-->
শিরোনাম

সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে পুলিশি হামলায় ১০ সাংবাদিক আহত

নিজস্ব প্রতিবেদক
সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে পুলিশি হামলায় ১০ সাংবাদিক আহত

দেশের সর্বোচ্চ আদালতে আইন পেশায় নিয়োজিত আইনজীবীদের সংগঠন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ভোটগ্রহণের সংবাদ সংগ্রহকালে পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন সাংবাদিকরা। পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় পুলিশের হামলায় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন নিউজের জাবেদ আখতার, ইনডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের জান্নাতুল ফেরদৌস তানভী, আজকের পত্রিকার নূর মোহাম্মদ, জাগো নিউজের ফজলুল হক মৃধা, সময় টিভির ক্যামেরাপারসন সোলাইমান স্বপন, ডিবিসির ক্যামেরাপারসন মেহেদী হাসান মিম ও বৈশাখী টিভির ক্যামেরাপারসন ইব্রাহিমসহ ১০/১২ জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। এছাড়া বেশ কয়েকজন আইনজীবীও আহত হয়েছেন।

 

দেশের সর্বোচ্চ আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের এ হামলার ঘটনায় মর্মাহত হয়েছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। আর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এমপি এ ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

 

এদিকে হট্টগোলের মধ্যেই পুলিশি পাহারায় দুপুরে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা ভোটে অংশ নিলেও বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা ভোটকেন্দ্রের বাইরে বিক্ষোভ করেছেন। তারা দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট ভবনের সামনে তাৎক্ষণিক এক সংবাদ সম্মেলন করেন। তারা নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করে ভোটগ্রহণের দাবি জানান। তবে বিকেলে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা মিছিল বের করলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় উভয়পক্ষের বেশ কয়েকজন আইনজীবীর চেম্বার ভাঙচুর করা হয়েছে।

 

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দুদিনব্যাপী নির্বাচনে তফসিল অনুযায়ী বুধবার থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটির প্রধান মো. মনসুরুল হক চৌধুরী আকস্মিক পদত্যাগ করায় ভোটগ্রহণ নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। ওই রাতে আওয়ামী ও বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা পাল্টাপাল্টি নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটির প্রধানের নাম ঘোষণা করেন। দিনভর পাল্টাপাল্টি স্লোগান-বিক্ষোভ সমাবেশের পর রাতে সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে বিপুর সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এ অবস্থায় কোনো সমঝোতা ছাড়াই গতকাল সকালে ভোটকেন্দ্রে হাজির হন উভয়পক্ষের আইনজীবীরা। সমিতি ভবনের শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে স্থাপিত ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ নিয়ে আওয়ামী-বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা মারমুখী অবস্থান নেন।

 

আইনজীবীদের হট্টগোলের কারণে সকাল ১০টায় ভোটগ্রহণ শুরু করা যায়নি। বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক মনোনীত না হওয়া পর্যন্ত ভোগ্রহণ স্থগিত রাখার দাবি জানান। আর আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবীরা ভোটগ্রহণ শুরু করার চেষ্টা করেন। কিন্তু বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের বাধার কারণে তা হয়নি। একপর্যায়ে বেলা সোয়া এগারোটার দিকে ভোটকেন্দ্রে শতাধিক পুলিশ প্রবেশ করে সেখানে অবস্থানরত বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের বের করে দেয়। এ সময় তাদের মারধর করা হয় বলে বিএনপিপন্থি আইনজীবী নেতারা অভিযোগ করেন। এ অবস্থায় কয়েকজন আইনজীবী প্রধান বিচারপতির আদালতে হাজির হয়ে বিষয়টি আদালতকে জানান ও পদক্ষেপ নেয়ার আরজি জানান।

 

ভোটকেন্দ্র থেকে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের বের করে দেয়া ও মারধরের সংবাদ সংগ্রহ করতে সাংবাদিকরা উপস্থিত হলে পুলিশ সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হয়। এ সময় জাভেদ আখতারসহ ১০/১২ জন সাংবাদিককে মারধর করা হয়। প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ ফটো সাংবাদিক শুভ্র কান্তি দাস, জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ফজলুল হক, আজকের পত্রিকার নূর মোহাম্মদ, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের জান্নাতুল ফেরদৌস, বৈশাখী টেলিভিশনের ক্যামেরাপারসন ইব্রাহিম হোসেন, এটিএন বাংলার ক্যামেরাপারসন হুমায়ুন কবির, মানবজমিনের আব্দুল্লাহ আল মারুফসহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিক আহত হন।

