দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে মেডিকেল উপকরণ সরবরাহকারী স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিকেল কোম্পানিকে কালো তালিকাভুক্ত করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আদেশ স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। ছয় মাসের জন্য এ স্থগিতাদেশ দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে দুদক ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আদেশ কেন বাতিল ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব, স্বাস্থ্য সচিব, দুদক চেয়ারম্যান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ ৯ বিবাদীকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার এ আদেশ দিয়েছেন। বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিকেল কোম্পানির স্বত্বাধিকারী জাহের উদ্দিন সরকারের করা এক রিট আবেদনে এ আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
রিট আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল সিনিয়র আইনজীবী মুরাদ রেজা, অ্যাডভোকেট মো. রোকনুজ্জামান প্রিন্স, মিল্টন দাস ও স্বপ্নীল ভট্টাচার্য। দুদকের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার সাজ্জাদ হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।
আদেশের পর অ্যাডভোকেট মো. রোকনুজ্জামান প্রিন্স জানান, কালো তালিকাভুক্তির আদেশ স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। ফলে বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিকেল কোম্পানির ব্যবসা পরিচালনায় কোনো বাধা নেই।
আইনজীবী জানান, বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিকেল কোম্পানি প্রায় ৩০ বছর ধরে সুনামের সঙ্গে বিশ্বের বিখ্যাত কোম্পানিসমূহের এক্সক্লুসিভ ডিস্ট্রিবিউটর নিয়ে ব্যবসা করে আসছে। এই কোম্পানি দেশের বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে যেমন : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কক্সবাজারে ১০ শয্যা বিশিষ্ট রোহিঙ্গা হাসপাতাল, কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ ৬৪ জেলার স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে সিটিস্ক্যান, এমআরআই, এক্স-রে, আলট্রাসনোগ্রাম, ইকো, ব্লাড গ্যাস এনালাইজার মেশিনসহ কয়েক হাজার উপকরণ সরবরাহ করেছে, যা রোগীদের চিকিৎসাসেবায় ব্যবহৃত হচ্ছে।
শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভারের হাসপাতালের সকল মেডিকেল যন্ত্রপাতি বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিকেল কোম্পানি সরবরাহ করেছে। ইতোমধ্যে ভিআইপি হাসপাতাল হিসেবে সেবা দিয়ে এই কোম্পানি ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছে।
কিন্তু দুদক ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর বেশ কয়েকটি কোম্পানিকে কালো তালিকাভুক্ত করতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে চিঠি দেয়। ওই চিঠিতে বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিকেল কোম্পানির নাম উদ্দেশ্যমূলকভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরপর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিকেল কোম্পানিকে কালো তালিকাভুক্ত করে ২০২০ সালের ১৬ জানুয়ারি আদেশ জারি করে। দুদক ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করা হয়। এই রিট আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট দুদক ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আদেশের কার্যকারিতা ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছেন এবং রুল জারি করেছেন।
ভোরের আকাশ/আসা
মন্তব্য