সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না বলে মনে করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এমপি। তিনি বলেছেন, সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কারো যদি নৈতিক স্খলনের কারণে দুই বছর বা তার বেশি সাজা হয়, তাহলে তিনি সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করতে পারবেন না। এগুলো তো স্পষ্ট।
রোববার রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে এক অনুষ্ঠান শেষে খালেদা জিয়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কিনা-সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন আইনমন্ত্রী। ১৪শ বিজেএস পরীক্ষার মাধ্যমে নতুন নিয়োগ পাওয়া সহকারী জজদের প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকরা এই প্রশ্ন করেন। বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার সভাপতিত্ব অনুষ্ঠানে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সাওয়ার ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) শেখ আশফাকুর রহমান বক্তৃতা করেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, অসুস্থতার গ্রাউন্ডে দুটো শর্তে তাকে (খালেদা জিয়া) মুক্ত করা হয়েছে। তিনি রাজনীতি করতে পারবেন না বা রাজনীতি করা থেকে বন্ধ থাকতে হবে এ রকম শর্ত সেটার (খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে করা আবেদন) মধ্যে ছিল না। কারণ বাক স্বাধীনতা; জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার মনে করে যে, কারও এই স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ করাটা ঠিক নয়।
রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার ফিরে আসার সুযোগ আছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, এটা একটা ডেড ইস্যু, এ বিষয়ে কথা বলার কোনো প্রয়োজন নেই। তবু পরিষ্কার করে দিতে চাই, যে চিঠিটা লেখা হয়েছিল (খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয় তার পরিবারের পক্ষ থেকে) সেখানে যা বলা হয়েছে, সেটা হচ্ছে তার শারীরিক অবস্থা এমন ছিল যে তার সুচিকিৎসা না হলে জীবন বিপন্ন হতে পারে। এখন বলেন, যিনি অসুস্থ তিনি কী রাজনীতিতে অংশ নিতে পারেন? যিনি অসুস্থ তিনি রাজনীতি করতে পারবেন, আমার মনে হয় এটাই হচ্ছে বেস্ট জাজমেন্ট।
আইনমন্ত্রী আরো বলেন, আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই- তিনি (খালেদা জিয়া) একজন স্বাধীন মানুষ। তিনি কী করবেন তা আমার বলে দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু তাকে তখন ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় প্রধানমন্ত্রীর মহানুভবতায় কারণে তাকে তখন মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। তখন তাকে অসুস্থ হিসেবে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। সেখানে আমরা কখনো লিখে রাখিনি যে তিনি রাজনীতি করতে পারবেন না।
উল্লেখ্য জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার ১০ বছর এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৭ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে।
উপাত্ত সুরক্ষার ব্যবস্থা থাকবে আইনে
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আগেও বলেছি, এখনও বলছি, উপাত্ত সুরক্ষা আইনের খসড়া মন্ত্রিপরিষদে যাওয়ার আগে এর অংশীজনদের সঙ্গে আবারও আলাপ-আলোচনা করা হবে। এর আগেও আমরা অংশীজনদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেছি। এ বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত থাকবে যাতে এই আইনটির বিষয়ে এমন মনে না হয় যে, এটা উপাত্ত নিয়ন্ত্রণের জন্য করা হচ্ছে। এটার উদ্দেশ্যই হচ্ছে উপাত্ত সুরক্ষা করা। উপাত্ত সুরক্ষাই যাতে দেয়া হয়, সেই ব্যবস্থাই থাকবে এতে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে সংবিধান উপহার দেন, সেখানে তিনি পরিষ্কারভাবে বাক-স্বাধীনতাকে একটি মৌলিক অধিকার হিসেবে রাখেন এবং তার সঙ্গে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতাও মৌলিক অধিকার হিসেবে রাখা হয়, যা বহু গণতান্ত্রিক দেশের সংবিধানে রাখা হয়নি। তাই কেউ যদি এমন দুশ্চিন্তা বা কল্পনা করেন যে, শেখ হাসিনার সেবামূলক সরকারের সময় এমন একটি আইন হবে, যেখানে জনগণের বাক-স্বাধীনতা বা সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা নষ্ট হবে, সেটা সঠিক নয়।
ভোরের আকাশ/আসা
মন্তব্য