-->

সংসদ সদস্য লেখা শুরু করায় ‘সাংসদ’ শব্দের ব্যবহার নিষিদ্ধ চেয়ে রিট আবেদন প্রত্যাহার

প্রথম আলো পত্রিকা ভুল স্বীকার করায় রিট আবেদন প্রত্যাহার করা হয়েছে: ব্যারিস্টার পল্লব

নিজস্ব প্রতিবেদক
সংসদ সদস্য লেখা শুরু করায় ‘সাংসদ’ শব্দের ব্যবহার নিষিদ্ধ চেয়ে রিট আবেদন প্রত্যাহার
প্রতীকী ছবি
জাতীয় সংসদের নির্বাচিত সদস্যদের ক্ষেত্রে ‘সংসদ সদস্য’ শব্দের পরিবর্তে ‘সাংসদ’ শব্দ না লেখার নির্দেশনা চেয়ে করা রিট আবেদন প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।
 
দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকা ভুল স্বীকার করায় এবং সংসদ সদস্য লেখা শুরু করায় রিট আবেদন প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রিট আবেদনকারী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব।
 
এ কারণে রিট আবেদনটি উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে আজ রোববার (২২মে) আদেশ দিয়েছেন বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
জাতীয় সংসদের নির্বাচিত সদস্যদের ক্ষেত্রে ‘সংসদ সদস্য’ শব্দের পরিবর্তে ‘সাংসদ’ শব্দ না লেখার নির্দেশনা চেয়ে গত ১৬ মে রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের তিন আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব, ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাওছার ও ব্যারিস্টার মো. মাজেদুল কাদের।
 
মানবাধিকার সংগঠন ল’ অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশন (এলএলএফ) ট্রাস্টের পক্ষে ওই তিন আইনজীবী রিট আবেদন করেন।
 
রিট আবেদনে অসাংবিধানিক শব্দ ‘সাংসদ’ লেখার মাধ্যমে সংবিধান লঙ্ঘনের অপরাধে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশককে বিচারের মুখোমুখী করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়।
 
এই রিট আবেদনের ওপর শুনানিকালে গত ১৮ মে প্রথম আলো পত্রিকার পক্ষে ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান হাইকোর্টকে জানান, এ বিষয়ে আইনি নোটিশ পাঠানোর পর থেকে আর ‘সাংসদ’ শব্দ লেখা হচ্ছে না।
 
এরপর থেকে সংসদ সদস্য লেখা হচ্ছে। এ অবস্থায় রোববার রিট আবেদনের পক্ষে ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব আদালতে বলেন, যেহেতু পত্রিকাটি ভুল স্বীকার করেছে।
 
আর সংসদ সদস্য লিখছে। তাই রিট আবেদনটি নটপ্রেস (উত্থাপিত হয়নি) করতে চাই। এরপর আদালত আদেশ দেন।
 
রিট আবেদনে বলা হয়, আমাদের সংবিধানে ‘সাংসদ’ বলে কোনো শব্দ নেই। জাতীয় সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের পদটির নাম ‘সংসদ সদস্য’।
 
সংবিধানের ৬৫ নম্বর অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে ৩৫০ জন সংসদ সদস্যের সমন্বয়ে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ প্রতিষ্ঠিত।
 
১৯৭২ সালে প্রণীত ওই সংবিধানের ৬৫(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে-‘একক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকাসমূহ হইতে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে আইনানুযায়ী নির্বাচিত তিন শত সদস্য লইয়া এবং এই অনুচ্ছেদের ৩ দফার কার্যকরতাকালে উক্ত দফায় বর্ণিত সদস্যদিগকে লইয়া সংসদ গঠিত হইবে; সদস্যগণ সংসদ-সদস্য বলিয়া অভিহিত হইবেন।’
 
সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে ‘সংসদ সদস্য’ লেখা রয়েছে। ইহা একটি সাংবিধানিক পদ এবং সংসদ সদস্যদের অন্য কোন নামে সম্বোধন করা অসাংবিধানিক।
 
