বহুল আলোচিত নাইকো দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চেয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার করা আবেদন সরাসরি খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। ফলে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর বিচারিক (নিম্ন) আদালতে মামলা চলতে আর কোনো বাধা নেই।
বুধবার (৩০ আগস্ট) হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। অভিযোগ গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিভিশনের বিষয়ে শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেন আদালত।
এর আগে মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চেয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার করা আবেদন বিষয়ে কয়েক দফা শুনানি হয়। এরপর আদেশের জন্য গত সোমবার আজকের দিন ধার্য করেন হাইকোর্টের একই বেঞ্চ। তারই ধারাবাহিকতায় ধার্য এদিনে আদেশ দেন হাইকোর্ট। এদিন দুপুর ২টা ৩৫ মিনিটে আদেশ পড়া শুরু করে বিকেল ৩টায় শেষ করেন বিচারক।
আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী এবং বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এএম) আমিন উদ্দিন, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মেহেদী হাছান চৌধুরী ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।
গত ৯ আগস্ট থেকে এই আবেদনের ওপর শুনানি শুরু হয়। পরে ১৬ আগস্ট খালেদা জিয়ার আবেদনের পরবর্তী শুনানির জন্য ২২ আগস্ট দিন ধার্য করেন আদালত। তার পরের দিন ২৩ আগস্ট শুনানি করেছিলেন হাইকোর্ট। এরই ধারাবাহিকতায় ২৮ আগস্ট ফের শুনানি শেষে আদেশের দিন ঠিক করেন আদালত।
গত ১৯ মার্চ কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে অবস্থিত ঢাকার নবম (অস্থায়ী) বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ হাফিজুর রহমানের আদালত এ মামলায় খালেদা জিয়াসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরুর আদেশ দেন। এরপর গত ১৭ মে নাইকো দুর্নীতি মামলার কার্যক্রম বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন করেন খালেদা জিয়া।
এর আগে অভিযোগ গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত ১৭ মে রিভিশন আবেদনে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের করা দবিতে বলা হয়, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে এ মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে দাবি করে অভিযোগ গঠনের আদেশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, এ মর্মে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে আবেদনে। একই সঙ্গে গত ১৯ মার্চের অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চাওয়া হয়েছে।
গত ১৯ মার্চ নাইকো দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯ এর বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান।
মামলার বিবরণী থেকে জানা যায়, কানাডিয়ান প্রতিষ্ঠান নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর দুদকের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম তেজগাঁও থানায় খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
তদন্তের পর ২০১৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এতে আসামিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতিসাধনের অভিযোগ আনে দুদক।
একই মামলায় অন্য আসামিদের মধ্যে আছেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি সেলিম ভূঁইয়া এবং নাইকোর দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।
আসামিদের মধ্যে গিয়াসউদ্দিন আল মামুন বর্তমানে কারাগারে আছেন। নাইকো রিসোর্সেস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের সাবেক প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ পলাতক রয়েছেন। বাকিরা জামিনে আছেন। মামলাটি এখন সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।
এ মামলার আসামিদের মধ্যে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন ও বাপেক্সের সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান মারা যাওয়ায় তাদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
দুদকের করা অন্য দুই মামলায় (জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট) ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে সাজাভোগ করছেন খালেদা জিয়া। তবে বর্তমানে তিনি সরকারের নির্বাহী আদেশে অন্তর্বর্তীকালীন জামিনে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য