-->
শিরোনাম
অধ্যাপক তাহের হত্যা

ফাঁসির আসামি জাহাঙ্গীরের আবেদন খারিজ

নিজস্ব প্রতিবেদক
ফাঁসির আসামি জাহাঙ্গীরের আবেদন খারিজ

ফাঁসির রায় কার্যকরের আগের সব ধাপ শেষ হওয়ার পর জাহাঙ্গীরের ভাই সোহরাব হোসেন এই রিট মামলা করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত মো. জাহাঙ্গীর আলমের রিট আবেদন খারিজ করে দিয়েছে হাই কোর্ট। বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তী ও বিচারপতি মো. আলী রেজার বেঞ্চ সোমবার এ আদেশ দেয়।

 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক এস তাহের হত্যায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত দুই আসামির একজন হলেন মো. জাহাঙ্গীর আলম, যিনি তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার ছিলেন। অপর আসামি মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন তাহেরের সহকর্মী এবং একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে তাদের ফাঁসি কার্যকরের আগের সব ধাপ শেষ হওয়ার পর জাহাঙ্গীরের ভাই সোহরাব হোসেন গত ১১ জুলাই ওই রিট আবেদন করেন।

 

সেখানে বলা হয়, রাজশাহীর মতিহার থানায় মো. জাহাঙ্গীর আলমকে ২০০৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আটক রাখা হয়েছিল; যা সংবিধান ও ফৌজদারি কার্যবিধির লংঘন। এই রিট মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জাহাঙ্গীরের সাজার ওপর স্থগিতাদেশ চাওয়া হয়েছিল আবেদনে।

 

আদালতে রিটকারী পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এস এন গোস্বামী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী। ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পশ্চিমপাড়া আবাসিক কোয়ার্টার থেকে অধ্যাপক তাহের নিখোঁজ হন। ওই বাসায় তিনি একাই থাকতেন। কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর আলম তার দেখাশোনা করতেন। পরদিন বাসার পেছনের ম্যানহোল থেকে অধ্যাপক তাহেরের গলিত মরদেহউদ্ধার করা হয়। ৩ ফেব্রুয়ারি তার ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন।

 

অধ্যাপক তাহেরের করা একটি জিডির সূত্র ধরে বিভাগের শিক্ষক মহিউদ্দিন ও রাবির ইসলামী ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী, কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীরসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর ৫ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তারদের মধ্যে তিনজন আদালতে জবানবন্দি দেন। মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন (বামে) ও নিহত অধ্যাপক তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর আলম। ।

 

জবানবন্দিতে তারা বলেন, অধ্যাপক ড. এস তাহের বিভাগের একাডেমিক কমিটির প্রধান ছিলেন। একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মহিউদ্দিন অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য কমিটির সুপারিশ চেয়ে আসছিলেন। কিন্তু গবেষণা জালিয়াতির কারণে অধ্যাপক তাহের তা দিতে অস্বীকার করেন।

 

এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মহিউদ্দিন হত্যার পরিকল্পনা করেন। বালিশ চাপা দিয়ে খুনের পর বাড়ির ভেতরে থাকা চটের বস্তায় ভরে অধ্যাপক তাহেরের লাশ বাসার পেছনে নেওয়া হয়। লাশ গুমের জন্য জাহাঙ্গীররের ভাই নাজমুল আলম ও নাজমুলের স্ত্রীর ভাই আবদুস সালামকে ডেকে আনা হয়। তাদের সহায়তায় বাসার পেছনের ম্যানহোলের ঢাকনা খুলে তাহেরের লাশ ফেলে দেওয়া হয়।

 

২০০৭ সালের ১৭ মার্চ শিবির নেতা মাহবুব আলম সালেহীসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালত চারজনকে ফাঁসি ও দুজনকে খালাস দেয়। দন্ডিত অন্যরা হলেন জাহাঙ্গীরের ভাই নাজমুল ও তার স্ত্রীর ভাই সালাম। তবে ছাত্রশিবিরের নেতা সালেহী ও আজিমুদ্দিন মুন্সি বিচারে খালাস পান।

 

পরে দন্ডিতরা হাই কোর্টে আপিল করেন। হাই কোর্ট মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীরের রায় বহাল রাখলেও নাজমুল ও সালামের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়।পরে তাদের দন্ড বৃদ্ধি চেয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। শুনানি শেষে ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল আপিল বিভাগ হাই কোর্ট বিভাগের রায়ই বহাল রাখে।

 

এরপর আসামিদের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদনও খারিজ করে সুপ্রিম কোর্ট। এরপর বাকি থাকে কেবল রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন। কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রায় ছয় মাস আগে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছিলেন আসামিরা। সে আবেদনও নাকচ করেন রাষ্ট্রপতি। গত ৫ জুলাই সেই চিঠি রাজশাহী কারাগারে পৌঁয়। ফলে কারা কর্তৃপক্ষ এখন যে কোনো সময় দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর করতে পারে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version