বাংলাদেশের আলোচিত দুর্নীতিবাজ প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদার এবং তার ৫ সহযোগীদের দেশটির কেন্দ্রীয় আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) গ্রেপ্তার করার পর তিন দিনের রিমান্ড শেষে আজ আদালতে হাজির করতে পারে। মূলত আর্থিক কেলেঙ্কারি, বেআইনিভাবে ভারতে অর্থ পাঠানো, বিদেশে অর্থ পাচার এবং আইনবহির্ভূত সম্পত্তি নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, সে বিষয়ে তদন্ত করছে ইডি। ভারতে আইনি কার্যক্রম শুরু করলেও বাংলাদেশকে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য জানায়নি ভারত। যে কারণে বিষয়টি নিশ্চিত হলেও পিকে হালদারের গ্রেপ্তারের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে পারছে না দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
তবে ভারতের গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, রিমান্ড চলাকালে পিকে হালদার অসুস্থবোধ করায় তাকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়। এ সময় তিনি সেদেশের সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, দেশে ফিরতে চান তিনি।
এদিকে কূটনৈতিক মাধ্যমে এবং ইডির বিবৃতিতে পিকে হালদার আটকের খবর নিশ্চিত হয়ে ইন্টারপোল বা ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশনকে বার্তা পাঠিয়েছে দুদক। যদিও সংস্থাটির পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য আসেনি। তবে আসামিদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য আইনগত প্রক্রিয়ার পাশাপাশি শিগগিরই আরো কিছু কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে বলে গতকাল সোমবার সাংবাদিক ব্রিফিংয়ে জানিয়েছে কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান।
জানা গেছে, ২০১৯ সালে পিকে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে প্রথমে ভারতে যান তারপর কানাডায় পাড়ি জমান। দীর্ঘ এ সময়ে তিন দেশের পাসপোর্ট সংগ্রহ করেন। তবে ভারতে অবস্থানের জন্য নাম পরিবর্তন করে শিব শঙ্কর হালদার পরিচয়ে একাধিক সরকারি পরিচয়পত্র, রেশন কার্ড, ভোটার আইডি, আয়কর শনাক্ত নম্বর, জাতীয় পরিচয় পত্রসহ অন্যান্য দরকারি কাগজপত্র জাল জালিয়াতির মাধ্যমে সংগ্রহ করে বসবাস শুরু করেন। একই কাজ করেছে তার অন্য সহযোগীরাও। দুদক জানায়, ইতোমধ্যে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে-বেনামে গৃহীত ও আত্মসাৎকৃত ঋণসংক্রান্তে আসামি প্রশান্ত কুমার হালদার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ৩৪টি পৃথক মামলা হয়েছে, যা বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলার চার্জশিট হয়েছে। এছাড়া পিকের দুর্নীতির কাণ্ডে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির নামে দুদকের আরো ৭টি মামলা রয়েছে।
পিকে হালদার বিষয়ে দুদকের বক্তব্য :
আসামি পিকে হালদারের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত প্রায় ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও মানিলন্ডারিং অপরাধের দায়ে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে ৮ জানুয়ারি ২০২০ সালে একটি মামলা করা হয়। মামলা তদন্তকালে আসামি পিকে হালদারকে গ্রেপ্তার করার চেষ্টা করা হলে জানা যায়, তিনি বিদেশে পলাতক আছেন। বিদেশে পলাতক থাকায় তাকে গ্রেপ্তার করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোলের সহযোগিতা চেয়ে পত্র প্রেরণ করা হয়। পরে ইন্টারপোলের চাহিদা অনুযায়ী, বিজ্ঞ আদালতে আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার আদেশ ইস্যু করার জন্য আবেদন করা হয় এবং বিজ্ঞ আদালত তার বিরুদ্ধে আদেশ জারি করে। বিজ্ঞ আদালতের ইন্টারপোল আদেশসহ আসামির আঙুলের ছাপ এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি ২০২১ সালের শুরুর দিকেই ইন্টারপোল বরাবর প্রেরণ করা হয়। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইন্টারপোল আসামির বিরুদ্ধে ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে রেড নোটিশ জারি করে। পরে নিয়মিত ইন্টার পোলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে আসামির অবস্থান ও তথ্যাদি জানার চেষ্টা করা হয়।
দুদক জানায়, আসামি কর্তৃক দেশের বিভিন্ন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ভারত, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিদেশে আর্থিক লেনদেনের তথ্য সংগ্রহ করে প্রেরণ করার জন্য বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বা বিএফআইউ বরাবর যথাযথ প্রক্রিয়ায় পত্র প্রেরণ করা হয়। ইতোমধ্যে নিকটবর্তী দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বারাসাতের অশোক নগর এলাকা হতে ভারতের কেন্দ্রীয় আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা ইডি কর্তৃক আসামি পিকে হালদারসহ তার আরো ৫ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে মর্মে তথ্য পাওয়া যায়। আসামিদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য আইনগত প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আসামি পিকে হালদারসহ ৬ জন গ্রেপ্তার হওয়ার তথ্য জানার পর ইতোমধ্যে পূর্বে জারিকৃত রেড এলার্ট ও দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক করা মামলার বরাতে বাংলাদেশে অবস্থিত ইন্টারপোল ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এসিবি) থেকে ভারতের দিল্লিতে অবস্থিত এনসিবিতে আসামিদের ভারত থেকে বাংলাদেশে ফেরত আনার জন্য ই-মেইল বার্ত প্রেরণ করা হয়েছে।
দুদকের ৩ পদক্ষেপ :
আসামিদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন শিগগিরই আরো কিছু কার্যক্রম গ্রহণ করবে। এর মধ্যে আসামিদের নিজের দেশে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য দ্রুত ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাসে পত্র প্রেরণ ও যোগাযোগ করা হবে; আসামিদের বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রেরণ করা হবে; আসামিদের কর্তৃক ভারতে পাচার করা অর্থ ও ব্যাংক হিসাবের তথ্য সংগ্রহের জন্য বিএফআইইউ বরাবর আবার পত্র প্রেরণ করা হবে।
মন্তব্য