-->

দুই কন্যাশিশুকে বাইরে নেওয়ায় পিতার বিরুদ্ধে জাপানি মায়ের মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক
দুই কন্যাশিশুকে বাইরে নেওয়ায়
পিতার বিরুদ্ধে জাপানি মায়ের মামলা
ফাইল ফটো

দুই সন্তানকে বাসার বাইরে নিয়ে যাওয়ায় সন্তানদের পিতা বাংলাদেশি নাগরিক ইমরান শরীফের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ দাখিল করেছেন শিশু দুটির মা জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকো।

সোমবার (১৬ মে)  আপিল বিভাগে এ আবেদন দাখিল করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ আগামী ২৩ মে এ আবেদনের ওপর শুনানির দিন ধার্য করেছেন।

আবেদনটির পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি। তাকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।

অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির সাংবাদিকদের জানান, আপিল বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী কন্যাশিশু দুটি আপাতত তার মায়ের হেফাজতে বারিধারার বাসায় থাকবে। আর মা এরিকোর অনুমতি সাপেক্ষে পিতা ইমরান শরীফ তার মেয়েদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাবেন। কিন্তু এই নির্দেশনা অমান্য করে ইমরান শরীফ জোর করে শিশুদের মাঝেমধ্যে নিয়ে বাইরে যান। এ কারণে আমরা আদালত অবমাননার আবেদন করেছি।

আলোচিত জাপানি বংশোদ্ভূত বাংলাদেশি দুই কন্যাশিশু আপাতত তার মা জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকোর হেফাজতেই থাকবে বলে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি রায় দেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগ। হেফাজত নিয়ে ঢাকার পারিবারিক আদালতে বিচারাধীন মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শিশু দুটি মায়ের কাছেই থাকবে বলে রায়ে বলা হয়।

একইসঙ্গে পারিবারিক আদালতে পিতা ইমরান শরীফের করা মামলাটি তিন মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি আদালতের অনুমতি ছাড়া শিশু দুটিকে বাংলাদেশের বাইরে নেওয়া যাবে না বলে আদেশ দেওয়া হয়। আর মা এরিকোর অনুমতি সাপেক্ষে পিতা ইমরান শরীফ তার মেয়েদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাবেন। শিশু দুটিকে পিতার হেফাজতে রাখতে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করে এ রায় দেন আপিল বিভাগ। আদালত আদেশে বলেন, জাপান থেকে শিশু দুটিকে বাংলাদেশে আনা এবং পিতা ইমরান শরীফের হেফাজতে রাখা বেআইনি।

গত বছর ২১ নভেম্বর হাইকোর্ট জাপানি দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা বাংলাদেশে তাদের পিতা ইমরান শরীফের হেফাজতে থাকবে বলে আদেশ দেন।

আদেশে বলা হয়, মা সুবিধামতো সময়ে বাংলাদেশে এসে বছরে তিনবার ১০ দিন করে দুই সন্তানের সঙ্গে একান্তে সময় কাটাতে পারবেন। হাইকোর্টের এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন মা। এ আবেদনের ভিত্তিতে আপিল বিভাগের নির্দেশে গত বছর ১৩ ডিসেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত মায়ের হেফাজতেই রয়েছে কন্যাশিশু দুটি। তবে পিতা ইমরান শরিফও শিশুদের সঙ্গে দেখা করতে পারছেন।

গত বছর ১৮ জুলাই মা এরিকো শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশে এসে কন্যাশিশুদের নিজের জিম্মায় নিতে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। এ আবেদনে হাইকোর্টের আদেশের পর গত বছর ২২ আগস্ট রাতে শিশু দুটিকে পিতার বাসা থেকে উদ্ধার করে। পরবর্তী সময়ে আদালতের নির্দেশে মায়ের হেফাজতে দেওয়া হয়।

অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির জানান, ২০০৮ সালের ১১ জুলাই জাপানি আইন অনুসারে জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকো (৪৬) এবং বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক শরীফ ইমরানের (৫৮) বিয়ে হয়। তাদের সংসারে তিনটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। তাদের তিনজনকেই টোকিওর চফো সিটিতে অবস্থিত আমেরিকান স্কুল ইন জাপানে (এএসআইজে) ভর্তি করা হয়। সেখানেই তারা পড়ালেখা করছিল। কিন্তু পারিবারিক বিরোধের জেরে গত বছর ১৮ জানুয়ারি বিয়ে বিচ্ছেদের জন্য জাপানি আদালতে মামলা করেন এরিকো। কয়েক দিন পর ২১ জানুয়ারি বড় মেয়েকে নিজের সঙ্গে নিতে শরীফ ইমরান স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন। কিন্তু এরিকোর সম্মতি না থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ সে আবেদন খারিজ করে দেয়।

পরে বড় দুই মেয়েকে স্কুলবাস থেকে নামিয়ে নিজের ভাড়া বাসায় নিয়ে যান ইমরান। এরপর বাচ্চাদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের জন্য ওই বছরের ২৫ জানুয়ারি শরীফ ইমরান আইনজীবীর মাধ্যমে আবেদন করেন। কিন্তু এরিকো তা প্রত্যাখ্যান করেন।

এ অবস্থায় গত বছর ২৮ জানুয়ারি এরিকো টোকিওর পারিবারিক আদালতে তার বাচ্চাদের জিম্মায় রাখতে মামলা করেন। আদালত শিশুদের সঙ্গে পারিবারিকভাবে সাক্ষাতের আদেশ দেন। পরে ওই বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি ইমরান তার মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্টের আবেদন করেন এবং ১৭ ফেব্রুয়ারি নতুন পাসপোর্ট গ্রহণ করেন।

এরপর ইমরান বড় মেয়ে দুটিকে নিয়ে গত বছর ২১ ফেব্রুয়ারি দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। দেশে ফিরে সন্তান দুটিকে ঢাকায় স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। এরপর দুই শিশু নিজের জিম্মায় রাখতে ঢাকার আদালতে মামলা করেন।

মন্তব্য

Beta version