-->

সীতাকুণ্ড ট্র্যাজেডি: নিহতের পরিবারকে ২ কোটি, আহতদের ৫০ লাখ টাকা করে দিতে আইনি নোটিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
সীতাকুণ্ড ট্র্যাজেডি: নিহতের পরিবারকে ২ কোটি, আহতদের ৫০ লাখ টাকা করে দিতে আইনি নোটিশ
সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণ (ফাইল ফটো)
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে কন্টেইনার ডিপোতে আগুনে নিহতের প্রত্যেকের পরিবারকে ২ কোটি টাকা এবং আহতদের ৫০ লাখ টাকা করে দিতে সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
 
মানবাধিকার সংগঠন ল’ অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশনের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. হুমায়ন কবির পল্লব ও ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাওসার আজ বুধবার (৮ জুন) এই নোটিশ পাঠিয়েছেন।
 
একইসঙ্গে ওই দুর্ঘটনায় হাইকোর্ট বিভাগের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাওয়া হয়েছে নোটিশে।
 
শিল্প সচিব, বাণিজ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক (ডিজি), চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক, স্মার্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বিএম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং জয়েন্ট স্টক কোম্পানির রেজিস্ট্রারকে এই নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
 
এই নোটিশ পাওয়ার তিনদিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। অন্যথায় হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হবে বলে নোটিশে বলা হয়েছে।
 
নোটিশে ভবিষ্যতে এরকম হতাহতের ঘটনা এড়াতে এই ধরণের কেমিক্যাল বিস্ফোরণের ঘটনায় লাগা আগুন নেভাতে ফায়ার ফাইটারদের প্রয়োজনীয় অত্যাধুনিক সরঞ্জাম সরবরাহ করা, এরকম বিস্ফোরক ও কেমিক্যাল গুদামজাত করার জন্য স্থান নির্ধারণ করে দেওয়ার জন্য পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।
 
ব্যারিস্টার হুমায়ন কবির পল্লব জানান, গত ৪ জুন শনিবার রাতে চট্টগ্রামের সিতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ আগুনে প্রায় অর্ধশত নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছেন।
 
অনেকেই মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। খবরে প্রকাশ স্মার্ট গ্রুপের বিএম কন্টেইনার ডিপো নামক কোম্পানীর দাহ্য রাসায়নিক পদার্থ যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট ঘোষণা ছাড়াই মজুত করার কারণে আগুনে হতাহতের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
 
ফায়ার সার্ভিসের নিকট মজুতকৃত রাসায়নিক পদার্থগুলোর প্রয়োজনীয় তথ্য না থাকায় অনেক উদ্ধারকর্মী নিহত এবং আহত হয়েছেন।
 
বাংলাদেশে এর আগেও তাজরিন গার্মেন্টস কারখানায় আগুন, রানা প্লাজা ধ্বসে হাজারো প্রাণ ঝড়লে পোশাক কারখানায় বিদেশী ক্রেতার চাপে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থায় অগ্রগতি হলেও অন্যান্য কারখানায় সঠিক অগ্নি নির্বাপণ ব্যাবস্থা গড়ে ওঠেনি।
 
ফলে এসব কারখানায় নিয়মিতভাবেই অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটছে। সাম্প্রতিক সময়ে সিজান জুস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে বহু হতাহত হয়েছে।
 
বিদেশি ক্রেতাদের কোনো চাপ না থাকার কারণে এদিকে সংশ্লিষ্ট কারো নজর নেই। তা ছাড়া অগ্নি নির্বাপক বাহিনীর প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবে রাসায়নিক দাহ্য পদার্থে সৃষ্ট আগুন নিয়ন্ত্রণে অক্ষম।
 
নোটিশে সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন বিশেষজ্ঞ ব্যাক্তিদের সমন্বয়ে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা বলা হয়েছে।
 
বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩২ অনুযায়ী জীবনের অধিকার একটি মৌলিক অধিকার। ফলে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩২ সরাসরি লঙ্ঘন করেছেন।
 
গত ৪ জুন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে কন্টেইনার ডিপোতে সংঘটিত দুর্ঘটনার পর প্রশাসন থেকে বলা হয়েছিল ৪৯ জন নিহত হয়েছে।
 
পরেরদিন প্রশাসন থেকে বলা হয়, ৪১ জন নিহত হয়েছে। প্রশাসনের এই বক্তব্যের পরে গত দুইদিনে মৃতের সংখ্যা বেড়েছে।
 
গতকাল পর্যন্ত ৪৪ জন মারা গেছেন। এদের মধ্যে ৯জন ফায়ার ফাইটার রয়েছে। এ ছাড়া আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশংকাজনক।
 
এই ঘটনায় এরমধ্যে বেশ কয়েকটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে নিহতের প্রত্যেকের পরিবারকে দুই লাখ টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
 
আর বিএম গ্রুপের পক্ষ থেকে সাধারণ নিহতের প্রত্যেকের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা করে এবং নিহত ফায়ার ফাইটারদের প্রত্যেকের পরিবারকে ১৫ লাখ টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা এসেছে।
 
এ ছাড়াও আহতদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা দিতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ব্যক্তিদের চিকিৎসার তদারকি করছেন প্রধানমন্ত্রী নিজে। 
 
 
 
 
 
 
 

মন্তব্য

Beta version