-->
আরো এক মামলায় পিকে আসামি

পিকে হালদারকে ফেরাতে ভারত যাবে কমিটি

# সমন্বিত প্রচেষ্টায় সফল হব-দুদক # প্রত্যাবর্তন ও প্রত্যাবাসন আইনে ফেরত আনার উদ্যোগ # সহসায় আরো সভা করবে আন্তঃমন্ত্রণালয় # অল্প দিনের মধ্যে কয়েকটি মামলার চার্জশিট হবে

জুনায়েদ হোসাইন
পিকে হালদারকে ফেরাতে ভারত যাবে কমিটি

ভারতে গ্রেপ্তার হওয়া দেশের অন্যতম দুর্নীতিবাজ প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদারকে দেশে ফেরত আনতে জরুরি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করেছে কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও সংস্থার প্রতিনিধিরা। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য পর্যালোচনার পাশাপাশি পিকে হালদারকে দেশে ফেরাতে প্রয়োজনে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের একটি দল ভারত সফরে যাওয়ার প্রথমিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) জানিয়েছে। সংবাদ ব্রফিংয়ে দুদকের ভারপ্রাপ্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান এ খবর জানান। তবে পিকে হালদার গ্রেপ্তার প্রসঙ্গ এবং সেদেশে যাওয়ার বিষয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এখন পর্যন্ত দুদক কর্তৃপক্ষের কোনো যোগাযোগ হয়নি বলেও তিনি জানিয়েছেন।

এদিকে কাগুজে প্রতিষ্ঠান দিয়ে শিপিং লিমিটেডের নামে এফএএস (ফাস) ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে ৪৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় পিকে হালদারসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ সংস্থাটির সহকারী পরিচালক রাকিবুল হায়াত বাদী হয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার মামলাটি করেন। এ নিয়ে মোট ৩৫টি মামলায় পিকে হালদার আসামি করা হয়েছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট দুর্নীতি কাণ্ডে দুদকের আরো ৮টি মামলা রয়েছে।

ব্রিফিংয়ে ভারত সফর বিষয়ে দুদক ভারপ্রাপ্ত সচিব বলেন, ‘প্রয়োজন হলে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি ভারতে, তথা পশ্চিম বঙ্গে ভ্রমণ করবে। তবে এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। যদি প্রয়োজন পড়ে সফর দলে দুদক থাকবে। কারণ- পিকে হালদারের বিষয়ে দুদক একমাত্র প্রতিষ্ঠান, যারা মামলা করেছে। আর কোনো প্রতিষ্ঠান তার বিরুদ্ধে মামলা করেনি। সুতরাং দুদক যেহেতু মূল প্রতিষ্ঠান- সে হিসেবে থাকবে।’

তিনি আরো বলেন, আপনারা জানেন, প্রশান্ত কুমার হালদার ভারতে গ্রেপ্তার হয়েছেন, এ তথ্য পত্র-পত্রিকা এবং অন্যান্য মাধ্যমে জানার পর- তাকে দেশে ফেরাতে এবং তার পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), ইন্টারপোল অথরিটিকে আইনি ও ত্বরিত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য তাদের অনুরোধ জানাই। এটি গত পরশু (মঙ্গলবার) দিনের কথা। সেই অনুরোধের ভিত্তিতে আজকে (বৃহস্পতিবার) সকালে জরুরিভাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা ডাকে। সেখানে আইন মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এবং ইন্টারপোলসহ (বাংলাদেশ মাধ্যম) সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সবাই উপস্থিত ছিলেন। সভায় বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা হয়েছে এবং আসামি প্রত্যাবর্তন ও প্রত্যাবাসন আইন নামে যে আইনটি বর্তমানে বাংলাদেশে বিদ্যমান রয়েছে, সেন আইন-বিধির ধারা ব্যবহার করে, কীভাবে তাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনতে পারি, সে বিষয়ে কার্যকর কি কি উদ্যোগ নেওয়া যায় সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

সভায় ভারত থেকে তাকে (পিকে) ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের যেসব প্রমাণ ইত্যাদি দরকার আছে- সেগুলো সংগ্রহ এবং সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত হয়। সে প্রক্রিয়া আমরা সহসায় শেষ করব। এছাড়া কূটনৈতিক এবং অন্যান্য যেসব মাধ্যম ব্যবহার করা যায় তা’ ব্যবহার করে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করব।

ভারপ্রাপ্ত সচিব বলেন, দুদক এখানে একা নয়, আমাদের যেসব মন্ত্রণালয় এবং অন্যদের নাম বললাম তাদের সমন্বিত প্রয়াশের মাধ্যমে সহসায় এতে সফলকাম হব।

এ সময় বিএফআইইউতে চিঠির প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দুদকের মুখপাত্র বলেন, আমাদের যে মামলাগুলো হয়েছে এবং তার মধ্যে সম্পদের যে মামলায় চার্জশিট দেয়া হয়েছে, সেখানে ভারতে অল্প পরিমাণ সম্পদের তথ্য ছিল। তা নেওয়া হয়েছে। বাকি তথ্যগুলো যদি আমরা পাই, সেগুলোসহ সাপ্লিমেন্টারি (সম্পূরক) চার্জশিট দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করব। সে জন্য বিএফআইইউ’তে চিঠি দিয়েছি। তারা তথ্যগুলো সংগ্রহ করে আমাদের দেবে। ইতোমধ্যে ভারতে ইন্টারপোল অথরিটির সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করেছি। চিঠি দিয়েছি। এর আগে রেড এলার্ট রয়েছে, তার ভিত্তিতে যাতে পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সে বিষয়ে আমরা ইন্টারপোলকে চাপ দেব।

এ সময় সাংবাদিকরা জানতে চান, চার্জশিটভুক্ত যেসব আসামি ইতোমধ্যে দেশে গ্রেপ্তার আছেন, তাদের বিচার কাজের জন্য পিকে হালদারের দেশে উপস্থিতির কোনো প্রয়োজন আছে কিনা- এ প্রশ্নের জবাবে দুদক ভারপ্রাপ্ত সচিব বলেন, তার স্বশরীরে উপস্থিতি অত্যাবশ্যক নয়। যেহেতু আমাদের মামলাগুলো তথ্যনির্ভর। তথ্য প্রমাণ পেয়েছি বলেই আমরা মামলা করেছি এবং পরে আমরা চার্জশিট দিয়েছি।

দুদকের তথ্যে ভিত্তিতেই কি পিকে হালাদার ভারতে আটক হয়েছেনÑ এ প্রশ্নে বলেন, আবারো বলছি, দুদকই একমাত্র প্রতিষ্ঠান পিকে হালদারের বিরুদ্ধে মামলা করে চার্জশিট দিয়েছে। তার সহযোগিরাসহ ৩৫টি মামলা করা হয়েছে। তার কিছু মামলার অল্প দিনের মধ্যে চার্জশিট হবে। একইভাবে এর আগে গ্রেপ্তারি পরওয়ান ও রেড এলার্ট জারি করা দুদকের পদক্ষেপ। আমরা মনে করি, দুদকের এসব পদক্ষেপের একটি প্রতিফলন ভারতে গ্রেপ্তারের পেছনে রয়েছে।

পরবর্তী সময়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা বা কমিটির সভা কবে হবেÑ এ প্রসঙ্গে দুদক মুখপাত্র জানান, আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা আজকেই প্রথম হলো, সহসায় আরো কয়েবার বসব। এতে কাজের গতি প্রকৃতি আরো সুনির্দিষ্ট করা যাবে।

মন্তব্য

Beta version