-->
শিরোনাম
চার মাসেও হাইকোর্টে জবাব দাখিল করেনি রাজউক

রাজউকের ৩০ হাজার নথি গায়েব, অনুসন্ধানে মাঠে দুদক

এম বদি-উজ-জামান
রাজউকের ৩০ হাজার নথি গায়েব, অনুসন্ধানে মাঠে দুদক

এম বদি-উজ-জামান: রাজউকের সার্ভার থেকে প্রায় ৩০ হাজার গ্রাহকের নথি গায়েব হয়ে যাওয়ার ঘটনা অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। নথি গায়েবের ঘটনা অনুসন্ধানে ইতোমধ্যে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে দুদক। পরিচালক (সিস্টেম অ্যানালিস্ট) মো. রাজিব হাসানকে প্রধান করে গঠিত কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন উপপরিচালক সুভাষ চন্দ্র দত্ত ও সহকারী পরিচালক মো. আশিকুর রহমান।

 

এদিকে নথি গায়েব হওয়ার খবরের সত্যতা ৩০ দিনের মধ্যে জানাতে চার মাস আগে হাইকোর্ট নির্দেশ দিলেও এখন পর্যন্ত আদালতকে কোনো তথ্য জানায়নি রাজউক। তবে অভিযোগ অনুসন্ধান করতে দুদককে দেয়া নির্দেশ কার্যকর করেছে রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি।

 

এ বিষয়ে দুদকের প্রধান আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান ভোরের আকাশকে বলেন, রাজউকের নথি গায়েব হওয়ার অভিযোগ অনুসন্ধান করতে দুদককে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এ নির্দেশের পর দুদক একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করে। এ টিম অনুসন্ধান শুরু করেছে। তারা অভিযোগ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছে। বিষয়টি নিয়ে দুদকের কার্যক্রম শিগগিরই আদালতকে জানানো হবে।

 

সংশ্লিষ্ট হাইকোর্ট বেঞ্চে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক ভোরের আকাশকে বলেন, রাজউক এখন পর্যন্ত কোনো ব্যাখ্যা দাখিল করেনি।

 

২০১৯ সালের মে মাস থেকে আধুনিক পদ্ধতিতেই গ্রাহককে সেবা দিয়ে আসছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। সংস্থাটির ওয়েবসাইটে সব গ্রাহকের ভবনের তথ্য সংরক্ষণ করা হয়। গত বছর শেষ দিকে রাজউকের সার্ভার থেকে ভবন নির্মাণের অনুমোদনসংক্রান্ত প্রায় ৩০ হাজার গ্রাহকের নথিপত্র গায়েব হয়ে গেছে।

 

জানা যায়, গত বছর ৬ ডিসেম্বর হঠাৎ করে রাজউকের ওয়েবসাইট অকার্যকর হয়ে যায়। এরপর দেখা যায়, ২০১৯ সালের মে থেকে ২০২২ সালের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত যারা ভবন নির্মাণের অনুমোদন পেতে আবেদন করেছিলেন, তাদের নথিপত্র গায়েব হয়ে গেছে। হারিয়ে যাওয়া সব নথি পুনরুদ্ধারে চেষ্টা করছে রাজউক। এ ঘটনায় থানায় জিডিও (সাধারণ ডায়েরি) করে রাজউক।

 

পরে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন অনুবিভাগ-১) প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করে বিষয়টি তদন্ত করতে রাজউককে নির্দেশ দেন। গুরুত্বপূর্ণ এসব নথি পাওয়া না গেলে গ্রাহকরা নানারকম ভোগান্তির শিকার হতে পারেন এমন আশঙ্কা থেকে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেয়।

 

এ নিয়ে সংবাদপত্রে প্রতিবেদন প্রকাশের পর তা গত ২ জানুয়ারি হাইকোর্টের নজরে আনেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওইদিন এক আদেশে বিষয়টি অনুসন্ধান করতে দুদককে নির্দেশ দেন।

 

একইসঙ্গে এবিষয়ে রাজউকের কাছে ব্যাখ্যা তলব করেন। ৩০ দিনের মধ্যে নথি গায়েব হওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে রাজউককে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে অভিযোগ অনুসন্ধান করতে দুদকের প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়। এ নির্দেশের পর দুদক কমিটি গঠন ও অনুসন্ধান শুরু করে। অনুসন্ধানের অগ্রগতি হাইকোর্টকে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী।

 

রাজউক আওতাধীন এলাকায় কোনো ভবন বা স্থাপনা নির্মাণ করতে হলে সংস্থাটি থেকে ছাড়পত্র নিতে হয়। এজন্য ভ‚মি ব্যবহার করতে ও ভবন বা স্থাপনার নকশার অনুমোদন নিতে হয়। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অংশ হিসেবে রাজউকের এসব কার্যক্রম অনলাইনে সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেয়। প্রথমে অনলাইনে নিবন্ধন করে আবেদনপত্র, ভবনের নকশাসহ আনুষঙ্গিক কাগজপত্র রাজউকের ওয়েবসাইটে আপলোড করতে হয় গ্রাহককে।

 

পরে যাচাই-বাছাইসহ প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শেষে ভূমি ব্যবহারের ছাড়পত্র ও ভবনের নকশা এ ওয়েবসাইটেই আপলোড করে রাজউক। এগুলো ডাউনলোড করে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করতে পারেন গ্রাহক।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version