-->
হাইকোর্টের রায়

ইউএনওর উপজেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনের বিধান অসাংবিধানিক

নিজস্ব প্রতিবেদক
ইউএনওর উপজেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনের বিধান অসাংবিধানিক

উপজেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দায়িত্ব পালনের বিধান সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হিসেবে উল্লেখ করে তা বাতিল বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।

 

বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার এ রায় দিয়েছেন। বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের রিট আবেদনে জারি করা রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে এ রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।

 

রিট আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি ও ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস।

 

রায়ের পর ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম জানান, এই রায়ের ফলে উপজেলা প্রশাসন পরিচালনায় ইউএনও নিরঙ্কুশ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন না। শুধু সাচিবিক সহায়তা দেবেন ইউএনওরা। তিনি বলেন, চিঠিপত্রে এখন আর উপজেলা প্রশাসন ব্যবহার করতে পারবেন না। উপজেলা পরিষদ ব্যবহার করতে হবে।

 

ইউএনও সাচিবিক দায়িত্ব পালন করলেও সে উপজেলা পরিষদের কাছে জবাবদিহির মধ্যে থাকবে। ২০১০ সালে ১৭টি বিভাগ হস্তান্তরিত বিধান অনুসারে ইউএনও কাজ করবে। ইউএনওকে উপজেলা পরিষদের অধীনে কাজ করতে হবে।

 

আইনজীবী জানান, প্রত্যেক উপজেলায় থাকা ১৭টি দপ্তরের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও তাদের কাজ উপজেলা পরিষদের কাছে ন্যস্ত করা হয়েছে। উপজেলা পরিষদ আইন অনুযায়ী উপজেলা পরিষদের অনুমোদন নিয়ে এসব দপ্তরের কার্যাবলী পরিচালনা করার কথা।

 

কিন্তু বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে ভিন্ন ভিন্ন পরিপত্র জারি করে ওই ১৭টি দপ্তরে যেসব কমিটি করা হয়েছে, এর সবগুলোতেই সভাপতি করা হয়েছে ইউএনওকে। আর উপদেষ্টা করা হয়েছে উপজেলা চেয়ারম্যানকে।

 

একইভাবে আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তা হচ্ছেন ইউএনও এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা। ফলে আইন থাকা সত্তেও প্রায় এক যুগ ধরে ইউএনওরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের অনুমোদন ছাড়াই কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

 

আইনের ৩৩(১) ধারার ক্ষমতাবলে এ কাজ করে আসছেন ইউএনওরা। ওই ধারায় বলা হয়েছে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হবেন এবং তিনি পরিষদকে সাচিবিক সহায়তা দেবেন। (২) পরিষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন, আর্থিক শৃঙ্খলা প্রতিপালন এবং বিধির মাধ্যমে নির্ধারিত অন্য কার্যাবলী পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা সম্পাদন করবেন।

 

এ অবস্থায় ২০২০ সালের ৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দুমকি উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশিদ ও অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক উপজেলা চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম খান বীরু, উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট রিনা পারভীন, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম আহম্মেদ ও ভাইস চেয়ারম্যান রাশেদা আক্তার ৩৩(১) ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন দাখিল করেন। এই রিট আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ৬ জানুয়ারি হাইকোর্ট রুল জারি করেন।

 

রুলে উপজেলা পরিষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন ও আর্থিক শৃঙ্খলা আনয়নসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনওদের) সাচিবিক দায়িত্ব পালনের বিধান সংবলিত আইনের ৩৩ ধারা কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।

 

এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন কমিটিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সভাপতি এবং উপজেলা চেয়ারম্যানকে উপদেষ্টা করতে জারি করা পরিপত্র কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়।

 

ওই রুল জারির দিনেই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় উপজেলা পরিষদের অধীনে ন্যস্ত সব দপ্তরের কার্যক্রম পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে পেশ করতে এবং চেয়ারম্যানের অনুমোদনক্রমে করার জন্য ইউএনওদের প্রতি নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে।

 

কিন্তু এসব নির্দেশনা ইউএনওরা না মানায় আদালতের হস্তক্ষেপ চেয়ে একটি সম্পূরক আবেদন দাখিল করেন রিট আবেদনকারী পক্ষ। এ আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ২০২১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর উপজেলা পরিষদ সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম যেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের অনুমতি নিয়ে করা হয়, সেজন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) প্রতি সার্কুলার জারি করতে সরকারের প্রতি নির্দেশ দেন।

 

এ অবস্থায় রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে রায় দিলেন হাইকোর্ট।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version