সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের মধ্যে আবারো ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ধাক্কাধাক্কি, মিছিল-পাল্টা মিছিলের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে ইফতার আয়োজনকে কেন্দ্র করে ভাঙচুর, হাতাহাতি, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ব্যানার, চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করা হয়। পরে অবশ্য ভাঙচুরের স্থানেই ইফতার হয়। এই ভাংচুরের জন্য বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের দায়ী করেছেন সরকার সমর্থক আইনজীবীরা। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা।
সমিতি ভবনের তিনটি হলরুমে ইফতার ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটি। অপরদিকে নবগঠিত এডহক কমিটিও পাল্টা ইফতারের আয়োজন করে। দুদিন আগেই এই কর্মসূচি ঘোষনা করা হয়। এমন অবস্থায় গতকাল সরকার সমর্থক আইনজীবীরা সব কটি হলেই ইফতারের আয়োজন করে। কিন্তু এডহক কমিটির সদস্যরা ২নং হল রুমে প্রবেশ করে ব্যানার টানাতে গেলে আওয়ামী সমর্থক আইনজীবীরা তা কেড়ে নেন। এ সময় দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে হাতাহাতি ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। একই সময় বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা কালো পতাকা মিছিল নিয়ে হল রুমে প্রবেশ করেন। এ সময় তারা চেয়ার টেবিল ফেলে দেন। এরপর বেলা সাড়ে ৪টা থেকে থেমে থেমে দুই পক্ষের আইনজীবীরা সমিতি ভবনে বিক্ষোভ করেন।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট জগলুল কবির বলেন, বিএনপির সন্ত্রাসীরা কোনো কারণ ছাড়াই ইফতার মাহফিলের জন্য নির্ধারিত দুটি হল রুমে ভাঙচুর করেছে। ইফতারের মতো পবিত্র একটি অনুষ্ঠানে বর্বরভাবে হামলা করা হয়েছে।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম সজল। তিনি বলেন, ভাঙচুরের সঙ্গে আমাদের কেউ জড়িত নন। এটা তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে হয়েছে। আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করেছি।
সমিতির ব্যানারে ইফতার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নাম থাকলেও অনুষ্ঠানে তিনি যাননি। এমনকি আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের কোনো বিচারপতিও অনুষ্ঠানে যাননি। তবে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ইফতার অনুষ্ঠানে ছিলেন। ইফতার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের প্রতিরোধের মুখে পড়েন আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।
দেশের সর্বোচ্চ আদালতে আইন পেশায় নিয়োজিত আইনজীবীদের সংগঠন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির এবারের নির্বাচন ঘিরে গত কয়েকদিন ধরে নানা অঘটন ঘটছে। সমিতির ২০২৩-২৪ মেয়াদের ১৪ সদস্যের কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচনে ১৫ মার্চ বুধ ও ১৬ মার্চ দুদিনব্যাপী ভোটগ্রহণ করা হয়। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ওই দুইদিন ধরে দফায় দফায় হট্টগোল, ধস্তাধস্তি, একাধিক আইনজীবীর চেম্বার ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। ব্যাপক পুলিশী প্রহরায় সরকার সমর্থক আইনজীবীরা ভোট দেন। আর বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা ভোট না দিয়ে কেন্দ্রের বাইরে বিক্ষোভ করেন। এই ভোটগ্রহণকে কেন্দ্র করে ১৫ মার্চ সাংবাদিক ও আইনজীবীরা পুলিশী নির্যাতনের শিকার হন। এতে আইনজীবী, সাংবাদিকসহ কমপক্ষে ২৫ জন আহত হন।
ওই নির্বাচনে সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট মো. আবদুন নূর দুলালকে বিজয়ী ঘোষনা করা হয়। নির্বাচনে সভাপতি ও সম্পাদকসহ ১৪টি পদের সব কটি পদেই সরকার সমর্থক বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সমর্থিত সাদা প্যানেল প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষনা করা হয়। ওই নির্বাচন বাতিল করে নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটি গঠনের মাধ্যমে পুনরায় নির্বাচন করার দাবিতে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা কর্মসূচি পালন করছেন।
এছাড়া সমিতির সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলামের নেতৃত্বে একদল আইনজীবী একটি এডহক কমিটি গঠন করে আগামী ১৪ ও ১৫ জুন নতুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষনা করেছেন। এই কমিটি ঘোষনা দিয়েছে, নতুন নির্বাচন না হওয়া সমিতিতে এডহক কমিটি দায়িত্ব পালন করবে।
ভোরের আাকাশ/আসা
মন্তব্য