এ বিষয়ে ২০১৭ সালে জাতীয় সংসদে স্পিকার ‘সাংসদ’ শব্দ না লিখতে রুলিংও দিয়েছেন।
 
অথচ দৈনিক প্রথম আলো সংবিধান লঙ্ঘন ও মাননীয় স্পিকারের রুলিং উপেক্ষা করে বছরের পর বছর ধরে ‘সাংসদ’ শব্দ লিখে যাচ্ছে।
 
প্রথম আলো পত্রিকা অব্যাহতভাবে অসাংবিধানিক "সাংসদ" শব্দ ব্যবহার করে দেশ বিদেশের মানুষের কাছে ভুল বার্তা দিচ্ছে।
 
এটি বাংলাদেশ সংবিধানের চরম লঙ্ঘন, অবমাননা এবং চরম ধৃষ্টতা ছাড়া কিছু নয়। যা সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭ক (১) (খ) অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ।
 
রিট আবেদনে বলা হয়, পত্রিকাটিতে গত ২২ এপ্রিল ‘সাংসদ একরামুলের বাড়িতে ইফতারে যাওয়ায় যুবলীগ নেতাকে হাতুড়ি পেটা’; একইদিন ‘পুলিশের আশ্বাসে গাংনীতে সাংসদের হরতাল ও বিক্ষোভ কর্মসূচি প্রত্যাহার’; ১৯ এপ্রিল ‘যেকোনো অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির প্রথা বৈষম্যমূলকঃ সাংসদ শহীদুজ্জামান’; ১৭ এপ্রিল ‘চাঁদা না পেয়ে সরিষাবাড়িতে খালখনন বন্ধের অভিযোগ সাংসদের অনুসারীদের বিরুদ্ধে’; গতবছর ১০ ডিসেম্বর ‘সাংসদ মুরাদকে ইউনিয়ন আ.লীগের সদস্য থেকে অব্যাহতি; শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
 
যা সংবিধানের ৭ এবং ১৫৩(৩) নম্বর অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ঠ লঙ্ঘন।
 
রিট আবেদনে বলা হয়, অনুচ্ছেদ ২১ অনুযায়ী সংবিধান ও আইন মান্য করা প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য। সেই দায়িত্ব পালনে প্রথম আলো ব্যর্থ হয়েছে।
 
ইতিপূর্বে আইনি নোটিশ পাঠিয়ে এসব বিষয় উল্লেখ করে "সাংসদ" শব্দ ব্যবহার না করে "সংসদ সদস্য" শব্দ ব্যবহারের জন্য প্রথম আলোকে অনুরোধ করা হয়েছে।
 
একই সঙ্গে প্রথম আলোর সম্পাদক এবং প্রকাশককে অসাংবিধানিক শব্দের ব্যবহার এর জন্য জাতির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল।
 
এ বিষয়ে পাঠকদের উদ্দেশ্যে ব্যাখ্যা প্রদানের অনুরোধ করা হয়েছিল।
 
এ ছাড়া প্রথম আলো যাতে অসাংবিধানিক শব্দ "সাংসদ" ব্যবহার না করে সেই বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে অপর বিবাদিদের অনুরোধ করা হয়েছিল।
 
প্রথম আলোর বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে অপর বিবাদীদের প্রতি অনুরোধ করা হয়েছিল।  কিন্তু তারা এসব বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
 
উল্লেখ্য, এর আগে গত ২৭ এপ্রিল একই বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে ১০ বিবাদীর কাছে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছিলেন ওই তিন আইনজীবী।
 
নোটিশ পাওয়ার তিনদিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় গতকাল রিট আবেদন করা হয়।
 
রিট আবেদনে দৈনিক প্রথম আলো সম্পাদক ও প্রকাশক, আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, তথ্য ও সম্প্রচার সচিব, সংস্কৃতি সচিব, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক ও ঢাকার জেলা প্রশাসককে বিবাদী করা হয়।
 
 
 
 
 

মন্তব্য

Beta version