চ্যানেল আইয়ের মামলায় নারাজি

আদালত প্রতিবেদক
চ্যানেল আইয়ের মামলায় নারাজি
চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, বার্তাপ্রধান শাইখ সিরাজ

চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, বার্তাপ্রধান শাইখ সিরাজসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে দুই মামলায় পুলিশের ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি আবেদন করেছেন প্রতিবন্ধী অধিকারকর্মী বশির আল হোসাইন।

বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম তোফাজ্জল হোসেন বাদীর বক্তব্য শুনে আগামী ৮ জুন তারিখে মামলাটি সরাসরি আমলে নেবেন নাকি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠাবেন অথবা পুলিশের অপর কোনো সংস্থাকে পুনরায় তদন্তের দায়িত্ব দেবেন এ বিষয়ে আদেশ দেবেন বলে জানিয়েছেন।

বাদীপক্ষের আইনজীবী জীবনানন্দ চন্দ জয়ন্ত ভোরের আকাশকে জানান, গত বছরের ১১ আগস্ট ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর হাকিম আবু বকর ছিদ্দিকীর আদালতে পৃথক দুটি মামলা করেন প্রতিবন্ধী অধিকারকর্মী বশির আল হোসাইন।

আদালত শুনানি শেষে মামলা দুটি পিআইবিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দিয়েছিল। প্রথম মামলাটি করা হয় ‘ঘটনা সত্য’ নামের একটি নাটক নিয়ে, যা চ্যানেল আইয়ের ঈদুল আজহার আয়োজনে ২৩ জুলাই প্রচার করা হয়েছিল।

মামলার আসামিরা হলেন-অভিনেত্রী মেহজাবিন চৌধুরী, অভিনেতা আফরান নিশো, চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, বার্তাপ্রধান শাইখ সিরাজ, নাটকের চিত্রনাট্যকার মঈনুল সানু ও পরিচালক রুবেল হাসান।

দ্বিতীয় মামলাটি করা হয়েছে চ্যানেল আইয়ের আলোচনা অনুষ্ঠান ‘টু দ্য পয়েন্ট’ এর ১১ জুলাইয়ের পর্ব নিয়ে। যেখানে একজন আলোচকের কথায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে ‘নেতিবাচক ধারণা’র প্রকাশ করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ মামলার আসামিরা হলেন-ফরিদুর রেজা সাগর, শাইখ সিরাজ, অনুষ্ঠান পরিকল্পনাকারী জাহিদ নেওয়াজ খান, প্রযোজক রাজু আলিম, উপস্থাপক সোমা ইসলাম ও আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকা ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, ‘ঘটনা সত্য’ নাটকের সংলাপে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও তাদের বাবা-মা এবং পরিবারকে ‘ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।’

আর দ্বিতীয় মামলায় বাদীর অভিযোগ ‘টু দ্য পয়েন্ট’ অনুষ্ঠানে আর্জেন্টিনা বনাম ব্রাজিলের খেলা প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনের একটি মন্তব্য নিয়ে। অভিযোগ করা হয়েছে, ওই টকশোতে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ‘আমার নিজের ছেলেটারে প্রতিবন্ধী বানাইয়া রাইখা আমি এখন আর্জেন্টিনার ছেলে এবং ব্রাজিলের ছেলে নিয়া লাফাচ্ছি। আমরা ছোটবেলা থেকে ম্যারাডোনার ভক্ত, কিন্তু নিজের ছেলেটারে এভাবে প্রতিবন্ধী বানাবো?’

নারাজি আবেদনে বলা হয়, নাটকের শেষে একটি অডিওবার্তা সংযোজন করা হয়, যেখানে বলা হয়, 'পাপের ফল মানুষ কোনোভাবেই এড়াতে পারে না, প্রত্যেকেই তার নিজ কৃতকর্মের ফল ভোগ করতে হয়। কখনো-কখনো আমাদের কোনো অনৈতিক কাজ বাস্তবজীবনে চরম শাস্তি নিয়ে আসতে পারে, যা হয়তো জীবনব্যাপী ভোগ করতে হয়। আসামিরা এ ধরনের ভ্রান্ত ধারণা প্রচারের ফলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সমাজে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গীর মুখে পড়ে যা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কল্যাণে গৃহীত রাষ্ট্রীয় নীতির বিরদ্ধে। অথচ তদন্ত কর্মকর্তা এ বিষয় এড়িয়ে আইন আদালতের বিচারকের মতো তার মতামত রেখেছেন।

তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়নি মর্মে বলছেন, যা প্রতিবন্ধী ব্যক্তির প্রতি তদন্ত কর্মকর্তার নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী হিসাবে প্রতীয়মান হয়। যে কারনে নতুন করে বর্ধিত /অধিকতর /বিচারবিভাগীয় তদন্তের আদেশ হওয়া জরুরি।

নারাজি আবেদনের দরখাস্তে মামলাটি সরাসরি আমলে নেয়া অথবা অধিকতর তদন্তের পক্ষে আরো যুক্তি তুলে ধরা হয়।

মামলা দুটিতে গত ১৬ মার্চ তারিখে মামলার ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা পড়ে বলে আইনজীবী জয়ন্ত জানান।

মন্তব্য