-->
শিরোনাম
হাইকোর্টের রায় স্থগিত

চেক ডিজঅনারের মামলা করতে পারবে ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক
চেক ডিজঅনারের মামলা করতে পারবে ব্যাংক

খেলাপী ঋণ আদায়ে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান চেক ডিজঅনারের (চেক প্রত্যাখ্যান) মামলা করতে পারবে না বলে হাইকোর্টের দেয়া রায় দুই মাসের জন্য স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। ফলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেক ডিজঅনারের মামলা করতে বাধা কাটল। তবে আপিল বিভাগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি মোহাম্মদ আলীর জামিন বহাল রেখেছেন।

 

প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে আপিল বিভাগ বৃহষ্পতিবার এ আদেশ দেন। ব্র্যাক ব্যাংকের আবেদনের ওপর শুনানি শেষে এ আদেশ দেন আপিল বিভাগ। ব্র্যাক ব্যাংকের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও মিনহাজুল হক চৌধুরী। অপরপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট এজে মোহাম্মদ আলী ও অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল বাকী।

 

এদিকে চেক ডিজঅনারের মামলা করতে না পারা সংক্রান্ত বিষয়ে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। রায়ে বলা হয়েছে, ঋণ মঞ্জুরের সঙ্গে সঙ্গে ওই ঋণের অনুমোদনপত্র (স্যাংশন লেটার) সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। এমন অবস্থায় এই রায়ের বিরুদ্ধে ব্র্যাক ব্যাংক আপিল করার অনুমতি চেয়ে (লিভ টু আপিল) আবেদন করবে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকটির আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন।

 

কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান খেলাপী ঋণ আদায়ের জন্য কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনারের (চেক অনাদায়ী) মামলা করতে পারবে না বলে গত ২৩ নভেম্বর রায় দেন বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ। ব্র্যাক ব্যাংকের চেক ডিজঅনার মামলার আসামি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলীর করা আপিল আবেদনের শুনানি শেষে এ রায় দেন হাইকোর্ট। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেছিল ব্র্যাক ব্যাংক।

 

এদিকে হাইকোর্টের ১৩ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় গতকাল প্রকাশিত হয়েছে। ওই রায়ে বলা হয়েছে, ঋণের বিপরীতে জামানত হিসেবে গৃহীত চেক বিনিময়যোগ্য দলিল নয়। একারণে জামানত হিসেবে নেয়া চেক দিয়ে ‘চেক ডিজঅনার’ মামলা করা যাবে না। যদি কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান এ ধরণের মামলা করতে চায় তবে তা আদালত প্রত্যাখ্যান করবে।

 

রায়ে বলা হয়েছে, এ ধরণের চেকের ভিত্তিতে এরইমধ্যে যেসব মামলা করা হয়েছে তা এখতিয়ার বহির্ভূত হওয়ায় বিচারিক আদালত ওইসব মামলা বাতিল ঘোষনা করবে। আপিল আদালতও একই আদেশ দেবেন। রায়ে এবিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে চারদফা নির্দেশনা জারি করতে বলা হয়েছে।

 

রায়ে বলা হয়, ব্যাংকের টাকা যেহেতু জনগণের টাকা, তাই জনগণের টাকা আর্থিক প্রতিষ্ঠান কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে দিচ্ছেন তা জনগণের জানার অধিকার আছে। একারণে প্রত্যেক ঋণ মঞ্জুরের সাথে সাথে উক্ত ঋণ মঞ্জুরের অনুমোদনপত্র জনগণকে অবগত করার জন্য সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।

 

প্রতিটি ঋণের বিপরীতে ইন্সুরেন্স বাধ্যতামূলক করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি অবিলম্বে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশনা জারি করবে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান খেলাপি ঋণ কীভাবে আদায় করবে, সে বিষয়ে অনুমোদনপত্রে বিস্তারিত বর্ণনা দিতে হবে।

 

জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী ২০১১ সালে ব্র্যাক ব্যাংকের নবীনগর শাখা থেকে ৪ লাখ টাকা ঋণ নেন। এরপর তিনি ৩৬টি কিস্তির মধ্যে ২২টি কিস্তিতে ৩ লাখ ১৮ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। পরবর্তীতে তিনি অবশিষ্ট ঋণ ও তার বকেয়া সুদ পরিশোধ করতে পারেননি।

 

এরপর বকেয়া বাবদ ২ লাখ ৯৫ হাজার টাকার চেক দিলেও তা বাউন্স হয়ে যায়। এই প্রেক্ষাপটে ব্র্যাক ব্যাংক অবশিষ্ট ঋণ ও সুদ আদায়ের জন্য ২০১৫ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করে। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত এক রায়ে মোহাম্মদ আলীকে দোষী সাব্যস্ত করে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড ও ২ লাখ ৯৫ হাজার টাকা জরিমানা করে।

 

এ রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ২০১৮ সালে হাইকোর্টে আপিল করেন মোহাম্মদ আলী। এই আপিলের ওপর শুনানি শেষে নিন্ম আদালতের রায় বাতিল করে রায় দেন হাইকোর্ট।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version