-->
শিরোনাম
জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস আজ

সর্বোচ্চ আদালতেও মিলছে বিনা খরচে আইনি সেবা

এম বদি-উজ-জামান
সর্বোচ্চ আদালতেও মিলছে বিনা খরচে আইনি সেবা

এম বদি-উজ-জামান : নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার এক হতদরিদ্র কিশোরীকে বিজিবির এক সদস্য কর্তৃক ধর্ষণের অভিযোগের মামলায় কিশোরীর পক্ষে আইনি সহায়তা দেয় সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড অফিস। সরকারি খরচে কিশোরীর পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ দেয়া হয় অ্যাডভোকেট বদরুন নাহারকে। শুধু নীলফামারীর ওই কিশোরী নয়, সিরাজগঞ্জের জিল হোসেনের ৪৮ বছরের আইনি লড়াই, গরু-মহিষ নিয়ে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরনিয়ামত গ্রামে জামাই ও শশুরের দ্বন্দ্বের মামলা মেটানো হয় সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির মাধ্যমে।

 

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, গত ৯ বছরে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট থেকে ২৫ হাজার ৯৭৭ বিচারপ্রার্থী বিনা খরচায় আইনগত সেবা পেয়েছেন। এ সময়ে উচ্চ আদালত থেকে ২১১৬টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে, যার সবকটিতেই সরকারি খরচে বিচারপ্রার্থীদের আইনগত সহায়তা দেয়া হয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলা করতে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা প্রয়োজন- এই ধারণা থেকে মুক্তি মিলেছে। শুধুই তাই নয়, একজন বিচারপ্রার্থী একদম বিনা খরচায় মামলা করার সুযোগ পাচ্ছেন। আর্থিকভাবে অসহায়, অসচ্ছল বিচারপ্রার্থীরাই এখন বিনা খরচায় দেশের সর্বোচ্চ আদালতে আইনি সেবা পাচ্ছেন। তবে আর্থিকভাবে অসচ্ছল ব্যক্তিদের বিনামূল্যে আইনি সেবা দিতে ২০০৯ সালে সরকারি আইনি সহায়তা কার্যক্রম শুরুর পর থেকে গত ১৪ বছরে সারা দেশে বিনামূল্যে ৮ লাখ ৭৯ হাজার ৯২৯ জনকে আইনগত সহায়তা দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত বিচারপ্রার্থীদের ১৩৪ কোটি ৯০ লাখ ৬ হাজার ৪৯৮ টাকা আদায় করে দিয়েছে সরকার।

 

দরিদ্র ও অসহায় বিচারপ্রার্থী জনগণকে সরকারি খরচে আইনগত সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে সরকার ২০০০ সালে ‘আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০’ নামে একটি আইন প্রণয়ন করে। এ আইনের আওতায় সরকার ‘জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা’ প্রতিষ্ঠা করে এবং দরিদ্র অসহায় মানুষের আইনের আশ্রয় ও প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে এ সংস্থার অধীনে প্রত্যেক জেলায় জেলা ও দায়রা জজকে চেয়ারম্যান করে একটি করে জেলা কমিটি গঠন করা হয়। এছাড়া উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা লিগ্যাল এইড কমিটি এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে ইউনিয়ন লিগ্যাল এইড কমিটি গঠন করে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালে সুপ্রিম কোর্টেও সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি গঠন করা হয়। যার চেয়ারম্যান হচ্ছেন হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারপতি।

 

