অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের দায়ে নিম্ন আদালতে ৫ বছরের সাজাপ্রাপ্ত কারা অধিদপ্তরের সাবেক উপ-মহাপরিদর্শক(ডিআইজি) বজলুর রশীদকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত এই জামিন দেওয়া হয়েছে।
বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার বজলুর রশীদের জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন। বজলুর রশীদের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার হুমায়ন কবির পল্লব ও অ্যাডভোকেট মাসুদুল হক।
এর আগে নিম্ন আদালতের সাজার বিরুদ্ধে বজলুর রশীদের করা আপিল আবেদন শুনানি গ্রহণ করে গতবছর ৩ নভেম্বর আদেশ দেন একই হাইকোর্ট বেঞ্চ। একইসঙ্গে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদণ্ডের আদেশ স্থগিত করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বজলুর রশীদের জামিন আবেদন করা হয়।
অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৪ লাখ ৩৫ হাজার ৯০২ টাকার সম্পদ অর্জনের দায়ে বজলুর রশীদকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়ে গতবছর ২৩ অক্টোবর রায় দেয় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫। রায়ে সাজার পাশাপাশি পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়। একইসঙ্গে ৩ কোটি ১৪ লাখ ৩৫ হাজার ৯০২ টাকার সম্পদ রাষ্ট্রীয় অুনুকলে বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দেয়া হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে বজলুর রশীদ আপিল করেন।
অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন(দুদক) মামলা করার পর ২০১৯ সালের ২০ অক্টোবর বজলুর রশীদকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেদিনই তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
তার বিরুদ্ধে করা মামলার অভিযোগে বলা হয়, ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী রোডের ৫৫/১ (পুরাতন) ৫৬/৫৭ (নতুন) নির্মাণাধীন রূপায়ন হাউজিং স্টেটের স্বপ্ন নিলয় প্রকল্পের ২৯৮১ বর্গফুট আয়তনের একটি অ্যাপার্টমেন্ট কেনেন বজলুর রশীদ। অ্যাপার্টমেন্টের মূল্য বাবদ তিন কোটি ৮ লাখ টাকা পরিশোধও করেছেন। তবে এবিষয়ে তার আয়কর নথিতে কোনো তথ্য নেই। এর দাম হিসেবে পরিশোধ করা তিন কোটি ৮ লাখ টাকার কোনো বৈধ উৎস তিনি দুদককে দেখাতে পারেননি। এজাহারের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল অ্যাপার্টমেন্ট কেনার জন্য চুক্তি করেন। এরপর ওই বছরের ৭ জুন পর্যন্ত ৫৪ হাজার টাকা ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের মাধ্যমে চেকে পরিশোধ করেন। আর বাকি তিন কোটি ৭ লাখ ৪৬ হাজার টাকা নগদে পরিশোধ করেন।
তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ২৬ আগস্ট বজলুর রশীদের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ১৪ লাখ ৩৫ হাজার ৯০২ টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক। এর ভিত্তিতে ওইবছরের ২২ অক্টোবর বজলুর রশীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিশেষ জজ আদালত। এরপর সাক্ষ্যগ্রহণ, উভয়পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায় দেয় বিশেষ জজ আদালত।
বজলুর রশীদের বিরুদ্ধে পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়, বিপুল পরিমাণ ঘুষের টাকা স্থানান্তর করতে ডিআইজি প্রিজন্স (হেডকোয়ার্টার্স) বজলুর রশীদ অভিনবপন্থা বেছে নেন। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে শতাধিক ধাপে স্ত্রী রাজ্জাকুন নাহারের কাছে কয়েক কোটি টাকা পাঠান। এজন্য প্রকৃত ঠিকানা গোপন করে স্ত্রীর নামে সিম তোলা হয়। সরাসরি নিজে টাকা না পাঠিয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যক্তির মাধ্যমে ওই টাকা পাঠানো হয়। এই রিপোর্ট দেখার পর তদন্তে নামে দুদক। এই তদন্তকালে তার অ্যাপার্টমেন্টের তথ্য পায় দুদক।
ভোরের আকাশ/আসা
মন্তব্য