-->

‘সংসদ সদস্য’-র বদলে ‘সাংসদ’ না লিখতে প্রথম আলো’কে আইনি নোটিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
‘সংসদ সদস্য’-র বদলে ‘সাংসদ’ না লিখতে প্রথম আলো’কে আইনি নোটিশ

জাতীয় সংসদে নির্বাচিত সদস্যদের ক্ষেত্রে ‘সংসদ সদস্য’ শব্দের বদলে ‘সাংসদ’ শব্দ না লিখতে প্রথম আলো পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশকের প্রতি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। একইসঙ্গে সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ে প্রথম আলো পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে বিচারের মুখোমুখি করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আইন, স্বরাষ্ট্র, তথ্য ও সম্প্রচার সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।

পাশাপাশি প্রথম আলো পত্রিকা যাতে ‘সাংসদ’ শব্দটি ব্যবহার করতে না পারে সেজন্য পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।

‘সাংসদ’ শব্দটি অসাংবিধানিক উল্লেখ করে জনস্বার্থে মানবাধিকার সংগঠন ল’ অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশন (এলএলএফ) ট্রাস্টের পক্ষে তিন আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব, ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাওছার ও ব্যারিস্টার মো. মাজেদুল কাদের বুধবার এই নোটিশ দিয়েছেন।

নোটিশ পাওয়ার তিনদিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। অন্যথায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট আবেদন দাখিল করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।ব্যারিস্টার হুমায়ন কবির পল্লব জানান, আমাদের সংবিধানে ‘সাংসদ’ বলে কোনো শব্দ নেই। জাতীয় সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের পদটির নাম ‘সংসদ সদস্য’। অথচ দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকা অব্যাহতভাবে ‘সাংসদ’ শব্দ লিখে যাচ্ছে। তিনি বলেন, এবিষয়ে ২০১৭ সালে জাতীয় সংসদে স্পিকার ‘সাংসদ’ শব্দ না লিখতে রুলিংও দিয়েছেন। কিন্তু তারপরও সংবিধান লঙ্ঘন ও মাননীয় স্পিকারের রুলিং উপেক্ষা করে অব্যাহতভাবে ‘সাংসদ’ লেখা হচ্ছে ওই পত্রিকায়। এটা ফৌজদারি অপরাধ।

তিনি বলেন, ইচ্ছাকৃতভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। একারণে ‘সাংসদ’ শব্দটি না লিখতে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

দৈনিক প্রথম আলো সম্পাদক ও প্রকাশক, আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, তথ্য ও সম্প্রচার সচিব, সংস্কৃতি সচিব, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ও ঢাকার জেলা প্রশাসকের প্রতি এই আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।নোটিশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৫ নম্বর অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে জাতীয় সংসদ প্রতিষ্ঠিত। ১৯৭২ সালে প্রণীত ওই সংবিধানের ৬৫(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে-‘একক আঞ্চলিক নির্বাচনি এলাকাসমূহ হইতে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে আইনানুযায়ী নির্বাচিত তিন শত সদস্য লইয়া এবং এই অনুচ্ছেদের ৩ দফার কার্যকরতাকালে উক্ত দফায় বর্ণিত সদস্যদিগকে লইয়া সংসদ গঠিত হইবে; সদস্যগণ সংসদ-সদস্য বলিয়া অভিহিত হইবেন।’

নোটিশে বলা হয়, সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে ‘সংসদ সদস্য’ লেখা রয়েছে। অথচ দৈনিক প্রথম আলো বছরের পর বছর ধরে ‘সাংসদ’ শব্দ লিখে যাচ্ছে। পত্রিকাটিতে গত ২২ এপ্রিল ‘সাংসদ একরামুলের বাড়িতে ইফতারে যাওয়ায় যুবলীগ নেতাকে হাতুড়ি পেটা’; একইদিন ‘পুলিশের আশ্বাসে গাংনীতে সাংসদের হরতাল ও বিক্ষোভ কর্মসূচি প্রত্যাহার’; ১৯ এপ্রিল ‘যেকোনো অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির প্রথা বৈষম্যমূলক: সাংসদ শহীদুজ্জামান’; ১৭ এপ্রিল ‘চাঁদা না পেয়ে সরিষাবাড়িতে খালখনন বন্ধের অভিযোগ সাংসদের অনুসারীদের বিরুদ্ধে’; গতবছরের ১০ ডিসেম্বর ‘সাংসদ মুরাদকে ইউনিয়ন আ.লীগের সদস্য থেকে অব্যাহতি’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এভাবে সংসদ সদস্যদের ‘সাংসদ’ লেখা সংবিধানের ৭ এবং ১৫৩(৩) নম্বর অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

নোটিশে বলা হয়, ২০১৭ সালের ১৮ জুলাই ‘‘সংসদ-সদস্যই সাংবিধানিক পদ ‘সাংসদ’ নয়” শিরোনামে অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলানিউজ২৪.কম-এ একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, “ স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বাংলা নিউজকে বলেন, ‘আমাদের সংবিধানে সংসদ-সদস্যদের ‘সংসদ-সদস্য’ হিসেবে উল্লেখ করা আছে। অতএব সংবিধানে যেটা আছে সেটা লেখাই উত্তম। ‘সাংসদ’ শব্দটি যেহেতু সংবিধানে নেই, তাই এটি না লেখাই ভালো।। যদিও এ বিতর্কের অবসান ঘটাতে বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ স্পিকার থাকাকালে রুলিং দিয়ে সংসদকে অবহিত করেছিলেন, ‘সংসদ-সদস্যদের জন্য সংসদ-সদস্য শব্দটিই ব্যবহার করতে হবে। সাংসদ বলা বা লেখা যাবেনা।’ তারও আগে স্পিকার ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকারও রুলিং দিয়ে একই কথা উল্লেখ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, সংবিধানে যেভাবে লেখা আছে সেভাবেই এমপিদের পরিচয় হবে। যেহেতু সংবিধানে সংসদ-সদস্য কথাটি লেখা আছে, তাই সংবিধান অনুযায়ী সংসদ সদস্যই যথার্থ শব্দ।”

নোটিশে বলা হয়, অনুচ্ছেদ ৭ অনুযায়ী সংবিধান বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন। সংবিধানের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে ‘জনগণের অভিপ্রায়ের অভিব্যক্তি স্বরূপ এই সংবিধানের প্রাধান্য অক্ষুণ্ন রাখা, ইহার সংরক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধান আমাদের পবিত্র কর্তব্য।’

অনুচ্ছেদ ২১ অনুযায়ী সংবিধান ও আইন মান্য করা প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য।

সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সর্বমোট ৩৫০ জন সংসদ সদস্যের সমন্বয়ে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ। সংবিধান অনুযায়ী, জাতীয় সংসদের সদস্যদের কে ‘সংসদ সদস্য’ হিসেবে অভিহিত করতে হবে। ইহা একটি সাংবিধানিক পদ এবং সংসদ সদস্যদের অন্য কোন নামে সম্বোধন করা অসাংবিধানিক।

কিন্তু, বাংলাদেশের বহুল প্রচারিত দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকা দীর্ঘদিন ধরে ‘সংসদ সদস্য’ শব্দ ব্যবহার না করে ‘সাংসদ’ শব্দ ব্যবহার করে আসছে। এটি বাংলাদেশ সংবিধানের চরম লঙ্ঘন, অবমাননা এবং চরম ধৃষ্টতা ছাড়া কিছু নয়। সংবিধান লঙ্ঘন করা দণ্ডবিধির ১২৪(ক) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

 

মন্তব্য

Beta version