-->
আপিল বিভাগেও জামিন বহাল

আজ মুক্তি পেতে পারেন ফখরুল-আব্বাস

নিজস্ব প্রতিবেদক
আজ মুক্তি পেতে পারেন  ফখরুল-আব্বাস

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। পাশাপাশি জামিন প্রশ্নে হাইকোর্টের দেয়া রুল ৩০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া ওই দুই নেতার জামিননামা দাখিলের ওপর চেম্বার জজ আদালতের দেয়া নিষেধাজ্ঞাও প্রত্যাহার করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে আপিল বিভাগ রোববার জামিন বহাল রেখে আদেশ দেন। হাইকোর্টেল জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের ওপর শুনানি শেষে এ আদেশ দেন আপিল বিভাগ।

 

এ আদেশের পর বিএনপির ওই দুই নেতার জামিননামা দাখিলের প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছেন তাদের আইনজীবীরা। আপিল বিভাগের আদেশের কপি পাওয়াসাপেক্ষে আজ সোমবার জামিননামা দাখিল করা হবে বলে জানিয়েছেন ওই দুই নেতার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সগীর হোসেন লিওন। ফলে তাদের আর কোনো মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো না হলে আজই তারা কারামুক্তি পেতে পারেন বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

 

অ্যাডভোকেট লিওন রোববার ভোরের আকাশকে বলেন, সোমবার (আজ) জামিননামা দাখিল করা হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করা হচ্ছে। গতকাল আপিল বিভাগে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন। এ সময় অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এসএম মুনীর, শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ ও ব্যারিস্টার মেহেদী হাসান চৌধুরী ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী উপস্থিত ছিলেন। আর বিএনপি নেতাদের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন।

 

এ সময় অ্যাডভোকেট এজে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার এএম মাহবুবউদ্দিন খোকন, অ্যাডভোকেট মো. আসাদুজ্জামান, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম সজল, অ্যাডভোকেট সগীর হোসেন লিওন উপস্থিত ছিলেন। গতকাল শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বলেন, গত ২১ ডিসেম্বর মহানগর দায়রা জজ আদালত যে আদেশ দিয়েছেন, তাতে দেখা যায়, মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসের জামিন আবেদন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে আগামী ২৬ জানুয়ারি শুনানির জন্য ধার্য আছে। ওই আদালতে বিচারাধীন থাকাবস্থায় হাইকোর্টে আবেদন করতে পারেন না। আর হাইকোর্টও আদেশ দিতে পারেন না। এ কারণেই হাইকোর্টের জামিন স্থগিত চাচ্ছি।

 

এ পর্যায়ে বিএনপি নেতাদের আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, মহানগর দায়রা আদালতে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন আবেদন করা হয়েছিল। ওই আদালত সে আবেদন খারিজ করায় তার বিরুদ্ধে আমরা হাইকোর্টে এসেছি। এটা আইনসিদ্ধ। তাই হাইকোর্ট যথাযথ আদেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, এ মামলায় এফআইআরে নাম থাকা দুই আসামি আমানউল্লাহ আমান ও আব্দুল কাদির ভ‚ঁইয়া জুয়েলকে সিএমএম আদালত থেকেই জামিন দেয়া হয়েছে। অথচ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাসের নাম এফআইআরে না থাকলেও তাদের জামিন দেয়া হয়নি। তিনি বলেন, এ দুজন এফআইআরভুক্ত আসামি নন, শুধু তাদের বিরুদ্ধে একটি ফরোয়ার্ডিং দিয়েছে পুলিশ।

 

তিনি বলেন, দায়রা জজ আদালত তাদের জামিন না দিয়ে আবেদনটির ওপর আগামী ২৬ জানুয়ারি শুনানির জন্য রেখেছেন। তারা দুজন সিনিয়র নেতা। সাবেক মন্ত্রী। তারা অসুস্থ। এরপরও দায়রা জজ আদালত দীর্ঘদিন পর শুনানির জন্য রেখেছেন। তাই মানবিক কারণে জামিন আবেদন করা হয়েছে। যেকোনো পর্যায়ে হাইকোর্টের জামিন দেয়ার এখতিয়ার বা স্বাধীনতা আছে। তিনি বলেন, দায়রা আদালতে বিচারাদীন থাকাবস্থায় হাইকোর্টের জামিন দেয়ার ভ‚রি ভ‚রি নজির আছে। তাছাড়া দায়রা আদালতের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন আবেদন খারিজ আদেশের পরই হাইকোর্টে আবেদন করা হয়েছে। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে জামিন বহাল রেখে আদেশ দেন প্রধান বিচারপতি।

 

রাজধানীর নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় পল্টন থানায় করা মামলায় ৩ জানুয়ারি মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে ৬ মাসের জামিন দেন হাইকোর্ট। এ জামিন স্থগিত চেয়ে ৪ জানুয়ারি সকালে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালতে আবেদন দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। ওইদিন দুপুরে চেম্বার আদালতে শুনানি হয়। শুনানি শেষে স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের ওপর ৮ জানুয়ারি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হয়। এ সময় পর্যন্ত তাদের জামিননামা দাখিল না করতে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।

 

এর আগে গত ২১ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতেও তাদের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন আবেদন খারিজ হয়। তবে মূল আবেদনের ওপর ২৬ জানুয়ারি শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। এ অবস্থায় হাইকোর্ট জামিন দেন। এরও আগে গত ৯, ১২ ও ১৫ ডিসেম্বর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে বিএনপির ওই দুই কেন্দ্রীয় নেতার জামিন আবেদন খারিজ করা হয়।

 

গত বছর ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশকে কেন্দ্র করে ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন বিএনপিকর্মী মকবুল হোসেন। সাংবাদিক-পুলিশসহ আহত হন অর্ধশতাধিক। সংঘর্ষের ঘটনায় পল্টন মডেল থানায় পুলিশ বাদী হয়ে বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে মামলা করে। মামলায় ৪৭৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত দেড় থেকে ২ হাজার জনকে আসামি করা হয়। আসামিরা সবাই বিএনপি নেতাকর্মী। ওই ঘটনায় সেদিনই নয়াপল্টন থেকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, আমানউল্লাহ আমান, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস সহ সাড়ে চার শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

 

একই মামলায় ৮ ডিসেম্বর রাত সোয়া ৩টায় মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে তাদের নিজ নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ৯ ডিসেম্বর তাদের ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হলে তাদের জামিন আবেদন খারিজ করে কারাগারে পাঠানো হয়। সেই থেকে তারা কারাবন্দি।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version