১০ মাসেও মতিঝিল আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যা মামলায় চার্জশিট দিতে পারেনি পুলিশ। উল্টো এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত আরিফুল ইসলাম জুয়েলসহ পাঁচ আসামি জামিন পেয়েছেন। সন্তানদের নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন টিপুর স্ত্রী ফারহানা ইসলাম ডলি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি অভিযোগ করেছেন, এত বড় একটা হত্যাকান্ডের আসামিরা এত তাড়াতাড়ি কিভাবে জামিন পেয়ে যায় সেটা আমাদের বোধগম্য নয়। তাছাড়া টিপু হত্যাকান্ডের বিচার অনেকটা এলোমেলো। প্রায় দশ মাসেও চার্জশিট দিতে পারেনি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। বিষয়টি নিয়ে নিজের ক্ষোভ-অসন্তোষের কথা জানান টিপুর স্ত্রী ডলি।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমার স্বামীকে মেরে ফেলা হয়েছে তার সঙ্গে দুর্বৃত্তরা আমাদেরও মেরে ফেললে ভালো হত। আমি এখন সন্তানদের নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। এতদিনেও মামলার চার্জশিট দিতে পারেনি তদন্তকারী কর্মকর্তা। দেশের বাইরে থেকে এবং দেশের মধ্যে থেকে অনলাইনে অজ্ঞাতনামা কল আসে, নানাভাবে তারা আমাদের হুমকি দেয়। যার কারণে আমরা সবসময় নিরাপত্তাহীনতায় পড়ি। পুলিশকে বললে তারা বলে অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসলে রিসিভ করবেন না ।
টিপুর স্ত্রী বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থে ৬/৭টা জিডি করেছি। কিন্তু এসব কাজে আসেনি। এখন শুধু আল্লাহকে ডাকছি, তার ওপরে বিচার ছেড়ে দিয়েছি। এই ঘটনায় প্রথমে মনে হয়েছিল আমরা সুষ্ঠু বিচার পাব। কিন্তু পরবর্তীতে বিচার পাওয়া সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় পাঁচ জনের জামিন হয়েছে। বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তাকে জানালে তিনি বলেন অপরিচিত মোবাইল নাম্বার রিসিভ করার দরকার নেই। আমরা বিচার পাবো কিনা সেটাই বড় কথা। টিপু হত্যাকান্ডের ঘটনায় প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত ঘাতক আরিফুল ইসলাম সোহেল। সোহেলের জামিনে বের হওয়ার পর মুঠোফোনে হুমকির প্রবণতা বেড়ে গেছে বলে জানান টিপুর স্ত্রী ডলি।
ডলি জানান, ইতোমধ্যে কয়েক দফা হুমকি পেয়েছি। অনেক আসামির নাম তালিকা থেকে বাদ দেয়ার জন্য আমাকে ফোনে হুমকি দেয়া হয়েছে। এ মামলায় পুলিশ ও র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার ২৫ আসামির মধ্যে পাঁচজন ইতোমধ্যে জামিন পেয়েছেন। ডিবি ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন রাকিবুর রহমান, ইয়াসির আরাফাত সৈকত ও ইশতিয়াক আহম্মেদ জিতু এবং মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে গত ডিসেম্বরে মশিউর রহমান একরাম ও সম্প্রতি জামিন পেয়েছে আরিফুর রহমান সোহেল ওরফে ‘ঘাতক’ সোহেল।
তিনি বলেন, দুর্বৃত্তরা আমার স্বামীর সঙ্গে যদি আমাদের পরিবারের সবাইকে গুলি করে মেরে ফেলতো তাহলে ভালো হতো এসব যন্ত্রণা সহ্য হচ্ছে না। হত্যাকান্ডের বিচার পাব ভেবেছিলাম কিন্তু এটি এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে মনে হচ্ছে। টিপু হত্যাকান্ডের বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইয়াসিন শিকদার বলেন, এখনো মামলার চার্জশিট জমা দিতে পারিনি কিছু কার্যক্রম এখনো অসম্পূর্ণ রয়েছে যার কারণে এই জটিলতা তৈরি হয়েছে।
ইয়াসিন শিকদার আরো বলেন, চার্জশিটের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তাছাড়া পাঁচজন আসামিকে জামিন দিয়েছেন আদালত। আদালত যদি কোনো আসামিদের জামিন দেন সেই ক্ষেত্রে আমাদের কিছু করণীয় থাকে না। তবে কারাগার থেকে বের হওয়া আসামিরা আমাদের নজরদারিতে রয়েছে। এখনো মামলার তদন্ত চলছে কাজ শেষ হলে মামলার ফাইনাল চার্জশিট এর কপি আদালতে জমা দেয়া হবে।
টিপুর পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন আপনাদের কাছে থেকে তেমন সহযোগিতা পাচ্ছেন না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসলে তাদের পরিবারের একজন মারা গেছে যে কারণে হয়তো তারা এমন সমস্যার মুখোমুখি পড়েছেন। তবে আমরা তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থার বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছি।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য