ঢাকা পোস্টের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেদী হাসান ডালিমের লেখা ‘বাংলাদেশে মেডিয়েশন আন্দোলন এগিয়ে যাওয়ার গল্প’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন হয়েছে।
বুধবার (১৮ মে) সন্ধ্য়ায় রাজধানীর হোটেল পূর্বাণীতে এই মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল, বিশেষ অতিথি ছিলেন বিচারপতি আহমেদ সোহেল, ভোলার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শরীফ মো. সানাউল হক, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোতাহার হোসেন সাজু, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. মো. বশির উল্লাহ, ল রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি আশুতোষ সরকার, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল মেডিয়েশন সোসাইটির (বিমস) চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সমরেন্দ্র নাথ গোস্বামী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী পঙ্কজ কুমার কুণ্ডু।
বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় মামলাজট নিরসনে মেডিয়েশন বা মধ্যস্থতা শব্দটি বহুলভাবে আলোচিত হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে মেডিয়েশন পদ্ধতি অনুসরণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ‘বাংলাদেশে মেডিয়েশন আন্দোলন এগিয়ে যাওয়ার গল্প’ গ্রন্থটিতে মেডিয়েশন নিয়ে প্রাথমিক ধারণা,বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল মেডিয়েশন সোসাইটি (বিমস প্রতিষ্ঠা), প্রতিষ্ঠার পর থেকে মেডিয়েশন আন্দোলন এগিয়ে নিতে বিমসের কার্যক্রম, সারাদেশের বিচারকদের মেডিয়েশন বিষয়ে প্রশিক্ষণ, মেডিয়েশন আন্দোলন এগিয়ে নেওয়ার নেপথ্যের ব্যক্তিদের তুলে ধরা হয়েছে। বইটির শেষে ক্যাপশনসহ ছবির একটি অ্যালবাম স্থান পেয়েছে। বাংলাদেশ ল’টাইমস বইটি প্রকাশ করেছে।
বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল বলেন, আমি প্রায়ই বলি, মনে করুন আজ থেকে যদি সুপ্রিম কোর্টে নতুন কোনো মামলা না নেওয়া হয়। তাহলে বর্তমানে যে পরিমাণ মামলা রয়েছে। সেগুলো বর্তমান বিচারপতি দিয়ে নিষ্পত্তি করতে ১০ বছর লেগে যাবে। আমরা জানি সমস্ত দুর্নীতির মূলে হচ্ছে দেরি (Delay) হওয়া, যখনই মামলার জট লেগে যায়। তখন শুনানির জন্য মামলা উপরে আনতে এক ধরনের অপচেষ্টা করা হয়। তাতে দুর্নীতি হয়ে যায় এবং আমাদের আদালতে দুর্নীতির বিস্তার ঘটে। এর একমাত্র সমাধান মেডিয়েশন। মেডিয়েশন ছাড়া মামলার জট কমানো যাবে না।
তিনি আরও বলেন, আমাদের এখন মেডিয়েশনের দিকেই এগিয়ে আসতে হবে। এজন্য আমাদের প্রচুর পরিমাণে মেডিয়েটর তৈরি করতে হবে। আমরা যদি মেডিয়েশন ব্যবস্থার দিকে যেতে না পারি, তাহলে বর্তমানে আমাদের যে পরিমাণ বিচারক এবং বিচার সংশ্লিষ্ট জনবল আছে তাতে ১০ ভাগ মামলাও নিষ্পত্তি করা যাবে না।
তিনি বলেন, অনতিবিলম্বে একটি মেডিয়েশন আইন প্রণয়ন এবং দেশের প্রতিটি উপজেলায় মেডিয়েশন সেন্টার তৈরি করা প্রয়োজন।
বিচারপতি আহমেদ সোহেল বলেন, আমাদের দেশে মেডিয়েশন ব্যবস্থা কার্যকর করতে হলে মেডিয়েশন সেন্টার তৈরি করা প্রয়োজন। ভারতে ৪০ হাজার মেডিয়েশন সেন্টার আছে। আর আমাদের দেশে মেডিয়েশন সেন্টার নেই। আমাদের দেশের মেডিয়েশন নিয়ে আইন নেই। এ বিষয়ে একটি আইন হওয়া প্রয়োজন। এটা হলে খুবই সুবিধা হবে এবং মেডিয়েশনকে উদ্বুদ্ধ করা যাবে।
তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক মেডিয়েশন আইন বাংলাদেশে প্রয়োগ করতে চাইলে কিছুটা সমস্যা হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর কনভেনশনের সাথে জড়িত হলে আমরা আন্তর্জাতিক মেডিয়েশনের ক্ষেত্রে এক ধাপ এগিয়ে যাব।
বাংলাদেশ একটি স্পেসিফিক মেডিয়েশন আইন করা, সিঙ্গাপুর মেডিয়েশন কনভেনশনের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হওয়া এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে মেডিটেশন সেন্টার তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
মন্তব্য