বিনা খরচায় ১৪ বছরে আইনি সেবা পেয়েছে পৌনে ৯ লাখ মানুষ : ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘জাতীয় আইনগত প্রদান সহায়তা সংস্থা’ বিনামূল্যে আইনি সেবা পেয়েছেন আট লাখ ৭৯ হাজার ৯২৯ জন। আইন মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, সরকারি আইনি সহায়তা কার্যক্রমে ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড অফিসে আইনি সহায়তাপ্রাপ্ত উপকারভোগীর সংখ্যা ২৫ হাজার ৯৭৭ জন। ৬৪ জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে আইনি সহায়তাপ্রাপ্ত উপকারভোগীর সংখ্যা ৬ লাখ ৭২ হাজার ৮০১ জন। ঢাকা ও চট্টগ্রাম শ্রমিক আইনগত সহায়তা সেলে আইনি সহায়তাপ্রাপ্ত উপকারভোগীর সংখ্যা ২৭ হাজার ৭৩৮ জন এবং টোল ফ্রি হেল্পলাইনের মাধ্যমে আইনি সহায়তাপ্রাপ্ত উপকারভোগীর সংখ্যা ১ লাখ ৫৩ হাজার ৪১৩ জন। সর্বমোট আট লাখ ৭৯ হাজার ৯২৯ জন। এছাড়া ২০১২ থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত এক লাখ ৫ হাজার ৬৫০ জন কারাবন্দি আইনি সহায়তা পেয়েছেন। 

 

সরকারি আইনি সেবাপ্রাপ্তির যোগ্যতা : অসচ্ছল বা আর্থিকভাবে অসচ্ছল ব্যক্তি যার বার্ষিক গড় আয় সুপ্রিম কোর্টে আইনগত সহায়তা দেয়ার ক্ষেত্রে দেড় লাখ এবং অন্যান্য আদালতের ক্ষেত্রে এক লাখ টাকার ঊর্ধ্বে নয়। বীর মুক্তিযোদ্ধার ক্ষেত্রে দেড় লাখ টাকার ঊর্ধ্বে নয় এবং যে কোনো শ্রমিক যার বার্ষিক গড় আয় এক লাখ টাকার ঊর্ধ্বে নয়। যে কোনো শিশু; মানবপাচারের শিকার যে কোনো ব্যক্তি; শারীরিক নির্যাতন, মানসিক নির্যাতন এবং যৌন নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশু; নিরাশ্রয় ব্যক্তি বা ভবঘুরে; যে কোনো উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের লোক। পারিবারিক সহিংসতার শিকার অথবা সহিংসতার ঝুঁকিতে আছেন এ রূপ যেকোনো সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি; বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন এমন ব্যক্তি; ভিজিডি কার্ডধারী দুস্থ মাতা; দুর্বৃত্ত দ্বারা অ্যাসিড দগ্ধ নারী বা শিশু। আদর্শগ্রামে গৃহ বা ভূমি বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তি; অসচ্ছল বিধবা স্বামী পরিত্যক্তা এবং দুস্থ নারী; যেকোনো প্রতিবন্ধী; বিনা বিচারে আটক অসচ্ছল ব্যক্তি; আদালত কর্তৃক আর্থিকভাবে অসহায় বা অসচ্ছল বলে বিবেচিত ব্যক্তি; জেল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বিবেচিত বা সুপারিশকৃত অসহায় বা অসচ্ছল ব্যক্তি ও এ আইনের উদ্দেশ্যে পূরণে সংস্থা কর্তৃক চিহ্নিত ব্যক্তি।

 

লিগ্যাল এইড দিবস আজ : আজ ২৮ এপ্রিল। ‘জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস ২০২৩’। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে- ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণ, বিনামূল্যে আইনি সেবার দ্বার উন্মোচন’। দিবসটি উপলক্ষে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের  আইন ও বিচার বিভাগের উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।

 

সারা দেশে জেলা পর্যায়ে র‌্যালি, আলোচনা সভা, পথ প্রচার, লিগ্যাল এইড মেলা, ক্লায়েন্ট-আইনজীবী যৌথ সভা, সেরা প্যানেল আইনজীবী পুরস্কার, ম্যাগাজিন/স্যুভেনির/দেয়ালিকা প্রকাশ, আলোকচিত্র প্রদর্শন, প্রচার ও প্রকাশনা সামগ্রী বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী এবং আইন ও বিচার বিভাগের সচিবের বাণীসহ আইনগত সহায়তা বিষয়ক প্রতিবেদন সংবলিত বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ ছাড়াও রেডিও-টেলিভিশনে আইনগত সহায়তা প্রদান সংক্রান্ত টকশো/ মুক্ত আলোচনা, সংবাদ ও অনুষ্ঠান সম্প্রচারের আয়োজন করা হয়েছে।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version