একটি জাহাজ থেকে কি পরিমান পিতল সংগ্রহ করা হয় তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। তিনমাসের মধ্যে তা জানাতে বাংলাদেশ শিপ ব্রেকিং এবং শিপ রিসাইক্লিং বোর্ডের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আদালত অন্তবর্তীকালীন নির্দেশনার পাশাপাশি রুল জারি করেন।
বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এ নির্দেশনা দেন। মানবাধিকার সংগঠন ল’ অ্যান্ড লাইভ ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট-এর পক্ষে করা এক রিট আবেদনে এ আদেশ দেয়া হয়েছে। রিট আবেদনকারীপক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব। তাকে সহযোগিতা করেন আইনজীবী মোহাম্মদ ইমরুল কায়েস খান ও নাঈম সরদার। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেহনারেল তুষার কান্তি রায়।
রুলে জাহাজভাঙা শিল্পের পিতল পাচার রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না; জাহাজ ভাঙা শিল্পে ১৮ বছরের নিচে শ্রমিক নিয়োগ কেন অবৈধ নয় এবং শিল্প-কারখানার শ্রমিকদের দুর্ঘটনা রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কেন নিদর্েূশ দেয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে। এছাড়াও শ্রম আইন-২০০৬ এর ৯৯ ধারা অনুযায়ী শ্রমিকদের গ্রুপ বিমার আওতায় আনতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, প্রত্যেকটি জাহাজ থেকে পাওয়া পিতলের পরিমান নিবন্ধন ও শ্রমিকদের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।
বাণিজ্য, শিল্প, শ্রম, স্বরাষ্ট্র ও পরিকবার কল্যান সচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের(এনবিআর) চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান এবং শিপ ব্রেকিং এবং শিপ রিসাইক্লিং বোর্ডের মহাপরিচালককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
জাহাজভাঙা শিল্পের পিতল পাচার প্রতিরোধ এবং এরসঙ্গে যুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা চেয়ে গত ৩১ অক্টোবর রিট আবেদন করা হয়। এই রিট আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেন আদালত।
ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব বলেন, বাংলাদেশে পিতলের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলছে। পিতল দিয়ে তৈরি হচ্ছে দামি আসবাব, বাথরুম ফিটিংস তথা দৈনন্দিন ব্যবহার্য অনেক সামগ্রী। পিতলের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে হাজার হাজার শিল্প প্রতিষ্ঠান। এসব পিতলের একটি বড় অংশের যোগান আসে আন্তর্জাতিক দরপত্রে ক্রয়কৃত বিভিন্ন জাহাজ থেকে শিপব্রেকিং ইয়ার্ডে সংগৃহীত পিতল থেকে। বাকিটা সংগৃহীত হয় স্থানীয়ভাবে।পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পিতলের ব্যাপক চাহিদা থাকায় এসব পিতল পাচার হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের পিতল নির্ভর কারখানাগুলোকে বেশিদামে ভারত এবং অন্যদেশ থেকে পিতল আমদানি করতে হয়। ফলে আমাদের দেশে পিতল সামগ্রির মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। একই সাথে পিতল নির্ভর শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধের উপক্রম হচ্ছে। যা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির উপর প্রভাব ফেলছে। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী পিতল পাচারের একটি সিন্ডিকেট নিজেরা লাভবান হয়ে পিতল পাচার করে দেশের ক্ষতি করছে যা বে আইনী এবং কোনভাবেই কাম্য নয়।
আইনজীবী আরো বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় শিল্পনীতি ২০২২ অনুযায়ী দেশীয় শিল্পের স্বার্থ সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশ করার কথা বলা হয়েছে। কাজেই দেশীয় শিল্পের স্বার্থ সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশে অবশ্যই জনস্বার্থ রক্ষায় পিতল পাচার বন্ধ করতে হবে। এছাড়া শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড গুলোতে শিশু শ্রমিক নিয়োগ করা হয় যা আইনসংগত নয়। জাহাজ ভাংা শিল্প কারখানায় প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার অপ্রতুলতা এবং নিরাপত্তা সামগ্রীর অভাবে প্রতিবছর বহু সংখ্যক শ্রমিক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে হতাহত হন। যার তেমন কোন প্রতিকার নেই। আইনে সুস্পষ্ট ভাবে বাধ্যতামূলকশ্রমিকদের জন্য বীমা করার বিধান থাকলেও সেটা করা হচ্ছে না।
এর আগে জাহাজভাঙা শিল্পের পিতল পাচার প্রতিরোধ এবং এরসঙ্গে যুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে গত ১৯ জুন সংশ্লিষ্টদের প্রতি আইনি নোটিশ পাঠান ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব। নোটিশ পাওয়ার ৭ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অনুরোধ করা হয়। এই নোটিশের জবাব না পেয়ে রিট আবেদন করা হয়।
ভোরের আকাশ/আসা
মন্তব্য