-->
আপনারা মানুষের পর্যায়ে পড়েন না- পরিবহনের এমডিকে হাইকোর্ট

শ্যামলী এনআর পরিবহনের মালিককে হাইকের্টের ভর্ৎসনা

নিজস্ব প্রতিবেদক
শ্যামলী এনআর পরিবহনের মালিককে হাইকের্টের ভর্ৎসনা

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সবজি বিক্রেতা আয়নাল হোসেন ও অ্যাম্বুলেন্স চালক দ্বীন ইসলামের পরিবার ও আহতদের চিকিৎসার ব্যয় সংক্রান্ত খরচ নিরূপণ করে আহতদের কাছে তা হস্তান্তর করতে উভয়পক্ষের আইনজীবীকে সমঝোতা করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ আদেশ বাস্তবায়ন বিষয়ে এক সপ্তাহ পর আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আদালত আগামী ১৪ ডিসেম্বর পরবর্তী শুনানি ও আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন।

 

বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার এ আদেশ দিয়েছেন। নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান বিষয়ে একটি রিট আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেন আদালত। আদালতে রিট আবেদনকারী পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। শ্যামলী এনআর পরিবহনের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম ও তারিকুল ইসলাম। বিআরটিএ’র পক্ষে ছিলেন ব্যারিষ্টার রাফিউল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।

 

এদিকে সবজি বিক্রেতার পরিবারের সদস্যদের ক্ষতিপূরণ দেয়া সংক্রান্ত আদালতের নোটিশ গ্রহণ না করায় ও আহতদের কোনো ধরনের খোঁজখবর না নেয়ায় শ্যামলী এনআর পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক(এমডি) শুভংকর ঘোষ রাকেশকে ভর্ৎসনা করেছেন হাইকোর্ট। আদালত ওই পরিবহনের এমডিকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, আপনাদের পরিবহন এক্সিডেন্ট করল। অথচ আহতদের দেখতে গেলেন না, খোঁজখবরও নিলেন না। শুধু আছেন টাকা কামানো নিয়ে। আসলে আপনারা মানুষের পর্যায়ে পড়েন না। আপনাদের মানবিকতা নেই। মানবিকতা অর্জন করুন, মানুষ হওয়ার চেষ্টা করুন।

 

গত ১৫ এপ্রিল ঢাকার রূপনগরের সবজি বিক্রেতা আয়নাল হোসেন তার স্ত্রী ফিরোজা বেগমের মরদেহ অ্যাম্বুলেন্স করে নিয়ে গ্রামের বাড়ি ফিরছিলেন। বগুড়ার শেরপুরে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের ঘোগা সেতুর পাশে ওই অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে ঢাকাগামী শ্যামলী পরিবহনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলে আয়নাল হোসেন ও অ্যাম্বুলেন্সের চালক দ্বীন ইসলাম নিহত হয়। আহত হন আয়নাল হোসেনের তিন ছেলে ফরিদ হোসেন (২০), ফরহাদ হোসেন (১৮) ও ফিরোজ হোসেন (২৯)। এ ঘটনায় ক্ষতিপূরণ চেয়ে আইনি নোটিশ দেয়া হয়। শ্যামলী পরিবহনের সঙ্গে আলোচনাও বসেন তারা। কিন্তু সুরাহা না হওয়ায় ক্ষতিপূরণ ও আহতদের চিকিৎসার খরচ চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন দাখিল করা হয়।

 

রিট আবেদনে নিহত দুইজনের পরিবারের সদস্য ডলি পারভীন ও রোজিনা খাতুনকে সাড়ে ৭০ লাখ টাকা করে, নিহত আয়নালের তিন ছেলে যথাক্রমে ফরহাদ হোসেনকে ৮ লাখ টাকা, ফিরোজ হোসেন ও ফরিদ হোসেনকে ৫ লাখ টাকা করে, আহত দুলফিজুর রহমান রতনকে ৯ লাখ টাকা এবং ক্ষতিগ্রস্ত অ্যাম্বুলেন্স বাবদ পিপল রিনেমেট অ্যান্ড অ্যাডভান্সমেন্ট কাউন্সিলের পরিচালক আব্দুল আলী বাশারের জন্য ২০ লাখ টাকা সর্বমোট এককোটি ৭১ লাখ টাকা দাবি করা হয়।

 

এ রিট আবেদনে গত ৭ আগস্ট নিহতদের পরিবার ও আহতদের জন্য ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১ কোটি ৭১ লাখ টাকা দিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। সড়ক ও পরিবহন সচিব, আইন সচিব, বিআরটিএ চেয়ারম্যান ও শ্যামলী এনআর পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

 

এরই ধারাবাহিকতায় আদালত শ্যামলী এনআর পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক(এমডি) শুভংকর ঘোষ রাকেশকে তলব করেন।

 

এ আদেশে হাইকোর্টে হাজির হন শুভংকর ঘোষ রাকেশ। আদালত তার কাছে জানতে চান, আদালতের নোটিশ রিসিভ করেননি কেন?

 

জবাবে রাকেশ বলেন, ওই সময় দেশে ছিলাম না। আমরা জানতাম না।

 

আদালত বলেন, আপনারা জানতেন না, এটা অবিশ্বাস্য। আপনাদের গাড়ির চালকের দোষ। তার কারণে এক্সিডেন্ট হয়েছে।

 

রাকেশ বলেন, গাড়ির ড্রাইভার তো পলাতক।

 

আদালত বলেন, আহতদের খোঁজখবর নিয়েছেন? তাদের চিকিৎসার জন্য কোনো খরচ দিয়েছেন? কোনো খরচ দেননি। আসলে আপনারা মানুষের পর্যায়ে পড়েন না। মানবিক হোন। মানুষ হওয়ার চেষ্টা করুন।

 

এ সময় হাইকোর্ট এনা পরিবহনের প্রসঙ্গে বলেন, এনা পরিবহন যখন রাস্তায় চলে কাউকে পরোয়া করে না। আপনাদের চালকেরা কোনো কিছুর তোয়াক্কা করে না। বেপরোয়া, যত্রতত্র গাড়ি চালায়। আমাদের নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি।

 

আদালত বলেন, পরিবহন মালিকরা এত ক্ষমতাশালী যে, কোন ব্যক্তি মারা গেল, কে আহত হলো তা দেখার সময় নেই। পুলিশও আপনাদের নাগাল পায় না। পুলিশও এসব দেখে না। ভাবখানা যেন পুলিশের থেকেও আপনারা পাওয়ারফুল। আপনার চালকের কারণে এত মানুষ মারা গেলো, আহত হলো। অথচ একটু দেখারও সময় পেলেন না। আপনারা আছেন শুধু টাকা কামানো নিয়ে। আপনাদের এত ক্ষমতা যা ইচ্ছে তাই করেন। মালিকরা মিলে দেশটাকে কি লুটেপুটে খেতে চান? আপনারা আইন বাস্তবায়ন করতে দিচ্ছেন না। সড়কে যা ইচ্ছা তাই করছেন। আর কত? টাকা লুট করছেন।

 

এ সময় বিচারক রিট আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবী শিশির মনিরকে ডেকে বলেন, তারা কি কোনো টাকা দিয়েছেন?

 

জবাবে শিশির মনির বলেন, না। কোনো টাকা দেয়নি। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের তিন সন্তান পঙ্গু হয়েছেন।

 

এরপর আদালত আদেশ দেন।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version