-->
অভিযানে একাধিক টিম কাজ করছে : সিটিটিসি

দুই সপ্তাহেও গ্রেপ্তার হয়নি ছিনিয়ে নেয়া মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত দুই জঙ্গি

ইমরান আলী
দুই সপ্তাহেও গ্রেপ্তার হয়নি ছিনিয়ে নেয়া মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত দুই জঙ্গি

ইমরান আলী: মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেয়ার দুই সপ্তাহ হলেও এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তারা কি দেশে, না দেশের বাইরে চলে গেছে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্যও নেই কর্মকর্তাদের কাছে। তবে তদন্ত সংস্থা কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) কর্মকর্তারা বলছেন, এখন পর্যন্ত দুই জঙ্গি দেশের ভেতরেই রয়েছেন।

 

সিটিটিসির প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, আমাদের অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে একাধিক টিম কাজ করছে। আমরা মনে করছি পালিয়ে যাওয়া দুই জঙ্গি দেশের ভেতরেই রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে সব রকম চেষ্টা করা হচ্ছে।

 

২০ নভেম্বর দুপুর ১২টার দিকে দুই জঙ্গিকে একটি মামলায় আদালতে হাজির করা হয়। হাজিরা শেষে পুলিশ সদস্যরা তাদের নিয়ে যাচ্ছিলেন হাজতখানার দিকে। এ সময় পুলিশের চোখে-মুখে স্প্রে করে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত জঙ্গি সদস্য মইনুল হাসান শামীম ও আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিবকে ছিনিয়ে নেয় তাদের সহযোগীরা। এই দুই জঙ্গি দীপন হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামি ছিল। এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।

 

মামলার এজাহারে বলা হয়, আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার নেতা সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক ওরফে সাগর ওরফে বড় ভাই ওরফে মেজর জিয়ার (চাকরিচ্যুত মেজর) পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় আয়মান ওরফে মশিউর রহমান (৩৭), সাব্বিরুল হক চৌধুরী ওরফে আকাশ ওরফে কনিক (২৪), তানভীর ওরফে সামশেদ মিয়া ওরফে সাইফুল ওরফে তুষার বিশ্বাস (২৬), রিয়াজুল ইসলাম ওরফে রিয়াজ ওরফে সুমন (২৬) ও মো. ওমর ফারুক ওরফে নোমান ওরফে আলী ওরফে সাদ (২৮) পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে আসামিদের ছিনিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করে।

 

এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দুটি মোটরসাইকেলে করে আনসার আল ইসলামের অজ্ঞাতপরিচয় ৫-৬ জন সদস্য অবস্থান নেয়। এ ছাড়াও আদালতের আশপাশে অবস্থান করা অজ্ঞাতপরিচয় আরো ১০-১২ জন আনসার আল ইসলামের সদস্য আদালতের মূল ফটকের সামনে অবস্থান করে। এরপর তারা পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনিয়ে নিয়ে যায়।

 

মামলার এজাহারে আরো বলা হয়, রোববার সকাল ৮টা ৫ মিনিটে কাশিমপুর থেকে ১২ জন আসামিকে ঢাকার আদালতে প্রিজনভ্যানে নিয়ে আসা হয়। সকাল ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে ঢাকার প্রসিকিউশন বিভাগে আসামিদের হাজিরা দেয়ার জন্য ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) আদালত ভবনের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনাল ৮-এ নিয়ে যাওয়া হয়।

 

এ মামলার শুনানি শেষে জামিনে থাকা ১৩ নম্বর আসামি মো. ঈদী আমিন (২৭) ও ১৪ নম্বর আসামি মেহেদী হাসান অমি ওরফে রাফি (২৪) আদালত থেকে বের হয়ে যায়।

 

এরপর বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটের দিকে আদালতের মূল ফটকের সামনে পৌঁছানো মাত্র হামলা চালিয়ে আসামিদের ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হয়। শেষ পর্যন্ত দুই আসামিকে ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হয় জঙ্গিরা।

 

এদিকে ঘটনার দুই সপ্তাহ পেরোলেও এখন পর্যন্ত ওই দুই জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। একাধিক স্থানে পুলিশ ও র‌্যাব অভিযান চালালেও কার্যত তাদের গ্রেপ্তার করা যায়নি। এর আগে ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রæয়ারি ত্রিশালে ফিল্মি কায়দায় হামলা চালিয়ে প্রিজনভ্যান থেকে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত সালাহউদ্দিন ওরফে সালেহীন ওরফে সানি, রাকিবুল হাসান ওরফে হাফেজ মাহমুদ এবং জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমা মিজানকে ছিনিয়ে নেয় জঙ্গিরা।

 

এর মধ্যে রাকিবুল হাসান ওরফে হাফেজ মাহমুদ ক্রসফায়ারে নিহত হয়। আর দুর্ধর্ষ সেই সালেহীন ভারতে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। ২০ নভেম্বর রাজধানীর আদালত থেকে যে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে তারাও সেই সালেহীনের অনুসারী।

 

সূত্র বলছে, আদালতপাড়ার মতো জনাকীর্ণ স্থান থেকে তাদের ছিনিয়ে নেয়ার মূল পরিকল্পনা আসে সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কৃত মেজর জিয়ার কাছ থেকে। তারই পরিকল্পনা মোতাবেক এ ঘটনা সংঘটিত হয়। আর যেহেতু জঙ্গিদের সঙ্গে পলাতক সালেহীনেরও যোগাযোগ রয়েছে, সেহেতু তারা ভারতেও পালিয়ে যেতে পারে।

 

এদিকে এ বিষয় নিয়ে গতকাল শনিবার রাজারবাগ পুলিশ অডিটরিয়ামে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি এখনো তদন্তাধীন। তদন্ত শেষ হলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।

 

অন্যদিকে সিটিটিসির করা মামলায় শনিবার তিনজনকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। তারা হলেন খোতেজা আক্তার লিপি, নাসির মিয়া ও তানভীর হোসেন। তারা এ মামলার এজাহারনামীয় আসামি ঈদী আমিনের আশ্রয়দাতা বলে জানায় পুলিশ।

 

গতকাল তাদের আদালতে হাজির করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) পরিদর্শক মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ। শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শাকিল আহাম্মদ তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

 

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version