সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচন

পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন আওয়ামীলীগ-বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের

নির্বাচন একতরফা হয়েছে, একতরফা হয়নি

নিজস্ব প্রতিবেদক
পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন আওয়ামীলীগ-বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির এবারের নির্বাচন নিয়ে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেছেন আওয়ামীলীগ ও বিএনপি সমর্থক আইনজীবী প্যানেলের প্রার্থীরা। আওয়ামীলীগ সমর্থক সাদা প্যানেল থেকে সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট মো. আবদুন নূর দুলাল নিজেদের নির্বাচিত দাবি করে বলেছেন, স্বতস্ফূর্ত ভোটের মাধ্যমে তারা বিজয়ী হয়েছেন। কোনো একতরফা নির্বাচন হয়নি।

 

অপরদিকে বিএনপি সমর্থক নীল প্যানেল থেকে সভাপতি প্রার্থী ব্যারিস্টার এএম মাহবুবউদ্দিন খোকন ও সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেছেন, পুলিশ দিয়ে নির্যাতন চালিয়ে একতরফা নির্বাচন করে নিজেদের বিজয়ী ঘোষনা করেছে সরকার সমর্থক আইনজীবীরা।

 

এদিকে নির্বাচন বাতিল চেয়ে রিট আবেদন করেছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। রোববার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই রিট আবেদন দাখিল করা হয়েছে।

 

সমিতির ২০২৩-২৪ মেয়াদের ১৪ সদস্যের কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচনে ১৫ মার্চ বুধ ও ১৬ মার্চ দুদিনব্যাপী ভোটগ্রহণ করা হয়। দুইদিন ধরে দফায় দফায় হট্টগোল, ধস্তাধস্তির মধ্যদিয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে আইন পেশায় নিয়োজিত আইনজীবীদের সংগঠন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ভোটগ্রহণ করা হয়। ব্যাপক পুলিশী প্রহরায় সরকার সমর্থক আইনজীবীরা ভোট দেন। আর বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা ভোট না দিয়ে কেন্দ্রের বাইরে বিক্ষোভ করেন। এই ভোটগ্রহণকে কেন্দ্র করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে একাধিক আইনজীবীর চেম্বার ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। সাংবাদিক ও আইনজীবীরা পুলিশী নির্যাতনের শিকার হন। অপ্রীতিকর ঘটনার জেরে শাহবাগ থানায় পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে।

 

ওই নির্বাচনে ১৬ মার্চ দিবাগত রাত দুইটার পর ফল ঘোষনা করা হয়। সমিতির আওয়ামী লীগ অংশের মনোনীত নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটির আহ্বায়ক মো. মনিরুজ্জামান এই ফল ঘোষনা করেন। ঘোষিত ফলাফলে সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট মো. আবদুন নূর দুলালকে বিজয়ী ঘোষনা করা হয়। নির্বাচনে সভাপতি ও সম্পাদকসহ ১৪টি পদের সব কটি পদেই সরকার সমর্থক বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সমর্থিত সাদা প্যানেল প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষনা করা হয়।

 

ওই নির্বাচন বাতিল করে নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটি গঠনের মাধ্যমে পুনরায় নির্বাচন করার দাবিতে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা কর্মসূচি ঘোষনা করেছেন। মামলায় গ্রেপ্তার আইনজীবী সালাউদ্দিন রিগ্যানকে একদিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। এ ঘটনায় প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর কাছে নালিশ করেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা।নির্বাচন বাতিল চেয়ে রিট আবেদন করেছেন অপর সভাপতি প্রার্থী ড. ইউনুছ আলী আকন্দ।

 

