ পরিদর্শক (শহর ও যান) জিয়াউল হাসান ২৫ নভেম্বর ওয়ারী থানায় মামলাটি করেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, এনু ও রুপন দীর্ঘদিন ক্যাসিনো পরিচালনার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করে আসছে। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান পরিচালিত হলে তারা তাদের অপকর্ম আড়াল করার জন্য অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ গোপন করার জন্য কালামের বাসায় রেখেছিলেন। আসামিরা জেনে-বুঝে অবৈধ প্রক্রিয়ায় উপার্জিত অর্থ আড়াল করার জন্য গোপনে কালামের কাছে রাখেন। কালাম তা গ্রহণ করে নিজের কাছে রাখেন, যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের অপরাধ।
মামলা তদন্ত করে ২০২০ সালের ২১ জুলাই ১১ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক মোহাম্মদ ছাদেক আলী। গত বছরের ৫ জানুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন আদালত। মামলায় ২০ সাক্ষীর মধ্যে ১০ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য