আজ ২৭ এপ্রিল। বহুল আলোচিত নারায়ণগঞ্জের ৭ খুনের মামলার ৮ বছর পূর্ণ হলো। কিন্তু চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলায় আজও চূড়ান্ত বিচার সম্পন্ন হয়নি। ওই ঘটনায় করা পৃথক দুটি মামলায় নিম্ন আদালতের পর হাইকোর্টে রায় হলেও মামলা দুটি এখন দেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগে বিচারাধীন। ৩ বছর আগেই কারাবন্দি আসামিরা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দাখিল করলেও এ আপিল শুনানির জন্য এখনো প্রস্তুত হয়নি। এ কারণে মামলাটিতে কবে চূড়ান্ত বিচার সম্পন্ন হবে, তা বলা যাচ্ছে না।
আইনজীবীরা বলছেন, কোন মামলায় কবে শুনানি হবে, তা নির্ভর করে আদালতের ওপর। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোনো মামলা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানি করতে হলে সংশ্লিষ্ট পক্ষকে আদালতে লিখিত আবেদন দিতে হবে। এ আবেদনের ভিত্তিতে আদালত সিদ্ধান্ত জানাবেন। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, মৃত্যুদণ্ডের কোনো মামলায় আপিল শুনানি হতে হলে সংশ্লিষ্ট পক্ষকে মামলায় তাদের যুক্তিসহ পেপারবুক তৈরি করে আপিলের সঙ্গে তা দাখিল করতে হয়। এরপর পর্যায়ক্রম অনুসারে আদালতের কার্যতালিকায় আসে। পরবর্তী সময়ে আদালতে মামলার সারসংক্ষেপ দাখিল করতে হয়। আলোচিত এ মামলায় এখনো কোনো পক্ষই সারসংক্ষেপ দাখিল করেনি। ফলে শুনানির জন্য প্রস্তুত হয়নি। এ সারসংক্ষেপ দাখিলের পর শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসতে পারে।
নারায়ণগঞ্জের এ ৭ খুন মামলায় করা আপিল দ্রুত শুনানির উদ্যোগের বিষয়ে আসামিপক্ষে সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান ভোরের আকাশকে বলেন, করোনার কারণে গত দুই বছর আদালতে স্বাভাবিক বিচার কাজ হয়নি। ফলে এ মামলাটিতে এখনো সারসংক্ষেপ দাখিল করা হয়নি। তিনি বলেন, এ সারসংক্ষেপ দাখিলের পর পেপারবুক তৈরি হবে। এরপর শুনানি। তিনি বলেন, দুদিন পর আদালত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আগামী ১৬ মে আদালত নিয়মিত খুলবে। এরপর এ মামলার শুনানির বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
নারায়ণগঞ্জের ৭ খুন মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের সাজার বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে আপিল করেন কারাবন্দি আসামিরা। এ আপিল এখন দেশের সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন। বিচারের প্রক্রিয়া অনুযায়ী আপিল বিভাগের রায়ের পর আসামি বা রাষ্ট্রপক্ষ রিভিউ আবেদন করার সুযোগ পাবেন। এ রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তির পর পরবর্তী প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। যদি কোনো আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে, তবে তিনি কারাবিধি অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়ে আবেদন করার সুযোগ পাবেন। রাষ্ট্রপতি আবেদন নাকচ করে দিলে কারা কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। আর যদি আদালতে কারো মৃত্যুদণ্ডের সাজা না হয়, সেক্ষেত্রেও আসামিদের রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চেয়ে সাজা মওকুফের আবেদন দেওয়ার সুযোগ থাকবে।
নারায়ণগঞ্জের আদালত ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি দুটি মামলায় রায় ঘোষণা করে। রায়ে ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এরপর মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স (পূর্ণাঙ্গ রায়সহ সব নথি) পাঠানো হয় হাইকোর্টে। কারাবন্দি আসামিরা পর্যায়ক্রমে আপিল করেন। এ আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের ওপর একত্রে শুনানি শেষে হাইকোর্ট ২০১৭ সালের ২২ আগস্ট রায় দেন। দুটি মামলায় আলাদা আলাদা রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল এবং ১১ জনকে মৃত্যুদণ্ডের সাজার পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এছাড়া নিম্ন আদালতে ৯ জনকে দেওয়া বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ডের রায় বহাল থাকে। পরের বছর ১৯ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় (৭৮১ পৃষ্ঠা এবং ৭৮৩ পৃষ্ঠা) প্রকাশিত হয়।
হাইকোর্টে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- র্যাব-১১-এর তৎকালীন অধিনায়ক লে. কর্নেল (বরখাস্ত) তারেক সাঈদ মোহাম্মদ (সাবেক ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন মায়ার জামাতা), কোম্পানি কমান্ডার মেজর (বরখাস্ত) আরিফ হোসেন, লে. কমান্ডার (বরখাস্ত) মাসুদ রানা (এম এম রানা), হাবিলদার এমদাদুল হক, আরওজি-১ আরিফ হোসেন, ল্যান্স নায়েক হীরা মিয়া, ল্যান্স নায়েক বেলাল হোসেন, সিপাহি আবু তৈয়ব, কনস্টেবল মো. শিহাব উদ্দিন, এসআই পূর্ণেন্দু বালা, সৈনিক আবদুল আলীম, সৈনিক মহিউদ্দিন মুন্সি, সৈনিক আল আমিন ও সৈনিক তাজুল ইসলাম এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন। এদের মধ্যে নূর হোসেন ছাড়া বাকিরা সবাই র্যাব-১১-এর সাবেক সদস্য।
যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তরা হলেন- সৈনিক আসাদুজ্জামান নূর, সার্জেন্ট এনামুল কবীর এবং নূর হোসেনের সহযোগী মোর্তুজা জামান (চার্চিল), আলী মোহাম্মদ, মিজানুর রহমান দীপু, রহম আলী, আবুল বাশার, সেলিম, সানাউল্লাহ ছানা, ম্যানেজার শাহজাহান ও জামাল উদ্দিন।
বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত অপর ৯ জন হলেন- এএসআই আবুল কালাম আজাদ, এএসআই বজলুর রহমান, এএসআই কামাল হোসেন, করপোরাল মোখলেছুর রহমান, করপোরাল রুহুল আমিন, হাবিলদার নাসির উদ্দিন, কনস্টেবল বাবুল হাসান, কনস্টেবল হাবিবুর রহমান ও সৈনিক নুরুজ্জামান।
মন্তব্য