ভুয়া ঠিকানা দিয়ে কাগুজে কোম্পানি খুলে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল) থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা তুলে নেয়া এবং এস আলম গ্রুপের ৩০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার ঘটনা তদন্ত করতে দুদক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইউনিটকে (বিএফআইইউ) চিঠি দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের ৫ আইনজীবী। নিজেদের ইসলামী ব্যাংকের নিয়মিত গ্রাহক হিসেবে পরিচয় দিয়ে বৃহস্পতিবার দেয়া চিঠিতে তাদের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। তদন্তের পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কার্যকর আইনগত পদক্ষেপ নিতেও অনুরোধ জানানো হয়েছে।
চিঠিদাতা আইনজীবীরা হলেন- অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াদুদ, অ্যাডভোকেট আবদুল্লাহ সাদিক, শাইখুল ইসলাম ইমরান ও যায়েদ বিন আমজাদ। এদিকে ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগ দুদক খতিয়ে দেখবে বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমনে দায়িত্বরত প্রতিষ্ঠান দুদকের সচিব মো. মাহবুব হোসেন। বৃহস্পতিবার দুদক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন দুদক সচিব।
গত ২৪ নভেম্বর প্রথম আলো পত্রিকায় ‘ইসলামী ব্যাংকে ভয়ংকর নভেম্বর’, ২৭ নভেম্বর ইংরেজি দৈনিক বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকায় ‘লোন ডিজভারসমেন্ট ট্রেন্ড অব ইসলামী ব্যাংক’ এবং ৩০ নভেম্বর আরেক ইংরেজি দৈনিক নিউ এইজ পত্রিকায় ‘এস আলম গ্রুপ লিফটস টাকা ৩০০০০ ক্রোর লোন ফ্রম আইবিবিএল অ্যালন’ শিরোনামে প্রকাশিত পৃথক তিনটি প্রতিবেদন যুক্ত করে এই চিঠি দেয়া হয়েছে।
এর আগে বুধবার বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চের নজরে আনা হয়। তবে আদালত ওই আইনজীবীকে রিট করার পরামর্শ দেন।
এরও আগে বিষয়টি নিয়ে গত ২৭ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে চিঠি দেন ইসলামী ব্যাংকের পাঁচজন গ্রাহক। চিঠিতে বলা হয়, ‘আমরা সবাই ইসলামী ব্যাংক, বাংলাদেশ লিমিটেডের নিয়মিত গ্রাহক। ইসলামী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় আমাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। আমরা সাধ্যমতো ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন করে থাকি। গত ২৪ নভেম্বর প্রথম আলো পত্রিকার অনুসন্ধানী রিপোর্টে উঠে এসেছে যে, ইসলামী ব্যাংক থেকে নভেম্বর মাসের ১ থেকে ১৭ তারিখ পর্যন্ত দুই হাজার চারশ ষাট কোটি টাকা অসাধু চক্র তুলে নিয়েছে। এই রিপোর্টে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া হয়েছে। ব্যাংকের আমানতকারী হিসেবে আমরা উদ্বিগ্ন। স্বীকৃত মতে, বর্তমানে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করছে।’ চিঠিতে আরো বলা হয়, ‘এ ধরনের সন্দেহজনক আর্থিক লেনদেনে আমরা সংক্ষুব্ধ। বিষয়টি আমলে নিয়ে গভীরভাবে খতিয়ে দেখার জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। একই সঙ্গে তদন্তসাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কার্যকর আইনগত দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করার অনুরোধ করছি।’
এর আগে গত ২৪ নভেম্বর ‘ইসলামী ব্যাংকে ভয়ংকর নভেম্বর’ শিরোনামে দুই হাজার চারশ ষাট কোটি টাকা ‘অসাধু চক্র’ তুলে নেয়ার অভিযোগ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকার ঋণ নেয়ার তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া ৩০ নভেম্বর নিউ এইজ পত্রিকায় এস আলম গ্রুপ একাই ইসলামী ব্যাংক থেকে ৩০ হাজার কোটি ঋণ নেয়া নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ২৭ নভেম্বর ইংরেজি দৈনিক বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকায় ‘লোন ডিজভারসমেন্ট ট্রেন্ড অব ইসলামী ব্যাংক’ প্রকাশিত প্রতিবেদনে অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে ইসলামী ব্যাংকের ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকার ঋণ প্রদানে অনিয়মের তথ্য প্রকাশিত হয়।
ভোরের আকাশ/আসা
মন্তব্য