এ নির্বাচন নিয়ে দুই পক্ষ দুটি নির্বাচন উপ-কমিটি করে। এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল ও সিনিয়রদের বৈঠকের পর উভয়পক্ষের সম্মতিতে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মুনসুরুল চৌধুরীকে প্রধান করে কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু নির্বাচনের আগের দিন মুনসুরুল হক চৌধুরী সংকটের সৃষ্টি হয়। এরপর আওয়ামীপন্থীরা মো. মনিরুজ্জামানকে ও বিএনপিপন্থীরা এ এস এম মোক্তার কবির খানকে আহ্বায়ক করে কমিটি ঘোষনা করেন। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, হাতাহাতি, হামলা, ভাঙচুর ও পুলিশী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। এতে আইনজীবী, সাংবাদিকসহ কমপক্ষে ২৫ জন আহত হন।

 

এমন অবস্থায় রোববার সমিতি ভবনে পৃথক পৃথক সংবাদ সম্মেলন করেছেন উভয়পক্ষের আইনজীবীরা। সরকার সমর্থক আইনজীবীদের সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট মো. আবদুন নূর দুলাল। এসময় সাবেক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ড. বশির আহমেদসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। অ্যাডভোকেট মোমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, আইনজীবীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছেন। কোনো একতরফা নির্বাচন হয়নি।

 

তিনি বলেন, ১৪ মার্চ সন্ধ্যায় আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মনিরুজ্জামান এবং সম্পাদক মো. আবদুন নূর দুলাল সমিতির কনফারেন্স রুমে বসে ব্যালট পেপারে স্বাক্ষর করছিলেন। হঠাৎ বহিরাগত লোকজনসহ সন্ত্রাসী কায়দায় এ.এম মাহবুব উদ্দিন খোকন এবং রুহুল কুদ্দুস কাজল কনফারেন্স রুমে ঢুকে টেবিলের উপরে থাকা ব্যালট পেপার ছিনতাই করে কিছু ব্যালট পেপার ছিঁড়ে ফেলেন এবং কিছু ব্যালট পেপার নিয়ে যান। ব্যালট পেপার তছনছ করেন এবং পায়ে মাড়িয়ে দলিত মথিত করেন এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন এবং রুহুল কুদ্দুস কাজল। ফলে নির্বাচনের পূর্ব রাতেই আইন শৃংখলা পরিস্থিতির মারাত্বক অবনতি ঘটে। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ইতিহাসে এটি নজিরবিহীন এবং ন্যাক্কারজনক। এছাড়া নির্বাচনের দিন ভোট গ্রহণ শুরু করার প্রচেষ্ঠা করা হলে এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন এবং রুহুল কুদ্দুস কাজলের নেতৃত্বে অনেক বহিরাগত সন্ত্রাসী ভোটের প্যান্ডেলে ঢুকে পড়ে এবং ব্যাপক ভাংচুর চালায়। অনেক আইনজীবীকে আহত করে। এই অবস্থায় ভোট গ্রহন শুরু এবং সুষ্ঠু পরিবেশের জন্য আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাহায্য গ্রহণ ব্যতীত কোন বিকল্প ছিলনা। প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দিয়ে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করা হয়।

 

এদিকে পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন বিএনপিপন্থী আইনজীবী প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল। এসময় সমিতির সাবেক সভাপতি সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল উপস্থিত ছিলেন।

 

তারা লিখিত বক্তব্যে বলেন, দেশের অন্য সব নির্বাচনের মতো দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের সমিতির নির্বাচনেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যে রাজনৈতিক চরিত্র তার নগ্ন বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। আইনগতভাবে কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হলেও নির্বাচনের নাটক সাজিয়ে একতরফাভাবে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের অবৈধভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে। অবিলম্বে একটি নির্বাচন সাব-কমিটি গঠন করে পুনরায় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার জোর দাবি জানাচ্ছি। তারা বলেন, সমিতির নির্বাচন ঘিরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কিছু অতি উৎসাহী আইনজীবী ও পুলিশের নারকীয় তাণ্ডব শুধু আইনজীবী সমাজেরই নয়, পুরো জাতির জন্যই কলঙ্কজনক।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য