-->
শিরোনাম

এ সপ্তাহে আত্মসমর্পণ করছেন না হাজি সেলিম

এম বদি-উজ-জামান
এ সপ্তাহে আত্মসমর্পণ করছেন না হাজি সেলিম

অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের মামলায় ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত জাতীয় সংসদের ঢাকা-৭ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য হাজি মো. সেলিম চলতি সপ্তাহে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করছেন না। আগামী ২২ কিংবা ২৩ মে তিনি নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন বলে জানা গেছে। তার প্রধান আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা চলতি সপ্তাহে ঢাকার বাইরে (সিলেট) থাকায় হাজি সেলিম আত্মসমর্পণ থেকে বিরত থাকছেন বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা ভোরের আকাশকে বলেন, চলতি সপ্তাহে হাজি মো. সেলিমের নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের পরিকল্পনা ছিল। তবে আমি বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাচনী প্রচারণায় সিলেট যাচ্ছি। শুক্রবার ঢাকায় ফিরব। এরপর আগামী রোববার বা সোমবার তিনি (হাজি সেলিম) আত্মসমর্পণ করবেন। ইচ্ছা করলে তিনি চলতি সপ্তাহেই আত্মসমর্পণ করতে পারেন। তবে আমার বিশ্বাস, আমাকে ছাড়া তিনি আত্মসমর্পণ করবেন না। অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের মামলায় ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানা বহাল রেখে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের কপি গত ২৫ এপ্রিল বিচারিক আদালতে পাঠানো হয়। রায়ে হাজি সেলিমের জামিননামা বাতিল করতে নিম্ন আদালতকে নির্দেশ দেওয়া হয়। ফলে রায়ের শর্তানুযায়ী আগামী ৩০ দিনের মধ্যে অর্থাৎ ২৫ মে’র মধ্যে হাজি সেলিমকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে।

আইনানুযায়ী, হাজি সেলিমকে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করতে হলে ২৫ মে’র মধ্যে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করা ছাড়া বিকল্প নেই। আর আপিল করা ছাড়া দেশের কোনো আদালতে জামিন আবেদন করারও সুযোগ নেই তার। এ কারণেই নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই হাজি সেলিম নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন বলে জানা গেছে। হাজি সেলিম নিজেও যেকোনো সময়ই আত্মসমর্পণ করতে প্রস্তুত আছেন।

এ মুহূর্তে তিনি আত্মসমর্পণ করলে তাকে বেশ কয়েকদিন কারাগারে কাটাতে হবে। কারণ তার প্রধান আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা নির্বাচনী প্রচারণায় ঢাকার বাইরে রয়েছেন। আইনজীবী গতকাল রোববার সিলেটে গেছেন। তিনি শুক্রবার ঢাকায় ফিরবেন। ফলে এর আগে আত্মসমর্পণ করলে সুপ্রিম কোর্টে তার জামিন আবেদন করা কষ্টকর হবে। আর এ ক’দিন জামিন আবেদন করতে না পারলে ততদিন তাকে কারাগারেই থাকতে হবে। এ কারণে আইনজীবী ঢাকায় ফেরা পর্যন্ত তিনি আত্মসমর্পণ করছেন না বলে জানা গেছে।

এর আগে আইনজীবী জানিয়েছিলেন, ১৬ মে অথবা এরপর যেকোনোদিন আত্মসমর্পণ করবেন হাজি সেলিম। কিন্তু আইনজীবী না থাকায় আত্মসমর্পণ পেছাচ্ছে। গতকাল ১৫ মে পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের নিয়মিত কার্যক্রম বন্ধ থাকায় তিনি আত্মসমর্পণ করেননি। পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সরকারি ছুটি, সুপ্রিম কোর্টের নিজস্ব ছুটি ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে সুপ্রিম কোর্টে টানা ১৭ দিনের ছুটি শুরু হয় গত ২৯ এপ্রিল থেকে। গতকাল ১৫ মে পর্যন্ত ছিল এ ছুটি। এ কারণে এ ক’দিন তার সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা বা জামিন আবেদন করার কোনো সুযোগ পাননি। আইনজীবীর পরামর্শে ১৬ মে’র পর যেকোনোদিন নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নেন।

যদিও হাজি সেলিমের হাতে আগামী ২৫ মে পর্যন্ত সময় আছে। তবে আত্মসমর্পণের আগেই গত ৩০ এপ্রিল থাইল্যান্ড সফরে যান হাজি সেলিম। সেখান থেকে গত ৫ মে দেশে ফেরেন। থাইল্যান্ডে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে আসেন। তার এ বিদেশ সফর নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে।

অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর হাজি সেলিমের বিরুদ্ধে লালবাগ থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ মামলায় ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল এক রায়ে দুদকের কাছে সম্পদের তথ্য গোপন করার দায়ে ৩ বছর এবং অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের দায়ে ১০ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়। উভয় সাজা একটির পর একটি কার্যকরের আদেশ থাকায় তার মোট ১৩ বছরের (১০ বছর ও ৩ বছর) কারাদণ্ড হয়। একইসঙ্গে ২০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের ২৫ অক্টোবর হাইকোর্টে আপিল করেন হাজি সেলিম। ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি হাইকোর্ট এক রায়ে হাজি সেলিমের সাজা বাতিল করে তাকে খালাস দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিল করে দুদক। আপিল বিভাগ ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি এক আদেশে হাইকোর্টের রায় বাতিল করেন এবং আবার হাইকোর্টে শুনানির নির্দেশ দেন। কিন্তু গত প্রায় ৬ বছরেও কোনো পক্ষই এ আপিলের ওপর শুনানির উদ্যোগ নেয়নি।

নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তাকে মারধর করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাজি সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিমকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপরই হাজি সেলিমের মামলার বিষয়ে দুদকের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এ অবস্থায় হাজি সেলিমের আপিলের ওপর হাইকোর্টে শুনানির জন্য উদ্যোগ নেয় দুদক।

এরই ধারাবাহিকতায় শুনানি শেষে গত বছর ৯ মার্চ রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। রায়ে শুধু অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের দায়ে ১০ বছর কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানার আদেশ বহাল রাখা হয়। আর সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হয় তাকে। এরও এক বছর পর গত ১০ ফেব্রুয়ারি পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। এ অবস্থায় গত ২৫ এপ্রিল রায়ের কপি পাঠানো হয় নিম্ন আদালতে। এদিকে সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগ থেকে খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন দাখিল করেছে দুদক।

মন্তব্য

Beta version