এম বদি-উজ-জামান: এবার সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন প্রায় ৮৮ হাজার ফৌজদারি মামলার কাগুজে নথি ধ্বংস করতে যাচ্ছে। আগামী জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে এ নথি ধ্বংস করা হতে পারে বলে জানা গেছে। তিন বছরের পুরোনো এসব নথি এরই মধ্যে বাছাই করেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। এর একটি তালিকাও প্রকাশ করেছে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের ফৌজদারি রেকর্ড শাখা। এ তালিকায় মোট ৮৭ হাজার ৭৪০টি নথি রয়েছে।
তালিকা থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, শুধু ২০০০-২০১৯ সালের মধ্যে দাখিল করা ফৌজদারি বিবিধ মামলায় ওইবছর থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে দেয়া আদেশ বা রায় প্রদান হয়েছে এমন নথি ধ্বংসের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের কাছে এসব নথি অপ্রয়োজনীয় হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায় তা ধ্বংস করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এসব নথির তালিকা সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
এসব নথির বিষয়ে কারো আপত্তি থাকলে সংশ্লিষ্ট শাখায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের তারিখ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ রুলস ১৯৭৩ অনুসারে এসব নথি বিনষ্ট করা হবে। এর আগে চলতি বছরের মার্চে একইভাবে ৪৫ হাজার ৬৫০টি নথি ধ্বংস করে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। ওই সময় শুধু ২০১২ সালে দাখিল করা ফৌজদারি বিবিধ মামলায় ওইবছর থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে দেয়া আদেশ বা রায় প্রদান হয়েছে এমন নথি ধ্বংস করা হয়।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান ভোরের আকাশকে বলেন, হাইকোর্ট বিভাগের রুলস অনুযায়ীই এসব নথি ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর আগে এসব নথি যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। তিনি বলেন, হাইকোর্ট বিভাগের রুলস অনুযায়ী অপ্রয়োজনীয় নথি নিয়মিতভাবেই ধ্বংস করা হয়।
জানা গেছে, যেসব ফৌজদারি বিবিধ মামলার নথি ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, সেসব নথি স্ক্যানিং করা হয়েছে। অর্থাৎ বিকল্প নথি কম্পিউটার ডাটাবেজে সংরক্ষণ করার পরই কাগজের নথি ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিচার বিভাগে ডিজিটাইজেশনের অংশ হিসেবে এ উদ্যোগ নিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। কারণ লাখ লাখ মামলার নথি সংরক্ষণে হিমশিম খাচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট। এসব নথি বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ সংরক্ষণ করতে যেয়ে বিশাল পরিমাণ জায়গার প্রয়োজন, যা কোনোভাবেই সংকুলান করা সম্ভব নয়। বছরের পর বছর এসব নথি সংরক্ষণে মারাত্মক অসুবিধায় আছে প্রশাসন।
জানা যায়, দীর্ঘদিন কাগুজে নথি পড়ে থাকায় তাতে পোকা লেগে যায়। কখনো কখনো তা ছিঁড়ে ও নষ্ট হয়ে যায়। এসব নথি গুদামজাত করার মতো অবস্থায় রাখার কারণে একটি মামলার নথি খুঁজে পেতে মারাত্মক অসুবিধা হয়। কখনো কখনো নথি গায়েবের ঘটনাও ঘটে। এ কারণেই সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন সব নথিই কম্পিউটারে সংরক্ষণের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে।
এরই অংশ হিসেবে সুপ্রিম কোর্টে দাখিল করা সব মামলাই এখন ডাটাবেজের মধ্যে নেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার (অনুলিপি ও মহাফেজ) (দেওয়ানি-১) নাসরিন সুলতানার স্বাক্ষরে জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘এই মর্মে সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতির জন্য নির্দেশক্রমে জানানো যাচ্ছে যে, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট বিভাগের ফৌজদারি রেকর্ড শাখায় সংরক্ষিত তিন বছরের অধিক পুরাতন এবং উইডিংকৃত ৮৭ হাজার ৭৮০টি ফৌজদারি বিবিধ মামলার পার্ট-২ নথি বিনষ্ট করা হবে।
ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এবং নোটিশ বোর্ডের তালিকায় উল্লেখিত ফৌজদারি বিবিধ মামলার পার্ট-২ নথির বিষয়ে কারো কোনো আপত্তি থাকলে সংশ্লিষ্ট শাখায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের তারিখ হতে ১৪ দিনের মধ্যে যোগাযোগের জন্য অনুরোধ করা হলো।’
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য