এম বদি-উজ-জামান: সাভারের রানা প্লাজা ধসের ১০ বছর পার হয়েছে গতকাল ২৪ এপ্রিল। এ ভবন ধসে ১ হাজার ১৩৭ জনের প্রাণহানিতে গোটা দুনিয়া তোলপাড় হলেও ওই ঘটনায় নিহত এবং আহতদের পরিবার ক্ষতিপূরণ থেকে আজো বঞ্চিত রয়েছে। ওই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার প্রশ্নে হাইকোর্টের জারি করা রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি হয়নি আজো। হাইকোর্টে বিচারাধীন এ রুল নিষ্পত্তিতে কোনো পক্ষেরই উদ্যোগ নেই। শুধুই তাই নয়, ওই ভবন ধসের পর রাজউক ও পুলিশের পক্ষ থেকে পৃথক দুটি মামলা করলেও সেসব মামলার বিচার সম্পন্ন হয়নি ১০ বছরেও। নিম্ন আদালতে মামলা দুটি এখনো বিচারাধীন। এর মধ্যে হত্যা মামলায় গত বছর ৩১ জানুয়ারি সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হলেও এ পর্যন্ত ৫৬৭ সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ৪৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
মামলার বিচারে দীর্ঘসূত্রতার কারণে হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন সোহেল রানা। তবে তার জামিন আপাতত স্থগিত রেখেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি। আর আগামী ৮ মে আপিল বিভাগে তার জামিনের বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। এ বিষয়ে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা (অ্যাটর্নি জেনারেল) এএম আমিন উদ্দিন বলেন, রুলটি বিষয়টি কী অবস্থায় আছে, তা জেনে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
ক্ষতিপূরণ আদায়ের বিষয়ে রিট আবেদনকারী আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. শাহীনুজ্জামান ভোরের আকাশকে বলেন, ঈদের পর নিয়মিত আদালত খুললে ক্ষতিপূরণ আদায়ের রুল শুনানির উদ্যোগ নেয়া হবে। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধসে ১ হাজার ১৩৭ জনের মৃত্যু হয়। আহত হয় অসংখ্য কর্মী। ভবন ধসের পরদিনই হাইকোর্ট স্বতঃপ্রনোদিত হয়ে রুল জারি করেন। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সর্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)সহ ৪টি প্রতিষ্ঠানও রিট আবেদন করে। এ রিট আবেদনে ক্ষতিগ্রস্তদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেয়ার প্রশ্নে রুল জারি করা হয়। এ বিষয়টি আজো নিষ্পত্তি হয়নি।
হাইকোর্ট ওই বছরের ৩০ এপ্রিল এক আদেশে রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা এবং ৫ গার্মেন্ট মালিকের সব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। তাদের ব্যাংক হিসাব থেকে কোনো অর্থ অন্যত্র স্থানান্তর করতে না পারে, সেজন্য সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রতি সার্কুলার জারি করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়। তবে বিজিএমইএর তত্ত্বাবধানে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দেয়ার জন্য অর্থ তোলা যাবে বলে আদেশে বলা হয়। আদালতের শুনানিতে তখনকার অ্যাটর্নি জেনারেল প্রয়াত মাহবুবে আলম ক্ষতিগ্রস্তদের (নিহত) প্রত্যেককে ১ কোটি টাকা দেয়ার প্রস্তাব করেছিলেন।
তিনি বলেছিলেন, এর অর্ধেক দেবে ভবন মালিক আর বাকি অর্ধেক দেবে গার্মেন্টস মালিকরা। পরবর্তী সময়ে ক্ষতিগ্রস্তদের কাকে কী পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে, তা নির্ধারনের জন্য নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি, সরকার ও গার্মেন্টস মালিকদের প্রতিনিধি এবং মেডিসিন, মনোবিদ, অর্থনীতিবিদসহ ১৬ জনের একটি কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির প্রতিবেদন আদালতে দাখিলও করা হয়। কিন্তু রিট আবেদনটির অগ্রগতি নেই। এ অবস্থায় কেটে গেল ১০ বছর। এ সুযোগে ওই ঘটনায় যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে একমাত্র রানা ছাড়া বাকিরা আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।
ভোরের আকাশ/আসা
মন্তব্য