-->
শিরোনাম

সালাম মুর্শেদীর গুলশানের বাড়ির নথি দাখিল করতে হাইকোর্টের নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
সালাম মুর্শেদীর গুলশানের বাড়ির নথি দাখিল করতে হাইকোর্টের নির্দেশ

জাতীয় সংসদের খুলনা-৪ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদীর গুলশানের বাড়ি সংক্রান্ত নথি আগামী ১৬ জানুয়ারির মধ্যে দাখিল করতে গণপূর্ত সচিব ও রাজউক চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ওই বাড়ি নিয়ে তৈরি তদন্ত প্রতিবেদন ১৫ দিনের মধ্যে দুদকে দাখিল করতে বলা হয়েছে, যাতে দুদক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারে।

 

বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহষ্পতিবার এ আদেশ দেন। সরকারি সম্পত্তি নিজের নামে লিখে নেয়ার অভিযোগে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের করা রিট আবেদনে উল্লেখিত আদেশ দেয়া হয়। রিট আবেদনকারী পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার অনীক আর হক। দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। সালাম মুর্শেদীর পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা। রাজউকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন মাসুদ।

 

আদালত এই মামলা সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশ করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে বলেছেন। আদালত বলেছেন, প্রতিবেদন প্রকাশ করার ক্ষেত্রে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল, আইনজীবী এবং বেঞ্চ কর্মকর্তাদের সহযোগিতা নিতে পারেন সাংবাদিকরা।

 

এদিকে গতকাল এবিষয়ে শুনানিতে হাইকোর্ট বলেছেন, অনেক রক্তের বিনিময়ে এই বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠন। তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে এ দেশের কোনো ধরনের দুর্নীতি করার সুযোগ দেয়া হবে না। আদালত বলেন, এই বাড়ি নিয়ে কোনো দুর্নূীতি হলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

 

এর আগে গতকাল গতকাল শুনানির সময় সালাম মুর্শেদীর আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রেজা আদালতকে বলেন, তার মক্কেল পক্ষপাতদুষ্ট এবং মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার হয়েছেন। কিছু প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া তার গুলশানের বাড়িতে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যা বিচারাধীন বিষয়।

 

এসময় রিট আবেদনকারীর আইনজীবী অনিক আর হক আদালতকে বলেন, গৃহায়ন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির অনুসন্ধানের ভিত্তিতে গণমাধ্যম প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এবং সাংবাদিকরা নিজেরাও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

 

তবে আদালত বলেন, গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে নয়, প্রাসঙ্গিক নথি, প্রমাণ ও তথ্য যাচাই-বাছাই করে এ বিষয়ে রায় দেয়া হবে।

 

এরও আগে গত পহেলা নভেম্বর হাইকোর্ট এক আদেশে ওই বাড়ির যাবতীয় নথি ১০ দিনের মধ্যে দাখিল করতে গণপূর্ত সচিব, রাজউক চেয়ারম্যান ও আব্দুস সালাম মুর্শেদীকে নির্দেশ দেন একই হাইকোর্ট বেঞ্চ। এছাড়া ১৩ নভেম্বর এবিষয়ে শুনানির দিন ধার্য করা হয়। এ অবস্থায় ওইদিন অ্যাটর্নি জেনারেল সময় দেন। এ অবস্থায় এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপক্ষ কোনো নথি দাখিল করেনি।

 

হাইকোর্ট গত পহেলা নভেম্বর অন্তবর্তীকালীন নির্দেশনার পাশাপাশি রুল জারি করেন। রুলে পরিত্যক্ত সম্পতি হিসেবে ‘খ’ তালিকাভূক্ত বাড়িটি বেআইনিভাবে দখল করার অভিযোগে আব্দুস সালাম মুর্শেদীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে বিবাদীদের ব্যর্থতা ও নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যান, রাজউক চেয়ারম্যান, ঢাকা জেলা প্রশাসক ও আব্দুস সালাম মুর্শেদীকে ১০ দিনের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

 

রিট আবেদনে বলা হয়, রাজধানীর গুলশান-২ এর ১০৪ নম্বর সড়কে সি ই এন (ডি)-২৭-এর ২৯ নম্বর বাড়িটি ১৯৮৬ সালের অতিরিক্ত গেজেটে ‘খ’ তালিকায় পরিত্যক্ত হিসেবে তালিকাভূক্ত। কিন্তু আব্দুস সালাম মুর্শেদী সেটি দখল করে বসবাস করছেন।

 

রাজউককে দেয়া গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তিনটি চিঠির অনুলিপি সংযুক্ত করে রিট আবেদনে বলা হয়, বাড়িটি নিয়ে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ২০১৫ সালের ১৩ এপ্রিল, ২০১৬ সালের ২০ জানুয়ারি এবং চলতি বছরের ৪ জুলাই রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাউজক) চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি দেয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। ওই চিঠিতে পরিত্যক্ত বাড়ির তালিকা থেকে বাড়িটি অবমুক্ত না হওয়ার পরও আব্দুস সালাম মুর্শেদী কীভাবে বাড়িটি দখল করে আছেন এবং ভবনটি অবমুক্ত না হওয়ার পরও কীভাবে রাজউক চেয়ারম্যানের দপ্তর থেকে সেটির নামজারি ও দলিল করার অনুমতি দেয়া হলো, সে বিষয়ে ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত এর কোনো জবাব দেয়নি রাজউক।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version