ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) অবসরপ্রাপ্ত সচিবদের শতভাগ আনুতোষিক প্রদান এবং নিয়মিত উৎসব ভাতা প্রদান না করা কেন বেআইনী ঘোষনা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। চার সপ্তাহের মধ্যে স্থানীয় সরকার সচিব, অর্থ সচিবসহ ৩১ জন বিবাদীকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার ( ২৪ মে) বিচারপতি মোঃ মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি খিজির হায়াতের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব। তাকে সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার মোঃ মাজেদুল কাদের।
কুমিল্লা জেলার নাঙ্গলকোট থানার ঢালুয়া ইউনিয়ন পরিষদের অবসরপ্রাপ্ত সচিব মোঃ ইউসুফ ভূঁইয়াসহ ১৪৭ জন অবসরপ্রাপ্ত ইউনিয়ন পরিষদের সচিবের প্রায় ১০ কোটি টাকা বকেয়া আনুতোষিক এবং তাদেরকে বিধিমালা অনুযায়ী নিয়মিত উৎসব ভাতা প্রদানের নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে এ রুল জারি করেন আদালত।
এর আগে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আইনী নোটিশ পাঠিয়েছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব। নোটিশ পাওয়ার পরও এই বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ না নেয়ায় রিট আবেদন দাখিল করা হয়।
রিট আবেদনে বলা হয়, ইউনিয়ন পরিষদের সচিবগণ অবসর গ্রহনকালে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী গ্রস পেনশনের ৫০% বাধ্যতামূলক সমর্পণ করে তার বিপরীতে আনুতোষিক পাওয়ার অধিকারী। কিন্তু রিট আবেদনকারীরা গ্রস পেনশনের বাকি ৫০% সমর্পণ করা সত্ত্বেও কোনো ধরনের আনুতোষিক পাননি। নিয়ম অনুযায়ী সমর্পিত বাকি ৫০% এর বিপরীতে তারা উক্ত টাকার অর্ধেক হারে এককালীন আনুতোষিক প্রাপ্য হবেন। কিন্তু কোনো সুস্পষ্ট কারণ ছাড়াই তাদের বাকি আনুতোষিক আটকে দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। যা শুধু বেআইনি নয়, বরং অবসরপ্রাপ্ত ইউনিয়ন পরিষদ সচিবদের সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক অধিকারের চরম লংঘন এবং বৈষম্যমূলক।
রিট আবেদনে আরো বলা হয়, ২০১১ সালের স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) কর্মচারী চাকুরী বিধিমালা অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদের সচিবগণ পরিষদের নিজস্ব কর্মচারী। বিধিমালা অনুযায়ী যেহেতু তারা অন্যান্য সরকারি কর্মচারীর ন্যায় মাসিক পেনশন এর আওতাভুক্ত নয় সেহেতু গ্রস পেনশনের সমস্ত টাকা সরকারের নিকট সমর্পণ করে গ্রস পেনশনের সমুদয় পরিমান থেকে মোট ৭৫% এককালীন আনুতোষিক পাওয়ার বিধান রয়েছে। এছাড়া ২০১১ সালের বিধিমালা অনুযায়ী তাদেরকে জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী বেতন-ভাতা প্রদান এবং উৎসব ভাতা দেয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু তাদের সম্পূর্ণ আনুতোষিক প্রদানে অস্বীকৃতি এবং কোনো ধরনের উৎসব ভাতা প্রদান না করা আইনের সুস্পষ্ট লংঘন।
এছাড়াও ১৯৯৪ সালের ইউনিয়ন পরিষদ কর্মচারী (ভবিষ্যৎ তহবিল এবং আনুতোষিক) বিধিমালা অনুযায়ী সচিবগণ সরকারি কর্মচারীর ন্যায় পেনশন, আনুতোষিক এবং উৎসব ভাতা পাওয়ার হকদার। আইনের সুস্পষ্ট বিধান থাকা সত্ত্বেও অবসরপ্রাপ্ত সচিবদেরকে সম্পূর্ণ আনুতোষিক এবং কোনো প্রকার উৎসব ভাতা প্রদান না করা বেআইনি, নিপীড়নমূলক এবং অযৌক্তিক। আনুতোষিক এবং উৎসব ভাতা প্রাপ্তি একজন সরকারি অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারির ন্যায্য অধিকার যা থেকে কোনোভাবেই তাকে বঞ্চিত করা যাবে না। অথচ সারাদেশে হাজার হাজার অবসরপ্রাপ্ত ইউনিয়ন পরিষদের সচিবদেরকে তাদের আইনানুগ অবসরকালীন সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
মন্তব্য