 

পুলিশি নির্যাতনে গুরুতর আহত জাভেদ আখতারকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও পরে রাজধানীর পান্থপথে বেসরকারি হাসপাতাল হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার পরও পুলিশ নিচে ফেলে বুট দিয়ে উপর্যুপরি লাথি দিয়েছে। লাঠিচার্জ করেছে।

 

আহত সাংবাদিক ফজলুল হক মৃধা বলেন, পুলিশ আমিসহ কয়েকজনকে ঘিরে ধরে পিটিয়েছে। মাথা ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত পেয়েছি।কালবেলার সাংবাদিক কবির হোসেন বলেন, পুলিশ আমাকে না পেটালেও অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেছে। আমর ফোন কেড়ে নিয়েছিল, পরে উদ্ধার করেছি।

 

এ ঘটনায় সুপ্রিম কোর্ট বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম-এলআরএফের সভাপতি ডেইলি স্টারের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আশুতোষ সরকার ও সাধারণ সম্পাদক বাংলাভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার আহমেদ সারোয়ার হোসেন ভূঁইয়ার নেতৃত্বে সাংবাদিকদের একটি প্রতিনিধি দল প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় আপিল বিভাগের সব বিচারপতি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিক নেতারা পুলিশি নির্যাতনের ঘটনা প্রধান বিচারপতিসহ অপরাপর বিচারপতিকে অবহিত করেন। এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, এ ঘটনায় আমি মর্মাহত। আপনারা লিখিতভাবে অভিযোগ দিন। এটা পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এরপর এলআরএফের পক্ষ থেকে প্রধান বিচারপতির কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হয়।

 

এদিকে ঘটনার পরপরই সভাপতি আশুতোষ সরকার আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন। আইনমন্ত্রী এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন বলে জানান আশুতোষ সরকার।

 

সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় এলআরএফ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) সভাপতি মুরসালিন নোমানী ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল, ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার (বিজেসি), ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নসহ সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা অবিলম্বে দোষী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।

 

এদিকে হামলা, হট্টগোলের মধ্যেই বুধবার দুপুর ১২টার দিকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। আওয়ামীপন্থিরা ভোটে অংশ নিচ্ছেন। বিএনপিপন্থিরা ভোটে অংশ না নিলেও এখন পর্যন্ত ভোট বর্জনের আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দেননি।

 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিকেলে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা মিছিল বের করেন। এ সময় তারা ভোটকেন্দ্রের প্রবেশপথের বাইরে প্যান্ডেল ভাঙচুর করেন। একপর্যায়ে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের সঙ্গে পুলিশ ও সরকার সমর্থক আইনজীবীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত প্রায় আধাঘণ্টা ধরে দুপক্ষের মধ্যে এ সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এ সময় পুলিশ বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের বিরুদ্ধে চড়াও হয়। একই সময়ে আওয়ামী লীগ নেতা ও সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট রণজিৎ চক্রবর্তীর চেম্বারে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। এ সময় আরো বেশ কয়েকজন আইনজীবীর কক্ষে ভাঙচুর চালানো হয়। এর আগে বিএনপিপন্থি আইনজীবী নেতা কামরুল ইসলাম সজলের চেম্বার ভাঙচুর করা হয়।

 

এলআরএফের নিন্দা : সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম-এলআরএফ। সংগঠনটির এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ভোটগ্রহণকে কেন্দ্র করে আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নেয়। এ সংবাদ সংগ্রহে গণমাধ্যম কর্মীরা সেখানে ছুটে গেলে পুলিশ অতির্কিত হামলা চালায়। গণমাধ্যমকর্মীদের পরিচয়পত্র এবং মাইক্রোফোন এবং ক্যামেরা থাকা সত্ত্বেও হামলার হাত থেকে কেউ রেহাই পায়নি। পুলিশ সাংবাদিকদের অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং সংবাদ সংগ্রহে বাধা দেয়। হামলায় সাংবাদিকরা আহত হয়ে মিলনায়তন থেকে বেরিয়ে গেলেও দুজন ক্যামেরাম্যানকে আটকে রাখে পুলিশ। পরে তাদের উদ্ধার করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, পুলিশের হামলায় অন্তত ১২ জন গণমাধ্যমকর্মী আহত হয়েছেন।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version