-->
আপিল বিভাগের অভিমত

দুর্নীতির মামলায় একই বিষয়ে সাক্ষীকে দ্বিতীয়বার জেরা করার সুযোগ নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক
দুর্নীতির মামলায় একই বিষয়ে সাক্ষীকে দ্বিতীয়বার জেরা করার সুযোগ নেই
ফাইল ফটো

দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বলেছেন, আইনানুযায়ী দুর্নীতিসংক্রান্ত কোনো মামলায় সাক্ষীকে একবার কোনো বিষয়ে জেরা করা হলে তাকে আর সে বিষয়ে দ্বিতীয়বার অর্থাৎ নতুন করে জেরা করার সুযোগ নেই। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলায় এমন অভিমত দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলায় আপিল বিভাগের আগের দেওয়া আদেশের উদাহরণ টেনে এ অভিমত দেওয়া হয়েছে। এ অভিমতসংবলিত আপিল বিভাগের আদেশের কপি গতকাল রোববার প্রকাশিত হয়েছে।

এ বিষয়ে দুুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, ক্রিমিনাল ল’ অ্যামেন্টমেন্ট অ্যাক্টের সেকশন ৮ অনুযায়ী, দুদকের মামলাসহ বিশেষ আইনের মামলায় একই সাক্ষীকেই একই বিষয়ে পুনরায় জেরা করার সুযোগ নেই। অর্থাৎ একজন সাক্ষীকে যে বিষয়ে একবার জেরা করা হয়েছে, সে বিষয়ে দ্বিতীয়বার জেরা করা যাবে না।

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের মামলায় আপিল বিভাগের আজকের রায়ে সেটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। একজন সাক্ষীকে তিনটি প্রশ্নে জেরা করার সুযোগ দিয়ে হাইকোর্ট বিভাগ গত ২৫ জানুয়ারি আদেশ দেন। হাইকোর্টের এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে দুদক। দুদক তার আবেদনের সপক্ষে তিনটি যুক্তি তুলে ধরে।

দুদকের পক্ষ থেকে বলা হয়, ক্রিমিনাল ল’ অ্যামেন্টমেন্ট অ্যাক্টের সেকশন ৮ অনুযায়ী, একই সাক্ষীকেই একই বিষয়ে পুনরায় জেরা করার সুযোগ নেই। দ্বিতীয়তো এ মামলায় হাইকোর্টে দুদকের বক্তব্য না শুনেই আদেশ দেওয়া হয়েছে।  তৃতীয়ত, একই সাক্ষীকে একই বিষয়ে বারবার জেরার মধ্য দিয়ে বিচার বিলম্বিত করা হচ্ছে।

বিচারপতি মো. নূরুজ্জামানের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ উভয়পক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য শোনার পর গত ১৯ এপ্রিল হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত বাতিল করে আদেশ দেন। এ আদেশের ২১ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ কপি গতকাল প্রকাশিত হয়েছে।

খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও তার স্ত্রী বিলকিস আক্তারের বিরুদ্ধে ৯ কোটি ৫৩ লাখ ৯৫ হাজার ৩৮১ টাকা পাচারের অভিযোগে ২০১৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি দুদক বাদী হয়ে রমনা মডেল থানায় মামলা করে।

একই বছরের ১৪ আগস্ট অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। পরের বছর ১৯ আগস্ট এ মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিন নেন খন্দকার মোশাররফ। এ জামিন বাতিল চেয়ে দুদক আবেদন করলেও আদালত তার জামিন বহাল রাখেন। পরবর্তীতে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ মামলায় সাক্ষীগ্রহণ শুরু হয়।

এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফেরদৌস আহম্মেদ খানসহ ৯ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ফেরদৌস আহম্মেদ খান ৮ নম্বর সাক্ষী। এ ৮ নম্বর সাক্ষীকেই আবার জেরা করার অনুমতি চেয়ে গত বছর ২ ডিসেম্বর বিচারকি আদালতে আবেদন করেন খন্দকার মোশাররফ। কিন্তু ওইদিনই বিচারিক আদালত এ আবেদন খারিজ করে দেন।

এরপর এ আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করেন খন্দকার মোশাররফ। হাইকোর্ট গত ২৫ জানুয়ারি এক আদেশে সাক্ষীকে তিনটি বিষয়ে প্রশ্ন করার সুযোগ দিয়ে আদেশ দেন।

হাইকোর্টের এ আদেশের বিরুদ্ধে দুদকের করা আবেদনে শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ বাতিল করে দেন। আগামী ২৫ মে আপিল বিভাগের এ আদেশ নিম্ন আদালতে দাখিলের জন্য দিন ধার্য রয়েছে।

মন্তব্য

Beta version