-->
শিরোনাম

পালিত হলো জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস

নিজস্ব প্রতিবেদক
পালিত হলো জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস

“বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণ, বিনামূল্যে আইনি সেবার দ্বার উন্মোচন” প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে শুক্রবার বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে পালিত হয়েছে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস।

 

দিবসটি উপলক্ষ্যে দেশব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

 

কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকাল ১০টায় আইন ও বিচার বিভাগের উদ্যোগে রাজধানীর নিবন্ধন অধিদপ্তর প্রাঙ্গণ (১৪, আব্দুল গনি রোড) থেকে বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (১৫, কলেজ রোড) পর্যন্ত একটি র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়।

 

র‌্যালিতে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ারসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং এনজিও প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

 

র‌্যালি শেষে সকাল সাড়ে ১০টায় বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা প্রদান করেন।

 

তিনি বলেন, সমাজের অসচ্ছল ও সুবিধাবঞ্চিত জনগণের সমান আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য সকলকে একত্রে কাজ করতে হবে, যার মাধ্যমে একটি ন্যায়ভিত্তিক ও কল্যাণকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে।

 

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার মামলাজট নিরসনে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির উপর অধিকতর গুরুত্বারোপ করেছে। ফলে একদিকে যেমন দেশের মানুষ স্বল্প সময়ে ও খরচে সহজে আইনি সহায়তা কার্যক্রমের উপকার ভোগ করছে অন্যদিকে বাংলাদেশের আদালতসমূহে মামলা জট হ্রাস পাচ্ছে।

 

সরকারি আইনি সহায়তা কার্যক্রমকে আরও বিস্তৃত ও সহজলভ্য করার লক্ষ্যে ২০১৬ সালে টোল ফ্রি জাতীয় হেল্পলাইন ১৬৪৩০ উদ্বোধন করার পর থেকে উক্ত হেল্পলাইনের মাধ্যমে বিনামূল্যে আইনি পরামর্শ ও তথ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে। জনবান্ধব বর্তমান সরকারের এসব পদক্ষেপের কারণে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় লিগ্যাল এইড অফিসসমূহ সেবাপ্রত্যাশী জনগণের আস্থার ঠিকানায় পরিণত হয়েছে।

 

এদিকে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে সারা দেশের জেলা পর্যায়ে র‌্যালি, আলোচনাসভা, পথ লিগ্যাল এইড মেলা ম্যাগাজিন/ স্যুভেনির/দেয়ালিকা প্রকাশ, প্রচার ও প্রকাশনা সামগ্রী বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়।

 

সংবাদপত্রে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী এবং আইন ও বিচার বিভাগের  সচিব এর বাণী সহ আইনগত সহায়তা বিষয়ক প্রতিবেদন সম্বলিত বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ ছাড়াও রেডিও-টেলিভিশনে আইনগত সহায়তা প্রদান সংক্রান্ত সংবাদ ও অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয়।

 

উল্লেখ্য দরিদ্র ও অসহায় বিচার প্রার্থী জনগণকে সরকারি খরচে আইনগত সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে সরকার ২০০০ সালে ‘আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০’ নামে একটি আইন প্রণয়ন করে। এ আইনের আওতায় সরকার ‘জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা’ প্রতিষ্ঠা করে এবং দরিদ্র অসহায় মানুষের আইনের আশ্রয় ও প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে এ সংস্থার অধীনে প্রত্যেক জেলায় জেলা ও দায়রা জজকে চেয়ারম্যান করে একটি করে জেলা কমিটি গঠন করা হয়।

 

এছাড়া উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা লিগ্যাল এইড কমিটি এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে ইউনিয়ন লিগ্যাল এইড কমিটি গঠন করে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালে সুপ্রিম কোর্টেও সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি গঠন করা হয়। যার চেয়ারম্যান হচ্ছেন হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারপতি।

 

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল ব্যক্তিদের বিনামূল্যে আইনি সেবা দিতে ২০০৯ সালে সরকারি আইনি সহায়তা কার্যক্রম শুরুর পর থেকে গত ১৪ বছরে সারাদেশে বিনামূল্যে ৮ লাখ ৭৯ হাজার ৯২৯ জনকে আইনগত সহায়তা দিয়েছে। একইসঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত বিচারপ্রার্থীদের ১৩৪ কোটি ৯০ লাখ ৬ হাজার ৪৯৮ টাকা আদায় করে দিয়েছে সরকার।

 

এরমধ্যে ২০১৪ সাল থেকে সুপ্রিম কোর্টে লিগ্যাল এইডের কাজ শুরু হয়। এরপর থেকে গত ৯ বছরে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট থেকে ২৫ হাজার ৯৭৭ জন বিচারপ্রার্থী বিনা খরচায় আইনগত সেবা পেয়েছেন। এ সময়ে উচ্চ আদালত থেকে ২১১৬টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে, যার সব কটিতেই সরকারি খরচে বিচারপ্রার্থীদের আইনগত সহায়তা দেয়া হয়েছে।

 

অসচ্ছল বা আর্থিকভাবে অসচ্ছল ব্যক্তি যার বার্ষিক গড় আয় সুপ্রিম কোর্টে আইনগত সহায়তা দেয়ার ক্ষেত্রে দেড় লাখ এবং অন্যান্য আদালতের ক্ষেত্রে এক লাখ টাকার ঊর্ধ্বে নয়। বীর মুক্তিযোদ্ধার ক্ষেত্রে দেড় লাখ টাকার ঊর্ধ্বে নয় এবং যে কোনো শ্রমিক যার বার্ষিক গড় আয় এক লাখ টাকার ঊর্ধ্বে নয়। যে কোনো শিশু; মানবপাচারের শিকার যে কোন ব্যক্তি; শারীরিক নির্যাতন, মানসিক নির্যাতন এবং যৌন নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশু; নিরাশ্রয় ব্যক্তি বা ভবঘুরে; যে কোন উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠীও সম্প্রদায়ের লোক।

 

পারিবারিক সহিংসতার শিকার অথবা সহিংসতার ঝুঁকিতে আছেন এ রূপ যে কোনো সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি; বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন এমন ব্যক্তি; ভিজিডি কার্ডধারী দুস্থ মাতা; দুর্বৃত্ত দ্বারা এসিড দগ্ধ নারী বা শিশু।

 

আদর্শগ্রামে গৃহ বা ভূমি বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তি; অসচ্ছল বিধবা স্বামী পরিত্যক্তা এবং দুস্থ নারী; যে কোন প্রতিবন্ধী; বিনা বিচারে আটক অসচ্ছল ব্যক্তি; আদালত কর্তৃক আর্থিকভাবে অসহায় বা অসচ্ছল বলে বিবেচিত ব্যক্তি; জেল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বিবেচিত বা সুপারিশকৃত অসহায় বা অসচ্ছল ব্যক্তি ও এ আইনের উদ্দেশ্যে পূরণে সংস্থা কর্তৃক চিহ্নিত ব্যক্তি।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version